মদন তামাঙ্গ হত্যা-মামলা

গুরুঙ্গদের নামে চার্জশিটে ষড়যন্ত্রই দেখছে মোর্চা

মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলায় সিবিআইয়ের চার্জশিটে দলের সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ, তাঁর স্ত্রী-সহ ২৩ জন নেতা-কর্মীর নাম সংযোজিত হওয়ার আড়ালে ‘গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে’ বলে অভিযোগ করল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। শনিবার প্রায় দিনভর দার্জিলিঙে বৈঠকের পরে মোর্চার তরফে এক বিবৃতিতে এই দাবি করেছেন দলের সহকারি সাধারণ সম্পাদক জ্যোতিকুমার রাই। তবে কোনও রাজনৈতিক দল এই ষড়যন্ত্রের পিছনে রয়েছে কি না, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য মোর্চা করেনি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৫ ০৩:১৬
Share:

বিমল গুরুঙ্গ

মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলায় সিবিআইয়ের চার্জশিটে দলের সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ, তাঁর স্ত্রী-সহ ২৩ জন নেতা-কর্মীর নাম সংযোজিত হওয়ার আড়ালে ‘গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে’ বলে অভিযোগ করল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। শনিবার প্রায় দিনভর দার্জিলিঙে বৈঠকের পরে মোর্চার তরফে এক বিবৃতিতে এই দাবি করেছেন দলের সহকারি সাধারণ সম্পাদক জ্যোতিকুমার রাই। তবে কোনও রাজনৈতিক দল এই ষড়যন্ত্রের পিছনে রয়েছে কি না, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য মোর্চা করেনি।

Advertisement

মোর্চার অন্দরে অবশ্য কথা উঠেছে, এত দিন মদন-হত্যা মামলার তদন্ত ঢিমেতালে হলেও সিবিআই-এর এই হঠাৎ তৎপরতা কেন? দলের অন্দরে মোর্চার কিছু নেতা এই প্রসঙ্গে তৃণমূল ও বিজেপি, দুই দলের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। সম্প্রতি কলকাতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক হয়েছে। মোর্চার একটি অংশের দাবি, তারপরেই সিবিআইয়ের এই আচমকা তৎপরতা দেখা গেল। যে কারণে আদালতের গ্রীষ্মাবকাশের সময়েই তারা মোর্চা নেতাদের নাম সংযোজন করে চার্জশিট দাখিল করল। জ্যোতিকুমারের বক্তব্য, ‘‘চার্জশিট পেশের আড়ালে গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে। অনেক সন্দেহ দানা বাঁধছে। অনেক কিছু নিয়েই রহস্য রয়েছে।’’ তবে বিচার বিভাগের উপরে তাঁদের আস্থা রয়েছে। তাঁরা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, ‘‘দলের নেতারা যে নির্দোষ, তা প্রমাণিত হবে। সত্য উদ্ঘাটিত হবে।’’ ষড়যন্ত্রের পিছনে কোন কোন দল রয়েছে বলে তাঁরা মনে করেন? জ্যোতিকুমার বলেন, ‘‘আপাতত ষড়যন্ত্রটা গভীর সেটা বললাম। প্রয়োজন হলে সব খোলসা করা হবে।’’

সিবিআই সূত্র অবশ্য জানিয়েছে, মদন-হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন ধরেই তদন্ত চলছিল। প্রাথমিক চার্জশিট পেশ হয়ে যাওয়ার পরেও ঘটনার পিছনে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে আর কারা ছিল, তা খুঁজে বের করার জন্য তদন্ত শুরু হয়। সে ব্যাপারে একাধিক তথ্য প্রমাণ জোগাড় করতেই সময় লেগেছে। সেই তথ্য প্রমাণ জোগাড় হয়ে যাওয়ার পরে চূড়ান্ত অতিরিক্ত চার্জশিট জমা না দেওয়ার কোনও কারণ ছিল না। সিবিআইয়ের হাতে আরও অনেক মামলাও রয়েছে। প্রত্যেক মামলার জন্য আলাদা আলাদা দল কাজ করলেও তদন্ত দেখভাল করার জন্য শীর্ষকর্তাদের ব্যস্ত থাকতে হয়। সিবিআইয়ের যে শাখা (স্পেশ্যাল ক্রাইম ব্রাঞ্চ) এই ঘটনার তদন্ত করছিল, সেই শাখারই একটি বিশেষ দলের হাতে সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তভারও রয়েছে। তাই গোয়েন্দা সংস্থার কর্তাদের অনেকে সে দিকেও মাথা ঘামাচ্ছেন। তাই মদন হত্যা মামলার চার্জশিটের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে তা দ্রুত জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কর্তারা। যে কারণে, আদালতে গ্রীষ্মাবকাশ চললেও তারই মাঝে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

এই মামলায় সিবিআই বেশ সতর্ক ভাবেই এগোচ্ছে। সিবিআই সূত্রের ব্যাখ্যা, হেভিওয়েট অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে তারপর চার্জশিট দেওয়ার প্রথা মেনে চলতে গেলে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যে কারণে, গুরুঙ্গদের গ্রেফতার না করে চার্জশিটে অভিযুক্ত হিসেবে দেখানো হয়েছে। এ বার অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে, না তাঁদের জামিনে মুক্ত রেখেই বিচার প্রক্রিয়া চালানো হবে, সেটা আদালতের উপরেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অতীতেও বহু মামলায় এমন উদাহরণ রয়েছে। সিবিআইয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ‘‘আমরা কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে চলি না। নিয়ম মেনেই সব কাজ করা হয়েছে।’’

চার্জশিটের আড়ালে রাজনীতি থাকার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল ও বিজেপিও। বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ এ দিন শিলিগুড়িতে জানান, সিবিআইয়ের কাজে হস্তক্ষেপ করার অভিপ্রায় তাঁদের নেই। কারও বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ হওয়া মানেই সে দোষী সাব্যস্তও হয় না। তিনি বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধেও তিনটি চার্জশিট রয়েছে। তাতে কিছু প্রমাণ হয় না। আমরা রাজনৈতিক ভাবে মোর্চার পাশেই রয়েছি।’’ মন্ত্রী গৌতম দেব ওই অভিযোগের জবাবে বলেন, ‘‘এ সব নিয়ে মন্তব্য করার অর্থই হয় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন