ক্লাসঘর না গড়ে রং কেন, বিতর্ক

প্রায় পাঁচশো কোটি টাকা খরচ করে স্কুলগুলিতে নীল-সাদা রং করার প্রকল্প নিয়েছে রাজ্য সরকার। অথচ সর্বশিক্ষা মিশনের সাম্প্রতিক রিপোর্টে (২০১৬-১৭) দেখা যাচ্ছে, বহু স্কুলেই পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ নেই।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৮ ০৪:৫৭
Share:

প্রায় পাঁচশো কোটি টাকা খরচ করে স্কুলগুলিতে নীল-সাদা রং করার প্রকল্প নিয়েছে রাজ্য সরকার। অথচ সর্বশিক্ষা মিশনের সাম্প্রতিক রিপোর্টে (২০১৬-১৭) দেখা যাচ্ছে, বহু স্কুলেই পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ নেই। যেখানে একটি শ্রেণিতে ৩৫ জন থাকার কথা, সেখানে কোথাও ১০১ জন বসছে, কোথাও ১০৯ জন!

Advertisement

শিক্ষা জগতের অনেকেই বলছেন, পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ না বাড়িয়ে কয়েকশো কোটি টাকা রং করার যৌক্তিকতা কোথায়? বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির তরফে স্বপন মণ্ডল যেমন বলেন, ‘‘বুনিয়াদি ও মৌলিক পরিকাঠামোর উন্নয়ন না করে বাহ্যিক উন্নতি করে লাভ নেই। রং করার থেকেও বেশি প্রয়োজন শ্রেণিকক্ষের। সরকারের সেই দিকটাই দেখা উচিত।’’

স্কুলশিক্ষা দফতরের অবশ্য দাবি, খাতায়-কলমে একটি ক্লাসে ১০০ জন পড়ুয়া থাকলেও আদতে সেটা ঠিক তথ্য নয়। পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘বাম জমানার থেকে অবস্থা অনেক বদলেছে। ক্লাসঘরের জন্য চাহিদা মতো অর্থও দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাও যে প্রয়োজন, সেটাও মনে রাখতে হবে।’’

Advertisement

সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রের খবর, নিয়ম অনুযায়ী প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষ পিছু ৪০ এবং পঞ্চম থেকে দশম পর্যন্ত ৩৫ জন করে থাকার কথা। অথচ দেখা গিয়েছে, প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া ও শ্রেণিকক্ষের অনুপাত যথেষ্ট কম। কিন্তু নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে এক-একটি শ্রেণিকক্ষে অনুপাতের থেকে অনেক বেশি পড়ুয়া রয়েছে। ওই রিপোর্টে প্রকাশ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, মালদহের মতো প্রায় সমস্ত জেলায় (ব্যতিক্রম কলকাতা) গড়ে একটি ক্লাসে গড়ে ৭০ থেকে ১০০ জন করে পড়ুয়া থাকে। এটা
কোনও ভাবেই বিজ্ঞানসম্মত নয় বলেই দাবি শিক্ষকদের।

স্কুলশিক্ষা দফতরের অবশ্য ব্যাখ্যা, সর্বশিক্ষার রিপোর্ট খাতায়-কলমে সত্যি হলেও বাস্তবের সঙ্গে কিছুটা ফারাক রয়েছে। কারণ ২০০০ সাল থেকে সর্বশিক্ষা খাতে রাজ্যের বহু স্কুলে নতুন ক্লাসঘর হয়েছে। কিছু জেলায় সেই সমস্ত ক্লাসেই নবম-দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের ক্লাস করানো হয়। ফলে একটি ক্লাসে ১০০ জন থাকে না। যদিও সর্বশিক্ষা মিশনের ঘরে নবম-দশম শ্রেণির পঠনপাঠন আইনি ভাবে বৈধ কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে শিক্ষা দফতরের অন্দরেই। শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, নবম-দশম শ্রেণির শ্রেণিকক্ষ গড়ে রাজ্য সরকার ও রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযানের আওতায়। সেটা শুরু হয়েছে ২০১৪ সাল থেকে। সুতরাং নবম শ্রেণি থেকে যে ক্লাসঘরের অভাব রয়েছে, তা প্রকারান্তরে মেনে নিলেন শিক্ষা দফতরের একাধিক সূত্রও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement