কোনটা নতুন প্রকল্প, প্রশ্ন বিরোধীদের

ঠিক যেমনটা হয়েছিল তিন বছর আগে! সিপিএম, কংগ্রেসের মতো বিরোধী দলের নেতারা কটাক্ষের সুরে বলছেন, বুধবার বহরমপুরে পুরনো প্রকল্পগুচ্ছই ফের তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তফাৎ শুধু দুই জায়গায়। তিন বছর আগের ঘোষণাস্থল ছিল শহরের ব্যারাক স্কোয়ার ময়দানের মঞ্চ।

Advertisement

অনল আবেদিন

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৫ ০১:১১
Share:

বহরমপুর সার্কিট হাউস থেকে রবীন্দ্রসদনে প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার পথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।

ঠিক যেমনটা হয়েছিল তিন বছর আগে!

Advertisement

সিপিএম, কংগ্রেসের মতো বিরোধী দলের নেতারা কটাক্ষের সুরে বলছেন, বুধবার বহরমপুরে পুরনো প্রকল্পগুচ্ছই ফের তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তফাৎ শুধু দুই জায়গায়। তিন বছর আগের ঘোষণাস্থল ছিল শহরের ব্যারাক স্কোয়ার ময়দানের মঞ্চ। আর এ দিনের মঞ্চটি হল তার থেকে প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার দূরে ওয়াইএমএ মাঠের মঞ্চ। সে বার মঞ্চ থেকে কান্দি মাস্টার প্ল্যানের শিলান্যাস কিংবা নব সাজে সজ্জিত লালবাগের মতিঝিল পার্কের উদ্বোধন করেননি। এইটুকু বাদ দিলে ঠিক যেমনটা হয়েছিল তিন বছর আগে।

২০১২ সালে বহরমপুরে এসে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, জঙ্গিপুর-সাগরদিঘি ও ডোমকল মিলে ৩টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়বেন। এ দিনও তাঁর পুনরাবৃত্তি করেন। ৬০০ কোটি টাকার পানীয় জলের প্রকল্পের কাজ চলছে মুর্শিদাবাদে। এ কথা সে দিনও জানিয়েছিলেন তিনি। এ দিনও তার পুরনাবৃত্তি করেন। আইটিআই, মেডিক্যাল কলেজ, মাদ্রাসা, গালর্স হস্টেল, কিষাণ বাজারের ঘোষণাও করেছিলেন। এ বারও করলেন। নতুন বলতে লালবাগের মতিঝিল পার্ক উদ্বোধন। ওয়াইএমএ মাঠের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সাড়ে ১৩ কোটি টাকায় মতিঝিল পার্ক করে দিলাম। আজ উদ্বোধন করা হল। কলকাতায় যেমন আছে, তেমনি এখানেও প্রকৃতি তীর্থ হল।’’

Advertisement

কিন্তু, সেই ঝিল নিয়ে নাটক কম হল না গত দু’দিনে! জেলা প্রশাসন আর জেলার তৃণমূল নেতাদের বাসনা ছিল যে ভাবেই হোক মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁরা সেখানে নিয়ে যাবেনই। তাঁর রাত কাটানোর জন্য নিরাপত্তা-সহ মঙ্গলবার এলাহি আয়োজন প্রস্তুত ছিল সেই ঝিলে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে কেউ কোনও মতেই রজি করাতে পারেননি। তাঁর কনভয় লালবাগমুখো হয়নি। তারপরও দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের চেষ্টার ত্রুটি ছিল না। মতিঝিল নিয়ে একটি ভিডিও তৈরি করেছে জেলা প্রশাসন। বহরমপুর রবীন্দ্রসদনের রুদ্ধদ্বার প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে ওই ভিডিও দেখাতে চাইলে প্রথমে রাজি হননি মুখ্যমন্ত্রী। অনেক সাধাসাধির পরে তিনি নিমরাজি হলেন বটে, কিন্তু প্রযুক্তিগত ত্রুটির জন্য ভিডিও আর চলল না!

মঞ্চ থেকে ৪৩৯ কোটি টাকার কান্দি মাস্টার প্ল্যানের শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী। স্থানীয় সাংসদ অধীর চৌধুরীর দাবি, ‘‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকাকালীন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে কান্দি মাস্টার প্ল্যানের জন্য কেন্দ্রীয় বাজেটে অর্থ বরাদ্দ হয়। সেই টাকা ৪ বছর ধরে আটকে রেখে আজ শিলান্যাস করে নতুন আরও একটি নাটক করলেন মুখ্যমন্ত্রী।’’

তাঁর কটাক্ষ, ওই প্রকল্পের ব্যাপারে এক বারের জন্যও প্রণববাবুর নাম মুখে আনেননি মুখ্যমন্ত্রী? এ কেমন সততা? সিপিএম নেতৃত্বের আবার দাবি, ৬০০ কোটি টাকার পানীয় জলের ওই প্রকল্পের শিলান্যাস ২০০৮ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রথম শিলান্যাস করেছিলেন বহরমপুর শহরের এফইউসি মাঠের মঞ্চ থেকে। এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘তা বোধ হয় মুখ্যমন্ত্রী ভুলে গিয়েছেন।’’

এ দিন গানের ধুয়োর মতো মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে মুখে ঘুরে ফিরে এসেছে সংখ্যালঘু-রোজা-রমজান-আল্লাতলার কথা। এ জেলার শতকরা ৭০ ভাগ বাসিন্দা মুসলিম। ওয়াইএমএ মাঠের সরকারি সভার শুরুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রমজান মাস! রমজানের মুবারক জানাই। আল্লাতালা আপনাদের রোজা কবুল করুন, আমি চাই।’’ সভার শেষেও সেই এক কথা। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যে ৮২ লক্ষ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীকে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। ইমাম মোয়াজ্জেনদের ভাতা দিয়েছি।’’ আবেগ মথিত কণ্ঠে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সংখ্যালঘু ভাই বোনেরা জেনে রাখুন, আমাদের সরকার সংখ্যালঘুদের জন্য শতকরা ১৭ ভাগ সংরক্ষণ করেছে। যা আর কোথাও নেই। গত বছর থেকে তা চালু হয়েছে। ওই সংরক্ষণের শতকরা ৯৫ ভাগ মুসলিমদের জন্য।’’

প্রশাসনিক বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ জেলায় উন্নয়নের কাজ ভাল হচ্ছে। বাড়ির বদলে হাসপাতালে প্রসবের কাজ খুবই ভাল হচ্ছে। ২০১১ সালে এ জেলায় শতকরা ৫০ ভাগ প্রসব হত হাসপাতালে। সেখানে এখন সেই হার বেড়ে হয়েছে শতকরা ৮৭ ভাগ। রাজ্যের গড়ের থেকে বেশি। রাজ্যের গড় ৮৫ ভাগ।’’ মঙ্গলবার কল্যাণীর কর্মসূচি সেরে মুখ্যমন্ত্রী ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বহরমপুরে পৌঁছন। জাতীয় সড়কের বেহাল দশার কথা জানিয়ে তিনি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন।

এরপর রবীন্দ্রসদন থেকে প্রায় আড়াইশো মিটার দূরে ওয়াইএমএ মাঠের মঞ্চে তিনি হেঁটেই পৌঁছন। সেখানে তিনি শ’খানেক প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করেন। এ দিন সকালে বহরমপুর সার্কিট হাউসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন জেলা তৃণমূল সভাপতি মান্নান হোসেন ও তাঁর ছেলে সৌমিক। প্রশাসনের একটি সূত্রে খবর, সেই আলাপচারিতায় রাজ্য যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সৌমিককে দলনেত্রী বলেন, ‘‘সংখ্যালঘুদের এই জেলার জন্য ঢেলে দিলাম। এরপরও যদি তোরা কিছু না পারিস তবে আমাকে আর কিছু বলবি না!’’

কিছু করতে না পারা, মানে বলা বাহুল্য, ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর জেলায় ঘাসফুল ফোটাতে না পারার কথা তিনি বলতে চেয়েছেন।

বহরমপুর সার্কিট হাউস থেকে রবীন্দ্রসদনে প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার পথে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন