(উপরে) ফ্লেক্সের প্রথম নকশা, (নীচে) পরিবর্তিত নকশা। ছবি: সংগৃহীত।
বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাভাষীরা ‘আক্রান্ত’ হওয়ার প্রতিবাদে বুধবার কলকাতায় মিছিল করবেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পা মেলাবেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মিছিল শেষে ডোরিনা ক্রসিংয়ে সভা হবে। কিন্তু সেই কর্মসূচির আগের দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সভামঞ্চের পটভূমির ফ্লেক্সের নকশা নিয়ে মতানৈক্য চলল শাসকদলের অন্দরে। দুপুরের পর অবশ্য তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ফ্লেক্সের নকশার বিষয়ে দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব ‘ঐকমত্যে’ পৌঁছেছেন। নকশার বদলও ঘটেছে।
আনন্দবাজার ডট কমের হাতে দু’টি ফ্লেক্সেরই নকশা রয়েছে। একটি আগের। একটি বদলানোর পরের। তৃণমূল সূত্রের খবর, দলের একটি অংশ থেকে উত্তর কলকাতার তৃণমূল নেতৃত্বকে ফ্লেক্সের নকশা পাঠিয়ে সেটি ছাপানোর কথা বলা হয়। কিন্তু সেই নকশা দেখে অনেকে বিস্মিত হন। দেখা যায়, দলের সর্বময় নেত্রী মমতার ঘোষিত কর্মসূচির ফ্লেক্সে তাঁরই ছবি নেই! সেই নকশার উপরে বাঁ’দিকে রয়েছে দলের প্রতীক জোড়াফুল। পাশে স্লোগান হিসাবে লেখা, ‘বাংলা ভাষার সম্মান, বাংলার সম্মান’। তার নীচে লেখা, ‘ভিন্রাজ্যে বাংলাভাষীদের ওপর বিজেপির অমানবিক অত্যাচার ও বাংলা-বিদ্বেষ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা’। তার নীচে লেখা তারিখ ১৬ জুলাই, ২০২৫ এবং স্থান ডোরিনা ক্রসিং। সেই সঙ্গে ফ্লেক্সের নীচের দু’দিকে তৃণমূলের দু’টি পতাকা।
ওই নকশা নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। উত্তর কলকাতার একাধিক নেতা নিজেদের মধ্যে বলাবলি শুরু করেন, ‘দিদি’র ছবি ছাড়া তৃণমূলের কর্মসূচির ফ্লেক্স ভাবা যায় না! কেউ কেউ একান্ত আলোচনায় এমনও মন্তব্য করেন যে, মমতার ছবি ফ্লেক্সে না-থাকলে তাঁরা বুধবারের কর্মসূচি বয়কট করবেন। তাতে যা হওয়ার হবে। বেলা ১২টা পর্যন্তও তৃণমূলের মধ্যে ওই মতানৈক্য জিইয়ে ছিল। তখনই আনন্দবাজার ডট কম যোগাযোগ করেছিল উত্তর কলকাতা জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির অন্যতম সদস্য তথা কাউন্সিলর জীবন সাহার সঙ্গে। মমতার ছবিহীন ফ্লেক্সের কথা উল্লেখ করে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, এই নকশাই কি চূড়ান্ত? তিনি বলেন, ‘‘না। কিছুই চূড়ান্ত নয়।’’ কেন চূড়ান্ত নয়? ওই নকশায় নেত্রীর ছবি নেই বলে? জবাবে পোড়খাওয়া জীবন বলেন, ‘‘তা আমি বলতে পারব না।’’
এর পরে ১২টা ২০ মিনিট নাগাদ উত্তর কলকাতার নেতৃত্বের হাতে এসে পৌঁছোয় ফ্লেক্সের ‘পরিবর্তিত’ নকশা। যেখানে দেখা যাচ্ছে আগের নকশার সঙ্গে বাকি সবই এক রয়েছে। শুধু যুক্ত হয়েছে নেত্রী মমতার মাইক্রোফোন হাতে একটি ছবি। মঙ্গলবার থেকেই ওই মঞ্চ বাঁধার কাজ শুরু হওয়ার কথা। তবে ফ্লেক্স ঝোলানো হতে পারে বুধবার সকাল বা দুপুর নাগাদ। তখনই স্পষ্ট হবে, শেষ পর্যন্ত কোন নকশা মঞ্চের পটভূমিকায় ঠাঁই পেল।
প্রসঙ্গত, ছবি নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে মতানৈক্য বা বিতর্ক নতুন ঘটনা নয়। বছর দেড়েক আগে নেতাজি ইন্ডোরের একটি সভায় মঞ্চের প্রেক্ষাপটে অভিষেকের ছবি বাদ দিয়ে শুধু মমতার ছবি থাকা নিয়ে দলের অন্দরে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সেই সময়ে অভিষেক-অনুগামী হিসাবে পরিচিত অনেক নেতা প্রকাশ্যেই তা নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছিলেন। ঘটনাচক্রে, চোখের সমস্যার কারণে সেই সভায় শারীরিক ভাবে উপস্থিত ছিলেন না অভিষেক। তিনি ভার্চুয়াল মাধ্যমে তাঁর বক্তব্য পেশ করেছিলেন। এ বার অবশ্য কিছুই প্রকাশ্যে হয়নি। সবটাই ঘটেছে শাসকদলের অন্দরে। তবে এ বারের মিছিলে মমতার সঙ্গে পথে নামছেন অভিষেকও।
উল্লেখ্য, গত রবিবার তৃণমূলের তরফে ঘোষণা করা হয়েছিল, বাংলাভাষীদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে বুধবার মিছিল করবেন মমতা। সূত্রের খবর, নেত্রী মমতা তাঁর কর্মসূচির কথা প্রথমে জানান রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে মমতার কর্মসূচি ঘোষণা করার ব্যবস্থা করতে বলেন বক্সী। সেইমতো মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী তথা রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয় সাংবাদিক সম্মেলন করার। চন্দ্রিমাই ওই কর্মসূচির কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেন। সোমবার অভিষেকের দফতর থেকে জানানো হয়, মমতার পাশে হাঁটবেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকও, যাতে সর্বোচ্চ নেতৃত্বের মধ্যে ঐক্যের ছবিই দেখতে পেয়েছিলেন তৃণমূলের অনেকে। কিন্তু মঙ্গলবার ফ্লেক্স ঘিরে ‘মতানৈক্য’ ২১ জুলাইয়ের আগে নতুন আলোচনার রসদ তৈরি করেছে শাসকদলের অন্দরে।