পঙ্গপাল আসত দেশের ভিতর থেকেই। সর্বনাশ করে ছাড়ত শস্যের। এ বার এক ধরনের সর্বনেশে পোকা হাজির হয়েছে সুদূর আমেরিকা থেকে। তাদের দাপটে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় আট লক্ষ ভুট্টাচাষির মুখের হাসি মিলিয়ে গিয়েছে। ভুট্টার চারা লাগানোর পরেই তার কচিপাতা ও কাণ্ড খেয়ে শেষ করে দিচ্ছে ওই সব বিদেশি পোকা। নাম তাদের ‘ফল আর্মি ওয়ার্ম’ (এফএডব্লিউ)।
শস্যক্ষেত্রে এই বৈদেশিক আক্রমণ আকস্মিক। এ বছরেই প্রথম বাংলার মাটিতে এই পোকা দেখা যাচ্ছে। তাই তাদের প্রতিহত করার মতো অস্ত্র-প্রস্তুতি ছিল না। অস্ত্র বলতে পতঙ্গ দমনের প্রতিষেধক। প্রথমে রাজ্য সরকারের হাতে তেমন কিছু ছিল না। খবর পেয়ে লুধিয়ানা থেকে ছুটে আসেন কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের ভুট্টা চাষ বিষয়ক বিভাগের অধিকর্তা। তার পরে প্রতিষেধক পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু তার আগেই ভুট্টাচাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছে রাজ্যের কৃষি দফতর।
ধান-গমের পরেই এ রাজ্যে ভুট্টার চাষ হয় সব চেয়ে বেশি। কৃষি দফতরের খবর, ২০১৪-’১৫ অর্থবর্ষ থেকে ২০১৬-’১৭ আর্থিক বছর পর্যন্ত বাংলায় ভুট্টার উৎপাদন ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু এ বার মার্কিন পোকার অতর্কিত আক্রমণে উৎপাদন ভীষণ ভাবে মার খাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ওই দফতরই জানাচ্ছে, ‘ফল আর্মি ওয়ার্ম’ প্রথম দেখা গিয়েছিল আমেরিকার ভুট্টাখেতে। কানাডাতেও এই পোকার দাপট সাঙ্ঘাতিক। কিন্তু ২০১৬ সালে হঠাৎ দেখা যায়, মহাদেশ পেরিয়ে ওই যোদ্ধা পোকা পৌঁছে গিয়েছে আফ্রিকায়। ২৪ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে পারে এফএডব্লিউ। রাজ্যের কৃষিকর্তারা জানান, এ দেশে ওই পোকার প্রথম দেখা মেলে গত মে-তে, কর্নাটকের ভুট্টাখেতে। সেপ্টেম্বরে তারা দল বেঁধে চলে আসে নদিয়ায়। তার পরে ছড়িয়ে পড়তে থাকে উত্তরবঙ্গেও।
ভুট্টার সালতামামি সাল চাষ উৎপাদন (লক্ষ হেক্টর) (লক্ষ টন) ২০১৪-’১৫ ১.৫১ ৬.৪৯ ২০১৫-’১৬ ১.৫৩ ৬.৬২ ২০১৬-’১৭ ১.৬৩ ৭.৫৩
রাজ্যের কৃষি অধিকর্তা সম্পদকুমার পাত্র বলেন, ‘‘এ রাজ্যে প্রায় দু’লক্ষ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ হয়। আট লক্ষ কৃষক পরিবার এর সঙ্গে যুক্ত। মার্কিন পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচতে ভুট্টাচাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’’ কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাজ্য সরকার ভুট্টাচাষিদের সঙ্গে রয়েছে। প্রয়োজনে সরকার সব ধরনের সাহায্য করবে। ‘‘সতর্ক হতে হবে চাষিদেরও। ভুট্টাখেতে কোনও পোকার আক্রমণ দেখলেই কৃষি দফতরে যোগাযোগ করতে হবে,’’ বলেছেন কৃষিমন্ত্রী।
ওই সব মার্কিন যোদ্ধা পোকা নিয়ে রাজ্য এত বিব্রত কেন?
কৃষিকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, মালদহ, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও পুরুলিয়ায় ব্যাপক ভাবে ভুট্টা চাষ হয়। ধান-গমের চেয়ে ভুট্টা চাষে লাভ বেশি। কারণ, বছরে তিন বার সহজেই ভুট্টা চাষ করা যায়। এই অবস্থায় ভুট্টার খেতে প্রবাসী পোকার আক্রমণ হলে সব দিক থেকেই তা বিপজ্জনক।
কী ভাবে রক্ষা পাবে ভুট্টাখেত? কৃষি দফতর জানিয়েছে, ভুট্টার খেতে প্রথম এক মাস পাখি বসলে উপকার সব চেয়ে বেশি। এ ছাড়া আছে বন্ধু পোকা। ধানের কুঁড়ো, ঝোলাগুড়, থায়োডিকার্বের মিশ্রণ যোদ্ধা পোকার বিষটোপ হিসেবে দারুণ কাজ করছে।