গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, সার্বিক ভাবে ২৪ ঘণ্টায় কোভিড পজ়িটিভের সংখ্যা খুব বাড়েনি। রবিবারের মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২২৭৮, সোমবার বুলেটিনে তা ২২৮২। ২৪ ঘণ্টায় মোট মৃত্যু ৩৫।
তবে পাঁচ জেলার মানচিত্রে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগ বাড়িয়ে চলেছে। উত্তর ২৪ পরগনা (৫৭৪) কার্যত কলকাতার (৬৪৫) ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়তে থাকায় হাওড়ার (২১৩) সংক্রমণ সংখ্যাতেও ভোলবদল ঘটেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা (১৬৪) দেড়শোর ঘরেই রয়েছে। আর এ দিনের বুলেটিনে সংক্রমণের দৌড়ে উঠে এসেছে হুগলি (১৮১)। ২৪ ঘণ্টায় ৮৫ থেকে আক্রান্তের সংখ্যা এ দিন এক ধাক্কায় ১৮১ হয়ে গিয়েছে।
সংক্রমণের হানা থেকে রেহাই পায়নি স্বাস্থ্য দফতরের প্রধান কার্যালয়। সেখানকার কাজ সামলাতে চার জন অতিরিক্ত অফিসারকে নিয়োগ করা হয়েছে। আক্রান্তদের সকলের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন নেই। কিন্তু যাঁদের প্রয়োজন হচ্ছে বা হবে, তাঁদেরও কি শয্যা দেওয়ার মতো পরিকাঠামো রয়েছে? এ দিন নবান্নে স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্যের আক্রান্তের ৪-৫ শতাংশ গুরুতর উপসর্গযুক্ত রোগী। ৭-৮ শতাংশের অসুস্থতা মাঝারি মাপের যাঁদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হচ্ছে। ৮৭-৮৮ শতাংশ মানুষ করোনা পজিটিভ হলেও উপসর্গহীন থাকছেন। তাঁদের জন্য যথেষ্ট সংখ্যায় সেফ হোম রয়েছে।’’
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন।)
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, জুলাইয়ের শুরু থেকে সুস্থতার হার বঙ্গে কমতে শুরু করেছে। নমুনা পরীক্ষার ভিত্তিতে পজ়িটিভিটির হার বাড়ছে। ১ জুলাই রাজ্যে সুস্থতার হার ছিল ৬৫.৩৫ শতাংশ। ওই দিন কেস পজ়িটিভিটির হার ছিল ৩.৮৫ শতাংশ। সেখানে দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষে সুস্থতার হার ৫৯.০১ শতাংশ এবং কেস পজ়িটিভিটির হার ৬.২৫ শতাংশ!
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ চত্বরের ছবিই বলে দিচ্ছে শতাংশের এই হিসাবের অর্থ কী। এ দিন দুপুরে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের বাইরে রোগীর পরিজনের লাইন। রোগীদের মধ্যে যাঁরা দাঁড়াতে পারছেন না, তাঁরা জরুরি বিভাগের উল্টো দিকের সিঁড়িতে বসে রয়েছেন। জুনের শেষেও কোভিড হাসপাতাল চত্বরে রোগী, তাঁদের পরিজন এবং অ্যাম্বুল্যান্সের এত ঘন ঘন যাতায়াত ছিল না।
(চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে খবর, প্রতি দিন গড়ে সেখানে ৬৫-৭০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। সেখানে ছুটি হচ্ছে মাত্র ৩৫ জনের। রোগীর ছুটি এবং ভর্তির সংখ্যার ফারাক বাড়ছে এম আর বাঙুরেও। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, রোগী ভর্তির চাপ কাটাতে এক ‘প্রভাবশালীর’ বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে নালিশ করেন বেলেঘাটা আইডি কর্তৃপক্ষ।
বস্তুত, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের উপরে রোগীর চাপ কমাতে ইতিমধ্যে উপসর্গহীন, মৃদু উপসর্গহীনদের জন্য ‘সেফ হোম’ বা ‘হোম আইসোলেশনে’র উপরে জোর দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু ‘সেফ হোমে’র চ্যালেঞ্জ, আক্রান্তদের সেখানে যেতে রাজি করানো। কলকাতা পুরসভার এক চিকিৎসক আধিকারিক জানান, ‘হোম আইসোলেশন’এ থাকা আক্রান্তদের বর্জ্য নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি বেসরকারি সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়েছে। প্রতি কেজিতে ৫০০ টাকা করে নিচ্ছে ওই সংস্থা। পুরসভার জনস্বাস্থ্য বিভাগের এক আধিকারিক জানান, পাঁচশো টাকা দিতে না চেয়ে অনেকে রাস্তার ধারে বর্জ্য ফেলে দিচ্ছেন। তাতে সংক্রমণ বাড়ছে।
আরও পড়ুন: মমতার মাস্টারস্ট্রোক, রোগ ছড়ানো কমবে, মত বিশেষজ্ঞদের
স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, পরিস্থিতি যা, তাতে এনআরএসের ধাঁচে কোভিড ব্লক খোলার সময় এসে গিয়েছে। এ দিন আরজিকরের অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল যেমন সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল কলেজের অ্যানেক্স হাসপাতাল অবিনাশ দত্ত মেটারনিটি হোমকে কোভিড হাসপাতালে পরিণত করার প্রস্তাব দিয়েছেন। স্বাস্থ্য ভবনের নজরে ছিল আরজিকরের ট্রমা কেয়ার বিল্ডিং। কিন্তু আরজিকর কর্তৃপক্ষের প্রস্তাব, আহিরিটোলায় পাঁচ তলা হাসপাতালে ১২০-১৫০ শয্যার কোভিড হাসপাতাল করা যেতে পারে। সেখানে ২০টি এসএনসিইউকে আইসিইউয়ে পরিণত করার সুযোগও রয়েছে।
স্বাস্থ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘সব মেডিক্যাল কলেজে কোভিড ব্লক খুলতে হতে পারে।’’ বেসরকারি হাসপাতালে মোট শয্যার বেশিরভাগ শয্যাই বরাদ্দ করার ভাবা হচ্ছে বলে খবর।
আরও পড়ুন: গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু রাজ্যে, সপ্তাহে দু’দিন পূর্ণ লকডাউন
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে—পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ১২৮। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ১৪৮। তার আগের দু’দিন ছিল ১১৫ এবং ১০১। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ১৩৬ এবং ১৪২। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ১২৮, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)