Coronavirus

কেন্দ্রীয় নির্দেশ না-মেনে নতুন বিজ্ঞপ্তি, বিতর্ক

Advertisement

সৌরভ দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২০ ০৪:২২
Share:

ছবি পিটিআই।

করোনা-নির্দেশিকা ঘিরে বঙ্গদেশে উলটপুরাণ! সন্দেহভাজন রোগীদের হাসপাতাল থেকে ছাড়ার প্রশ্নে কেন্দ্রের নীতি নির্দেশিকাকে উপেক্ষা করে শুক্রবার পৃথক বিজ্ঞপ্তি দিল স্বাস্থ্য ভবন। যার পিছনে আমলা-চিকিৎসক টানাপড়েন কাজ করেছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে, বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে পর্যবেক্ষণাধীন ব্যক্তিদের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ এলে তাঁদের তৎক্ষণাৎ আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে ছেড়ে দিতে হবে। অসুস্থতার জন্য বা অন্য কারণে হাসপাতালে রাখার প্রয়োজন হলে করোনা-সন্দেহভাজনকে জেনারেল ওয়ার্ডে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য ভবনের এই বিজ্ঞপ্তি কেন্দ্রীয় নির্দেশিকার পরিপন্থী বলে সরকারি চিকিৎসকদের একাংশের অভিমত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পরামর্শ মেনে নোভেল করোনাভাইরাসের (সিওভিআইডি-১৯) মোকাবিলায় একটি নীতি নির্দেশিকা (কন্টেনমেন্ট প্ল্যান) তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। নতুন ধরনের ভাইরাসের মোকাবিলায় সেই নির্দেশিকার ভিত্তিতেই সংক্রমণ রোধে নেমেছে সব রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় নির্দেশিকার ‘ডিসচার্জ পলিসি’-তে বলা রয়েছে, সন্দেহভাজনের ক্ষেত্রে সিওভিআইডি-১৯ পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেবেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক।

Advertisement

সরকারি চিকিৎসকদের বক্তব্য, রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের এ দিনের নির্দেশিকায় ঘুরিয়ে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের সই করা নির্দেশিকা নিয়ে বিতর্কের পিছনে নাম জড়িয়েছে দফতরের এক আমলার। স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্র বলছে, পর্যবেক্ষণে থাকা দুই বিদেশির রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরেও কেন তাঁদের ছাড়া হয়নি, তা নিয়েই টানাপড়েনের সূত্রপাত। আইডি-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ওই আমলাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। নাইসেড (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজ়িজ়েস) থেকে রিপোর্ট আসতে অনেক সময় রাত হয়ে যায়। সচিব স্তরের ওই আমলা কর্তৃপক্ষকে জানান, রিপোর্ট আসতে যত রাতই হোক, রোগীকে ছেড়ে দিতে হবে! আইডি-কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে সেই নির্দেশ দেওয়ার কথা বলায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। রাজ্যের অন্যান্য মেডিক্যাল কলেজ ও জেলা হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড থাকলেও শুধু আইডি-র উদ্দেশে বিজ্ঞপ্তিটি দেওয়া হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।

স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, এই ধরনের বিজ্ঞপ্তি বায়ুবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে। স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা অমিয় হাটি জানান, নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ এলেও পরে আবার ভাইরাস ধরা পড়তে পারে। কোয়ারেন্টাইনের পরে ভাইরাস ধরা পড়েছে, এমন নজিরও রয়েছে। তাই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিলেও রোগী যাতে ঘরে পর্যবেক্ষণে থাকেন, তা নিশ্চিত করতে বলা হচ্ছে। অমিয়বাবু বলেন, ‘‘হাসপাতালের জেনারেল ওয়ার্ডে রাখার পরামর্শ মোটেই ঠিক নয়।’’ স্বাস্থ্য দফতরের করোনা প্রশিক্ষণ শিবিরে হাজির এক বিশিষ্ট চিকিৎসকও বলছেন, ‘‘রোগীকে ছাড়ার প্রশ্নে তাঁর সঙ্গে করোনা সংক্রমণের যোগ কতখানি গভীর, তা বিচার করতে হবে। তিনি কোন দেশে গিয়েছিলেন, কী ধরনের এক্সপোজ়ার হয়েছে, সে-সব দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের উপরে ছেড়ে দিতে হবে। এই নিয়ে সমালোচনার জায়গা আছে বলে মনে হচ্ছে না।’’

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা প্রসঙ্গে আইডি-র অধ্যক্ষা অণিমা হালদার বলেন, ‘‘রোগীর স্বার্থ যাতে ক্ষুণ্ণ না-হয়, তা নিশ্চিত করেই ছাড়া হবে।’’ বিতর্ক প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এখনও আমাদের রাজ্যে কারও করোনা পজ়িটিভ ধরা পড়েনি। কিন্তু কারও পজ়িটিভ ধরা পড়লে তাঁর সঙ্গে নেগেটিভ রিপোর্ট আসা ব্যক্তিদের রাখাটাও তো ঠিক নয়। তবে জেনারেল ওয়ার্ডে অন্য রোগীদের সঙ্গে না-রেখে কী ব্যবস্থা করা যায়, সেটা দেখতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন