ছবি: পিটিআই।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় রাজ্য কেন্দ্রের কাছ থেকে যথেষ্ট সংখ্যক কিট পাচ্ছে না বলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, রাজ্য সরকারের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও পরীক্ষার জন্য অতিরিক্ত পরীক্ষাগার তৈরির অনুমতি দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকার। ২২ মার্চ পর্যন্ত কেন আন্তর্জাতিক বিমান চালানো হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী।
শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্স করেন প্রধানমন্ত্রী। করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন মোদী। সংক্রমণ রোখার প্রশ্নে আগামী তিন-চার সপ্তাহ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে বলে জানিয়ে রাজ্যগুলিকে পুরোদস্তুর প্রস্তুত থাকার জন্য মুখ্যমন্ত্রীদের পরামর্শও দেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে এ রাজ্যের পরিস্থিতি এবং সরকারের পদক্ষেপের তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রীর কাছে করোনা-পরীক্ষার কিট চাওয়ার পাশাপাশি, এ রাজ্যে পরীক্ষাগারের সংখ্যা বাড়ানো এবং প্রয়োজনে বেসরকারি সংস্থাগুলিকেও করোনা-পরীক্ষা করার অনুমতি দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন তিনি। পরে মমতা জানান, প্রধানমন্ত্রী কোনও আশ্বাস দেননি। তবে তিনি বলেছেন তথ্যগুলি লিখে নিয়েছেন। মমতা বলেন, ‘‘কিটগুলি প্রধানত কেন্দ্রই পাঠিয়ে থাকে। আমাদের আরও ল্যাবরেটরি প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, দেশে ১১০টা ল্যাবরেটরি হবে। এখনই তো ৭৪টা রয়েছে! আমি তাঁকে বলেছি, ভয় না-করে লড়ে যাব।’’
আরও পড়ুন: করোনা নিয়ে এ বার চিন্তা তৃতীয় জনকে ঘিরে
রাজ্য এ দিন ১০-১২টি ল্যাবরেটরির জন্য আর্জি জানিয়েছে। তা ছাড়া, গবেষণা সংক্রান্ত যন্ত্রও চেয়েছেন মমতা। এ দিন বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, কেন এখনও আন্তর্জাতিক উড়ান চলবে। তাঁর কথায়, ‘‘বাইরের থেকেই তো করোনা আসছে। ২২ তারিখ পর্যন্ত কেন আন্তর্জাতিক উড়ান চালানো হবে? অবিলম্বে তা বন্ধ করা প্রয়োজন।’’
চলতি পরিস্থিতিতে অঙ্গনওয়াড়ি উপভোক্তাদের বাড়িতে চাল এবং আলু পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। মিড-ডে-মিল-এর আওতায় যে সব পড়ুয়া রয়েছে, তাদের বাড়িতেও চাল-আলু পাঠানো হবে। পাশাপাশি, গণবণ্টন ব্যবস্থায় ছ’মাসের জন্য নিখরচায় খাদ্যশস্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত এ দিন ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য দেওয়ার জন্য বলেছি।’’
আগামিকাল, রবিবার গোটা দেশে সকাল সাতটা থেকে ১৪ ঘণ্টা ‘জনতা-কার্ফু’ পালনের আর্জি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ, যত বেশি মানুষ নিজেদের ভিড় থেকে সরিয়ে রাখবেন, করোনা ছড়ানোর সম্ভাবনা তত কমবে। মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘মহামারীর আশঙ্কা সব রাজ্যের রয়েছে। সে কারণে কেন্দ্র ও রাজ্য এক যোগে কাজ করার দরকার।’’ তাঁর মতে, জনতা কার্ফু সফল করতে সকলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ জরুরি। এ ব্যাপারে রাজ্যবাসীকে বোঝানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রীদের অনুরোধ করেন মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘বিভিন্ন দেশে যে ভাবে ওই রোগ ছড়িয়েছে, তার ভিত্তিতে বলা যেতে পারে নজরদারি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।’’
এ ব্যাপারে সরাসরি মন্তব্য করতে না-চাইলেও দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘একসঙ্গে কাজ করি। এটা মানুষের ব্যাপার। দেশে এমন অবস্থা।’’ পরে সন্ধেয় তিনি বলেন, ‘‘চার দিন না-ই বা ঘুরলেন রাস্তায়। কী আসে যায়? নিজের, নিজের পরিবার এবং অন্যের স্বার্থে যত্নবান হওয়া দরকার।’’
জনতা কার্ফু ঘোষণার পর পাইকারি ও খুচরো বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এক লাফে অনেকটাই বেড়েছে। জনতা যাতে ন্যায্য দামে জিনিস কিনতে পারেন, সে জন্য বণিকসভাগুলির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়মিত কথা বলার উপরে জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। কালোবাজারি রুখতে বোঝানোর পাশাপাশি দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও পরামর্শ মুখ্যমন্ত্রীদের দিয়েছেন তিনি।
করোনা মোকাবিলায় রাজ্যগুলি যে তৎপরতা দেখিয়েছে, আজ তার প্রশংসা করেন মোদী। পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, দিল্লির মতো কিছু রাজ্য সরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড গড়েছে। খারাপ পরিস্থিতির সম্ভাবনা মাথায় রেখে রাজ্যগুলির স্বাস্থ্য পরিকাঠামো আরও মজবুত করার উপরে জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। এ কাজে রাজ্যগুলিকে সব সাহায্যের আশ্বাসও দেন তিনি।