বিপাকে: ভিন্ রাজ্য থেকে ট্রেনে ফেরা শতাধিক মানুষ আটকে হাওড়া স্টেশনের বাইরে। চলছে নাম-ঠিকানা নথিভুক্তির কাজ। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
কাজ, চিকিৎসা, ব্যবসা, ভ্রমণ-সহ নানা কারণে রাজ্যের বাইরে গিয়ে সময়মতো ফিরতে পারেননি তাঁরা। ‘লকডাউন’ বা তালাবন্দি দেশের নানা প্রান্ত থেকে আটকে পড়েছেন বাংলার বহু বাসিন্দা। অনেকেই বাসস্থান, খাবার, পানীয়, ওষুধ নিয়ে প্রবল সঙ্কটে পড়েছেন বলে অভিযোগ। ভিন্ রাজ্যে আটকে পড়া রাজ্যবাসীদের পাশে দাঁড়ানোর আর্জি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী এবং বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী।
সুজনবাবুর প্রস্তাব, রাজ্য একটি হেল্পলাইন চালু করুক, বিশেষ টাস্ক ফোর্স গড়ুক। অধীরবাবুর সঙ্গে বুধবার রাতে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ও ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেনের কথা হয়েছে। দুই মুখ্যমন্ত্রাই আশ্বাস দিয়েছেন, তাঁদের রাজ্যে আটকে পড়া মানুষের থাকা-খাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার ভার দেওয়া হচ্ছে জেলা স্তরের প্রশাসনিক আধিকারিকদের।
রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ মহলের খবর,মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির সঙ্গে কথা বলে আটকে পড়া মানুষদের সমস্যা মেটানোর চেষ্টা চলছে। তবে কতটা কী করা যাবে, তা নিয়ে সংশয়ে নবান্ন। ওই সব রাজ্যবাসী সময় থাকতে কেন ফিরে আসেননি, প্রশাসনের অন্দরে উঠছে সেই প্রশ্নও। কলকাতা ছাড়াও শিলিগুড়ি, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমান-সহ বিভিন্ন জেলার মানুষ আটকে পড়েছেন।
সন্তান নিয়ে আটকে পড়েছেন মহিলাও। খাবার না পেয়ে কান্না মায়ের। বুধবার। ছবি: রয়টার্স
শিলিগুড়ির বাসিন্দা সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায় বেঙ্গালুরু থেকে জানান, চিকিৎসার প্রয়োজনে এসে তাঁর মতো অন্তত ৫০ জন আটকে গিয়েছেন। সোদপুরের বাসিন্দা দেবাশিস দত্ত জানান, চিকিৎসার জন্য ভেলোরে পৌঁছে ট্রেন বাতিলের জেরে আটকে পড়েছেন তিনি এবং তাঁর মতো অন্তত ৭০ জন। তাঁর কথায়,‘‘প্রশাসনের চাপে কর্তৃপক্ষ হোটেল ছেড়ে দিতে বলছেন। হোটেলে কর্মী নেই। অমিল পরিষেবা। ২১ দিন কী ভাবে কাটবে,জানি না। এখনই ফিরতে চাই।’’ নেপাল থেকে কাজ সেরে ফেরার পথে হাওড়া-জয়পুরের ৪৩ জন শ্রমিক পটনায় আটকা পড়েছেন। ওই জেলারই শ্যামপুরের ১১ জন শ্রমিক আটকে আছেন হায়দরাবাদে। নদিয়ার কয়েক জন ব্যবসায়ী শাড়ি বিক্রি করে ফেরার পথে আটকে পড়েছেন বিহার ও ঝাড়খণ্ড সীমানায়। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের সাহাপাড়ার ৩৩ জন আটকে আছেন অমৃতসরে। তাঁদের মধ্যে ১০টি শিশুও আছে। আসানসোলের ২৭ জন পর্যটক আটকে পড়েছেন উত্তরাখণ্ডের চৌকরিতে। মঙ্গলবার রাতে কাঠগোদাম এক্সপ্রেস ধরে ফেরার কথা ছিল তাঁদের। টিকিট বাতিল হওয়ায় ফিরতে পারেননি।
২১ জনের পর্যটকদল হরিদ্বারে আটকে আছে। দলে আছেন এক বৃদ্ধা ক্যানসার-রোগীও। তাঁরা মূলত দক্ষিণেশ্বরের বাসিন্দা। লেক টাউন থেকে কাশ্মীর বেড়াতে গিয়ে অমৃতসরে আটকে আছেন ৩০ জন। হিমাচলে বেড়াতে গিয়ে আটকে গিয়েছেন ব্যারাকপুরের ২০ জন পর্যটক। শিলিগুড়ি থেকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতেগিয়ে উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরে আটকে পড়েছেন এক জন।স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেও সুরাহা না-হওয়ায় সকলেই চিন্তায়।
বাম পরিষদীয় নেতা সুজনবাবু কথা বলেছেন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। নানা রাজ্য থেকে বিপন্ন মানুষের ফোন পেয়ে কংগ্রেস নেতা ও বহরমপুরের সাংসদ অধীরবাবু নিজেও সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক ও সাংসদদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের থাকা ও খাবারের জোগানের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছেন।
কেরল থেকে ট্রেন ধরে বিলাসপুর পৌঁছে আটকে রয়েছেন মুর্শিদাবাদের ডোমকলের ৩৯ জন শ্রমিক। তিরুঅনন্তপুরমের কাছে আট্টুকল মন্দিরে আটকে মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলার বেশ কিছু বাসিন্দা। তাঁদের কাছ থেকে বার্তা পেয়ে অধীরবাবু যোগাযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক ও সাংসদদের সঙ্গে। অধীরবাবু বলেন, ‘‘মূলত দক্ষিণ ভারতে আমাদের রাজ্যের অনেকে আটকে আছেন।বিশেষ ট্রেন যখন এসেছিল, তখন ওঁরা ঠিকমতো জানতেন কি না, জানি না। এখন ওঁদের কাছে টাকা নেই, খাবার নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুধু কৃতিত্ব নিতে ব্যস্ত! রাজ্যগুলিকেই নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রেখে যতটুকু করার, করতে হবে।’’
সুজনবাবুর বক্তব্য, ‘‘নানা রাজ্যে আটকে পড়া রোগী ও তাঁদের পরিবার, ছাত্র-ছাত্রী, শ্রমিক ও পর্যটকদের সমস্যার কথা জানতে পেরে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছি, যাতে একটা হেল্পলাইন খোলা এবং টাস্ক ফোর্স গড়া যায় ওঁদের সহায়তার জন্য।’’