Coronavirus

‘সুস্থ’ হয়েও হঠাৎ মৃত্যু, ১৪ দিনেও নিরাপদ নয়

শুধু কী মৃত্যু! করোনা থেকে তথাকথিত সুস্থ হয়ে ওঠার পরে নানাবিধ শারীরিক সমস্যার তালিকা কম নয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২০ ০৩:৩৯
Share:

—প্রতীকী ছবি।

হাসপাতাল থেকে ছুটি বা আইসোলেশন পর্ব থেকে মুক্তি মানেই কি সুস্থতা! ১৪ দিনের গেরো কাটিয়ে একের পর এক আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনায় এই প্রশ্নেরই এখন উত্তর পেতে চাইছে রাজ্যের চিকিৎসক সমাজের একাংশ। বুধবার যার প্রেক্ষিত গড়ে দিল বছর পঁয়ত্রিশের চিকিৎসক অনিকেত নিয়োগীর মৃত্যু।

Advertisement

পরিবার সূত্রে খবর, অক্টোবরের শেষে লেক গার্ডেন্সের বাসিন্দা ইন্টারনাল মেডিসিনের চিকিৎসক অনিকেতের করোনা ধরা পড়ে। সপ্তাহখানেক আগে তাঁর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিল। এ দিন সকাল ৬টা নাগাদ আচমকা হার্ট অ্যাটাকে তাঁর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন স্ত্রী পৌলমী নিয়োগী। বুধবারই করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ইউরোলজির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর সুব্রত মিত্রের হৃদ্‌যন্ত্র জনিত সমস্যার কারণে মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছে। রাজ্যের চিকিৎসক মহলের বক্তব্য, চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মী শুধু নন, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া বা আইসোলেশন পর্ব কাটানোর পরবর্তী পর্বে মৃত্যুর ঘটনা আরও রয়েছে। বৈষ্ণবঘাটার বাসিন্দা বছর বিয়াল্লিশের শ্রী ভট্টাচার্য গত ২ অক্টোবর পঞ্চসায়রের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে বাড়িতে ফিরেছিলেন। কিন্তু দেহে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়ায় পঞ্চমীর দিন ফের তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হৃদ্‌যন্ত্র জনিত সমস্যার কারণে অষ্টমীর দিনে আচমকা মৃত্যু হয় ওই মহিলার।

শুধু কী মৃত্যু! করোনা থেকে তথাকথিত সুস্থ হয়ে ওঠার পরে নানাবিধ শারীরিক সমস্যার তালিকা কম নয়। ক্লান্তিভাব, অল্প পরিশ্রমে শ্বাসকষ্ট, মানসিক বিষণ্ণতা, ফুসফুসে ফাইব্রোসিস, মাথা ঘোরানোর মতো উপসর্গের জেরে সুস্থ হয়েও নিজেদের সুস্থ বলতে পারছেন না করোনা আক্রান্তদের একাংশ। স্বাভাবিক ভাবে, স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিদিনের পরিসংখ্যানে ৯০ শতাংশের সুস্থতার হারের যৌক্তিকতা কী, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, কোভিড পরবর্তী পর্বে যে সকল রোগীর মৃত্যু হচ্ছে তার পরিসংখ্যান কোথায়? এই সকল মৃত্যুর কারণ কী তা খতিয়ে দেখতে কোনও রূপরেখা কেন তৈরি হবে না?

Advertisement

হৃদ্‌যন্ত্র জনিত সমস্যা প্রসঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালের কার্ডিয়োলজিস্ট সুনীল লীলা জানান, করোনা ভাইরাসের আক্রমণে আক্রান্তের দেহে যে প্রদাহ হচ্ছে তাতে হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশী প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর ফলে হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা কমে বিপত্তি ঘটতে পারে। এছাড়া দেহে অক্সিজেনের মাত্রা কমার সঙ্গে হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশীও দুর্বল হতে পারে। নির্দেশিকা নির্ধারিত কোভিড সময়কালের পরে অন্তত দেড় মাস কাজে যোগ দেওয়া উচিত নয় বলে মত তাঁর। কার্ডিওলজিস্ট অরিজিৎ ঘোষ জানান, রক্ত জমাট বাঁধা থেকে পালমোনারি এম্বোলিজ়মের পরিস্থিতি তৈরি হলেও রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বক্ষরোগের চিকিৎসক ধীমান গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া মানে রোগী সুস্থ, করোনায় তা ভাবার অবকাশ নেই। দু’মাস না গেলে কাউকে সুস্থ বলা উচিত নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন