ছবি: রয়টার্স।
রাজ্যে এক দিনে নতুন করে ৫৪ জন করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন বলে সোমবার নবান্নে জানালেন মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ। এর আগে দিনে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ থেকে ৩০-এর মধ্যে ছিল।
মুখ্যসচিব জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে আরও সাত জন সুস্থ হওয়ায় সুস্থের সংখ্যা ৬৬ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৩। সব মিলিয়ে অ্যাক্টিভ করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৯৮ থেকে হল ২৪৫। মৃতের সংখ্যা ১২-ই রয়েছে।
গত সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন ৪০০-র বেশি নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে এ রাজ্যে। লালারসের নমুনা সংগ্রহের ভিত্তিতে আরটিপিসিআরে পরীক্ষার সংখ্যা মোটামুটি একই রয়েছে। শুক্রবার পরীক্ষা হয়েছিল ৪০১টি। স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, পরবর্তী দু’দিন নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৪১৮ এবং ৪১৫। এ দিন মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৪২৪টি। ফলে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা তেমন না বাড়লেও আক্রান্তের সংখ্যা এই প্রথম এক দিনে পঞ্চাশের ঘর ছাড়িয়ে যাওয়া ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তবে মুখ্যসচিব জানান, গোষ্ঠী সংক্রমণের কথা আইসিএমআর এখনও সরকারি ভাবে বলেনি। আর আক্রান্তের সংস্পর্শে কারা এসেছেন, অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের চিহ্নিত করার কাজ ব্যাহত হওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
করোনা-তথ্য
• নতুন আক্রান্ত ৫৪ জন
• মোট অ্যাক্টিভ করোনা পজ়িটিভ ২৪৫
• সুস্থ হয়ে ছাড়া পেয়েছেন ৭৩ জন
• মোট নমুনা পরীক্ষা ৫৪৬৯
• গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা ৪২৪
• মালদহে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ৫৯টি পরীক্ষার ফল নেগেটিভ
• মৃত্যু ১২
তথ্য সূত্র: রাজ্য সরকার
এ দিকে, স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে বিশেষ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ বিভাগের একের পর এক চিকিৎসকের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা। সম্প্রতি মেডিক্যাল কলেজের ইডেন বিল্ডিংয়ে এক প্রসূতির দেহে করোনা ধরা পড়েছিল। ইডেন-যোগে রবিবার স্ত্রীরোগ বিভাগের তিন জন চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হন। এ ছাড়া, এক করোনা আক্রান্ত প্রৌঢ়ার মৃত্যুর ঘটনার প্রেক্ষিতে আক্রান্ত হন মেডিসিনের এক চিকিৎসক। মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধানকে অন্যত্র বদলির নির্দেশিকা এদিনই জারি হয়েছে। স্ত্রীরোগ বিভাগের আরও তিন ডাক্তার আক্রান্ত হয়েছেন বলে এ দিন জানান উপাধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস। তাঁদের মধ্যে হাওড়ার বাসিন্দা পিজিটি এবং বালিগঞ্জের বাসিন্দা, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদমর্যাদার চিকিৎসক বেলেঘাটা আইডি-তে চিকিৎসাধীন। বি সি রায় শিশু হাসপাতালের গ্রুপ ডি স্টাফ, গার্ডেনরিচ হাসপাতালের তিন স্বাস্থ্যকর্মী, হাওড়ার এক চিকিৎসক, কলকাতার এক জন নার্সও আক্রান্ত।
আরও পড়ুন: জোগান বাড়লেও পিপিই-র ঘাটতি ও মান নিয়ে নালিশ
আরও পড়ুন: করোনা: অন্যদের চেয়ে আমরা ভাল, বলছে কেন্দ্র
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা তথা হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্মী এবং তাঁর স্ত্রী করোনা আক্রান্ত হয়ে এম আর বাঙুর হাসপাতালে রয়েছেন বলে খবর। রবিবার রাতে বারাসতে করোনা আক্রান্ত এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায়। তবে করোনাতেই মৃত্যু কি না, তা জানাবে সরকারি কমিটি।
ইডেন-যোগে চিকিৎসকদের আক্রান্ত হওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের ভুল সিদ্ধান্ত দায়ী বলে এ দিনই প্রেস বিবৃতিতে অভিযোগ করেছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তাঁদের বক্তব্য, এন-৯৫ মাস্ক পাওয়া যায়নি। আইসোলেশনের জন্য স্থানাভাব এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকায় রোগী এবং চিকিৎসক বিপদে পড়ছেন। আক্রান্তের সংস্পর্শে আসার পরে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের কোয়রান্টিনে পাঠানো এবং নমুনা পরীক্ষা এবং লেবার রুম জীবাণুমুক্ত করার কাজও ঠিক মতো হয়নি বলে দাবি তাঁদের। উপাধ্যক্ষ বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশিকা অনুযায়ী, যাঁদের নমুনা পরীক্ষা প্রয়োজন তা করা হয়েছে এবং হচ্ছেও। ৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। আক্রান্তের সংস্পর্শে এলে হোটেলে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। তা না মেনে অনেকে হস্টেলে থেকে ঠিক করেননি।’’ মুখ্যসচিব জানান, চিকিৎসকেরা যাতে সব সুরক্ষা নিয়ে রোগীর কাছে যান, তা নিশ্চিত করা হয়েছে। করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ‘অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেসে’র সংখ্যা বেশি। তাই শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য আলাদা হাসপাতাল করা হয়েছে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)