Coronavirus in West Bengal

মাছ-দুধ বাদ দিয়ে নিজেই ঘরবন্দি হয়েছে তেহট্টের গ্রাম

সকলেই মনে করার চেষ্টা করছেন, ওই পরিবার না হোক, তাদের সংস্পর্শে আসা কারও কাছাকাছি তাঁরা দৈবাৎ গিয়েছিলেন কি না।

Advertisement

সাগর হালদার 

বার্নিয়া (‌তেহট্ট) শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২০ ০৩:১২
Share:

গ্রামে ছড়ানো হচ্ছে জীবাণুনাশক। নিজস্ব চিত্র

পাঁচ করোনা আক্রান্ত বা তাঁদের পরিবারের লোকজনের সংস্পর্শে এসেছিলেন, এমন ৪৯ জনের নামের তালিকা তৈরি করে তাঁদের গৃহ পর্যবেক্ষণে থাকতে বলেছে স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু নদিয়ার তেহট্টে গোটা বার্নিয়া গ্রামই কার্যত গৃহবন্দি করে ফেলেছে নিজেকে। এত দিন প্রশাসন ও সংবাদমাধ্যমের লাগাতার প্রচার যা করতে পারেনি, ঘরের কাছে এসে যাওয়া ভাইরাস তা করে দিয়েছে।

Advertisement

সকলেই দুয়ার এঁটে বসে। সকলেই সন্দেহ করছে সকলকে। সকলেই মনে করার চেষ্টা করছেন, ওই পরিবার না হোক, তাদের সংস্পর্শে আসা কারও কাছাকাছি তাঁরা দৈবাৎ গিয়েছিলেন কি না। দুধ নেওয়া বন্ধ। রাস্তার কলে জল নেওয়া বন্ধ। এমনকি ওষুধ কিনতেও বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন না কেউ।

রোজ সকালে বাড়ি-বাড়ি দুধ বিক্রি করেন শ্রীকৃষ্ণপুরের নাজিম মল্লিক। তাঁর সাতটি গরু দিনে প্রায় আট কেজি দুধ দেয়। রবিবার দুধ দিতে গিয়ে সকলের কাছেই শোনেন, তাঁরা আপাতত দুধ নেবেন না। হতাশ নাজিম বলছেন, “দেখি, কম দামে কোথাও বিক্রি করা যায় কি না!”

Advertisement

ওই গ্রামেরই যুবক মিঠুন সরকার বলেন, “অজান্তে যে কার সংস্পর্শে এসেছে, কে জানে!” গ্রামের কাছে এক পেট্রল পাম্পের কর্মী প্রদীপ দাসও আতঙ্কিত। তিনি বলেন, “অনেকে এখানে তেল ভরতে আসেন। কেউ ভাইরাস নিয়ে ঘুরছে কি না, কে জানবে?” জিল্লুর রহমান নামে এক জন বলেন, “ক’দিন আগেও সকালের দিকে বাজারে লোকজন মাছ কিনতে আসত। শনিবার থেকে কারও দেখা নেই। সবাই বলছে, ডাল-ভাতই যথেষ্ট।”

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, যে ৪৯ জনের নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে তার মধ্যে ১৩ জন মহিলা, বাকিরা পুরুষ। এর মধ্যে এক গাড়ি চালক, পাঁচ আনাজ বিক্রেতা, প্রথম আক্রান্ত লন্ডন ফেরত যুবকের বাবার সঙ্গে তাস খেলতে আসা সাত জনের নাম রয়েছে। দিল্লি থেকে রাজধানী এক্সপ্রেসে শিয়ালদহে এসে লালগোলা এক্সপ্রেস ধরেছিলেন আক্রান্তদের কয়েক জন। নদিয়ার বেথুয়াডহরি স্টেশনে নেমে তাঁরা অটো ধরে বার্নিয়া যান। স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, ওই অটো চালককে শনাক্ত করা গিয়েছে। তবে তিনি তা অস্বীকার করছেন। জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত দেওয়ান বলেন, “আমরা নিশ্চিত, ওই অটো চালকই আক্রান্তদের বার্নিয়ায় পৌঁছে দিয়েছিলেন। তাঁকে হোম কোয়রান্টিনে থাকতে বলা হয়েছে।” জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের গড়া চারটি দল বার্নিয়া ও আশপাশের গ্রাম ঘুরে শনাক্তকরণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষাও চলছে।

স্থানীয় বার্নিয়া পঞ্চায়েতের সদস্য সুধীরকুমার রায় বলেন, “গ্রামে চাপা আতঙ্ক রয়েছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আক্রান্তদের বাড়ির আশপাশে জীবাণুনাশক ছড়ানো হয়েছে।” তেহট্ট ২-এর বিডিও শুভ সিংহ রায় বলেন, “ওই এলাকায় কারও হাঁচি-কাশি বা সর্দিজ্বর হলেও তাঁকে সঙ্গে-সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে।”

কিন্তু ভয়ের চোটে সে কথাও যে চেপে যাচ্ছেন কেউ-কেউ! রবিবার সকাল থেকে জ্বরে পড়েছেন বার্নিয়ার এক যুবক। ডাক্তার দেখানো দূরস্থান, ওষুধ কিনতেও বেরোচ্ছেন না বাড়ির কেউ। যুবকের মা বলেন, ‘‘মাথায় জলপটি দিচ্ছি। দুটো দিন দেখি। যদি না সারে, দেখা যাবে।’’

(সহ-প্রতিবেদন: সুস্মিত হালদার)

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন