Coronavirus in West Bengal

পিপিই কিট পরে করোনা আক্রান্তকে সাহায্য

সুরজিৎ মিত্র (বাদল) এবং সুবীর সরকার (বিলু) নামে দুই বন্ধুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ বসিরহাটের মানুষ।

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২০ ০৩:৫৬
Share:

সুবীর সরকার ও সুরজিৎ মিত্র

কারও জল বন্ধ করে দিচ্ছেন পড়শিরা, কাউকে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরতে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। কেউ আবার হাসপাতালে ডিউটি সেরে বাড়ি ফিরতে গেলেও পড়শিরা শোরগোল জুড়ছেন। করোনা নিয়ে বহু জায়গায় এই যখন পরিস্থিতি, তখন পিপিই কিট পরে অসুস্থ করোনা আক্রান্তকে হাসপাতালে পৌঁছে দিলেন বসিরহাটের দুই যুবক।

Advertisement

বসিরহাটের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের অসুস্থ বছর বাষট্টির ওই ব্যক্তিকে অবশ্য শেষমেশ বাঁচানো যায়নি। গোপালপুর কোভিড হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানিয়ে দেন। তবে তাঁকে নিয়ে সোমবার সন্ধ্যা থেকে দুই যুবক যে ভাবে ছোটাছুটি করেছেন, তা জানতে পেরে অনেকেই সাহসের তারিফ করছেন। ওই রাতেই ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়িতে করোনায় মৃত্যু হয় এক মহিলার। মঙ্গলবার বেলা পর্যন্ত দেহ পড়েছিল বাড়িতেই। জানতে পেরে ফের হাজির দুই যুবক। পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করে শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা করেন।

সুরজিৎ মিত্র (বাদল) এবং সুবীর সরকার (বিলু) নামে দুই বন্ধুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ বসিরহাটের মানুষ। পুরসভার প্রশাসক তপন সরকার বলেন, ‘‘বাদল ও বিলুর এই প্রচেষ্টা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’’ বসিরহাট জেলা হাসপাতালের সুপার শ্যামল হালদার বলেন, ‘‘এ ধরনের কাজে এগিয়ে যাওয়ার আগে নিজেরা যাতে সংক্রমিত না হন, সে দিকে লক্ষ্য রেখে পিপিই কিট-সহ সমস্ত রকম সুরক্ষা-ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: নিশ্চিন্ত থাকা যাবে না কোভিড সেরে গেলেও

বসিরহাট পুর এলাকার বাসিন্দা সুরজিৎ বসিরহাট কলেজে চাকরি করেন। সুবীরও ওই কলেজের অস্থায়ী কর্মী। তাঁরা জানালেন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রবীণ মানুষটিকে গৃহ-নিভৃতবাসে রেখে চিকিৎসা চলছিল। তাঁকে চিনতেন সুরজিৎ-বাদলরা। সোমবার সন্ধ্যায় তাঁরা দেখেন, বৃদ্ধের স্ত্রী ছাড়া আর কেউ পাশে নেই। এ দিকে, শরীর খুবই খারাপ। অ্যাম্বুল্যান্স এলেও করোনা আক্রান্ত শুনে কেউ রোগীকে গাড়িতে তুলতে রাজি হচ্ছিলেন না বলে জানালেন দুই যুবক। বাদল বলেন, ‘‘আমরা যোগাযোগ করি পুরসভার সঙ্গে। সেখান থেকে পিপিই কিট জোগাড় করে অসুস্থকে গোপালপুর কোভিড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করি।’’ তত ক্ষণে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। চিকিৎসক রোগীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করে বলে জানান বসিরহাট পুলিশ জেলার সুপার কঙ্করপ্রসাদ বারুই।

অন্য ঘটনায়, স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, অসুস্থ অবস্থায় বসিরহাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ১১ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝবয়সি এক মহিলা। তাঁর লালারস পরীক্ষায় করোনা পজ়িটিভ ধরা পড়ে। দিন তিনেক হল বাড়িতে এনে চিকিৎসা চলছিল তাঁর। সোমবার রাতে মৃত্যু হয়। কেউ দেহ হাসপাতালে নিয়ে যেতে রাজি হননি বলে পরিবারটি জানিয়েছে। খবর পেয়ে সঙ্গীদের নিয়ে চলে আসেন সুরজিৎ। আসেন সুবীরও। গাড়ি জোগাড় করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন তাঁরাই।

আরও পড়ুন: ফিল্টার থাকলে বাতিল এন-৯৫

পুরসভার কর্মী তাপস বসু বলেন, ‘‘দু’টি পরিবারকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন দুই যুবক। আমাদের তরফে শববাহী গাড়ি এবং পিপিই কিটের ব্যবস্থা করা হয়।’’ বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ ধরনের সমস্যায় পড়লে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ব্যবস্থা হবে।’’

নানা সামাজিক কাজে সামনের সারিতেই দেখা যায় সুরজিৎ-সুবীরকে। তাঁদের আক্ষেপ একটাই। বললেন, ‘‘কাউকেই বাঁচানো গেল না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন