দুর্নীতি চক্র পিএফে

ফাঁকা তহবিল থেকে ঢালাও উঠছে অগ্রিম

সরকারি কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের হিসেব দেখে এজি বেঙ্গল। তারা সম্প্রতি লক্ষ করেছে, বহু কর্মীর পিএফ তহবিলে কোনও টাকাই পড়ে নেই।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৮ ০৫:৩১
Share:

প্রতীকী ছবি।

টাকাই নেই তহবিলে। অথচ লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে তা থেকেই!

Advertisement

অবাক করে দেওয়া এমন ঘটনা ঘটছে প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্য নিধি তহবিলে। পিএফ থেকে দেদার টাকা তুলে নিচ্ছেন এক শ্রেণির সরকারি কর্মী। অথচ রাজ্যের অর্থ দফতরের হুঁশ নেই। সরকারি আয়-ব্যয়ের হিসেব দেখা যাদের কাজ, সেই এজি বেঙ্গল সম্প্রতি এই বিষয়ে সতর্ক করে নবান্নকে চিঠি দিয়েছে।

সরকারি কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের হিসেব দেখে এজি বেঙ্গল। তারা সম্প্রতি লক্ষ করেছে, বহু কর্মীর পিএফ তহবিলে কোনও টাকাই পড়ে নেই। তার থেকেও বিস্ময়ের কথা, শূন্য পিএফ অ্যাকাউন্ট থেকেই কোনও এক জাদুমন্ত্রে অগ্রিম হিসেবে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে নিয়েছেন অসংখ্য সরকারি কর্মচারী! কোনও রকম প্রশ্ন না-তুলে তাঁদের হাতে অগ্রিমের সেই টাকা তুলেও দেওয়া হয়েছে। ফলে তাঁদের পিএফ অ্যাকাউন্ট চলে গিয়েছে মাইনাস ব্যালান্সে। সরকার খরচ কমানোর উপরে জোর দিচ্ছে, অথচ সরকারেরই ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছে অতিরিক্ত টাকা। স্বাভাবিক ভাবেই সেই টাকা ফেরত দেওয়ার গরজ নেই সংশ্লিষ্ট কর্মীদের। এজি এই ধরনের প্রায় দেড়শো
কর্মীর নামের তালিকা নবান্নে পাঠিয়ে এর বিহিত চেয়েছে।

Advertisement

এজি বেঙ্গলের চিঠি পেয়ে টনক নড়েছে অর্থ দফতরের। গত ২০ জুন তারা সব দফতরকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছে, ফাঁকি দিয়ে কোষাগারের টাকা তুলে নেওয়ার যে-কারবার চলছে, কোনও অবস্থাতেই তা মেনে নেওয়া হবে না। সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির ড্রয়িং অ্যান্ড ডিসবার্সিং (ডিডিও) অফিসারদের উপরে দায়িত্ব চাপিয়ে অর্থ দফতর ইতিমধ্যেই গলে যাওয়া টাকার হিসেব চেয়েছে। নির্দেশ দিয়েছে, কর্মীদের অবসর নেওয়ার ছ’মাস আগেই যেন অগ্রিম নেওয়া অতিরিক্ত টাকা আদায় করে নেওয়া হয়। কিন্তু ইতিমধ্যে যাঁরা অবসর নিয়েছেন, সমস্যা দেখা দিয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রে। অর্থ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘তাঁদের মধ্যে যাঁরা এখনও গ্র্যাচুইটি পাননি তাঁদের গ্র্যাচুইটি থেকে অগ্রিম কেটে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু যাঁরা সেটাও পেয়ে গিয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা মুশকিল হবে।’’

কী ভাবে শূন্য প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে এত কর্মী অবাধে অগ্রিম তুলে নেওয়ার সুযোগ পেলেন?

নবান্নের এক কর্তার কথায়, ‘‘আসলে ডিডিও-রা তহবিল পরীক্ষা না-করেই অগ্রিম তুলে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। সেই জন্য সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে ডিডিও-দের।’’

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কর্মচারী ফেডারেশনের মেন্টর গ্রুপের আহ্বায়ক মনোজ চক্রবর্তী জানান, সরকারি কর্মীরা বছরখানেক চাকরি বাকি থাকতে পিএফে জমা টাকার ৯০% অগ্রিম হিসেবে তুলতে পারেন। তার জন্য তাঁদের সংশ্লিষ্ট দফতরের ডিডিও-র কাছে আবেদন করতে হয়। ডিডিও-র কাজ হল, সেই সব আবেদন মঞ্জুর করার আগে খুঁটিয়ে দেখে নেওয়া, সংশ্লিষ্ট কর্মীর পিএফ তহবিলে আদৌ ঠিক পরিমাণ টাকা আছে কি না। জমা রাশির অন্তত ১০% তহবিলে ফেলে রেখে বাকি টাকা তুলে নেওয়ার অনুমতি দিতেই পারেন ডিডিও। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বহু কর্মীর পিএফ তহবিলে কোনও টাকাই নেই। তার পরেও অনেকে এক বা একাধিক বার টাকা তুলে নিয়েছেন। ‘‘বিশাল দুর্নীতি চলেছে, অর্থনৈতিক অনিয়মে রাশ না-টানলে সরকারের মেরুদণ্ড ভেঙে যাবে,’’ বলছেন মনোজবাবু।

এর মধ্যে একটি চক্র কাজ করছে বলেও অনেকের ধারণা। রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা বিজয়শঙ্কর সিংহ বলেন, ‘‘গুরুতর ব্যাপার। একেবারে নিচু তলা থেকে উপরের তলার এক শ্রেণির কর্মী যুক্ত না-থাকলে পিএফ থেকে এ ভাবে ঢালাও টাকা তুলে নেওয়া সম্ভব নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন