Couple Harassed

চুঁচুড়ার লজে হেনস্থা, যুগলের পাশে পুলিশ

কিছু উদ্ভট নিয়মের নাম করে ভিন্ ধর্মে বিবাহিত এক যুগলকে হেনস্থার ঘটনার সূত্রে এ সব প্রশ্নই ফের উঠতে শুরু করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:১৫
Share:

এই লজেই দম্পতিকে আশ্রয় দেওয়া হয়নি। ছবি: তাপস ঘোষ

হোটেলে ঘর পেতে স্রেফ নিজের পরিচয়পত্রটুকুই কি যথেষ্ট নয়? না কি যুগলে থাকতে হলে দরকার হবে বিয়ের শংসাপত্র?

Advertisement

কিছু উদ্ভট নিয়মের নাম করে ভিন্ ধর্মে বিবাহিত এক যুগলকে হেনস্থার ঘটনার সূত্রে এ সব প্রশ্নই ফের উঠতে শুরু করেছে। হুগলির একটি লজে ঘর ভাড়া করতে গিয়ে এমনই বাধার মুখে পড়েছিলেন তৌসিফ হক ও জয়ন্তী বিশ্বাস নামের এক বিবাহিত যুগল। তাঁদের পদবী কেন আলাদা, সেই প্রশ্ন তুলে লজকর্তারা ঘর দিতে কার্যত অস্বীকার করেন বলে তৌসিফ সমাজমাধ্যমে জানিয়েছিলেন। পুলিশ থেকে হোটেল-মালিকদের সংগঠন, সব পক্ষেরই মত, ভিন্ ধর্মে বিয়ে নিয়ে আপত্তি তো দূরের কথা, প্রাপ্তবয়স্ক কোনও দম্পতির স্বেচ্ছায় একসঙ্গে হোটেলবাস নিয়েও কারও আপত্তি তোলার অধিকার নেই। হুগলির ঘটনায় বিব্রত পুলিশ সোমবার স্থানীয় হোটেল-মালিকদের কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে। হুগলির পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর এ দিন আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ‘‘গোটা ঘটনাটি অনভিপ্রেত। এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে, আমরা নজর রাখব।’’

তবে কলকাতা কিংবা রাজ্যের বিভিন্ন মফস্‌সল শহরের বহু হোটেল-মালিকেরই অভিযোগ, অবিবাহিত কোনও যুগল থাকতে এলে অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ হোটেলে হানা দিয়ে তাঁদের হেনস্থার চেষ্টা করে। কিছু ক্ষেত্রে হোটেলের কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের গোপন বোঝাপড়া থাকে বলেও অভিযোগ। তৌসিফ ও তাঁর স্ত্রী— দু’জনের সঙ্গেই অবশ্য বিয়ের শংসাপত্র ছিল। তা সত্ত্বেও তাঁরা হেনস্থা থেকে ছাড় পাননি।

Advertisement

আরও পড়ুন: বিবেক মিছিল তথা দ্বৈরথে নেই শুভেন্দু, আছেন শুধু মাল্যদানে

সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের মতো কয়েকটি রাজ্যে ধর্মান্তরকরণ-বিরোধী আইনের জিগির উঠেছে। ভিন্ ধর্মে যুগলদের বিয়ে বা মেলামেশার ক্ষেত্রেও বার বার পুলিশি জুলুমের অভিযোগ উঠেছে। হুগলির লজে ভিন্ ধর্মে বিবাহিত যুগলকে হেনস্থার পিছনেও তেমন কোনও মানসিকতা কাজ করছে কি না, উঠেছে সেই প্রশ্নও।

আরও পড়ুন: ক্যাপিটলে হামলার পর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের প্রস্তাব ডেমোক্র্যাটদের

‘হোটেল রেস্তরাঁ অ্যাসোসিয়েশন অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র প্রাক্তন সভাপতি তথা সক্রিয় সদস্য প্রণব সিংহের দাবি, ‘‘প্রাপ্তবয়স্ক যুগল বিবাহিত কি না, তা দেখার এক্তিয়ারই নেই হোটেলের। ভিন্ ধর্মের যুগলকে প্রত্যাখ্যানও চলতে পারে না। তবে অন্য কোনও কারণে কাউকে ঘর না-ই দিতে পারে পুলিশ।’’

তৌসিফদের কেন ঘর ভাড়া দেওয়া হল না, তার সদুত্তর মেলেনি লজ-মালিক প্রদীপ রায়ের কাছে। বর্ধমানের বাসিন্দা তৌসিফ সস্ত্রীক বনভোজনে গিয়েছিলেন। স্ত্রীর অসুস্থতার জন্যই কোনও হোটেলে থাকার দরকার পড়ে। স্বামী-স্ত্রীর পদবীর অমিল নিয়ে হুগলির লজে প্রশ্ন ওঠার পরে তাঁরা চুঁচুড়ার লজে ছিলেন। পরে তৌসিফ বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুলেছেন। হুগলির লজের সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশ খতিয়ে দেখছে। হুগলির পুলিশকর্তা হুমায়ুন কবীর বা মহকুমাশাসক (সদর) সৈকত গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ঘটনাটি নিয়ে খাতায়-কলমে অভিযোগ জমা না-পড়লেও বিভিন্ন হোটেল কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন