অন্য দেহ দেখিয়ে অপহরণ তদন্ত!

নদিয়া জেলা পুলিশের এই কাজে বুধবার তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি রবিকৃষণ কপূরের ডিভিশন বেঞ্চ। সরকারি কৌঁসুলি সাবির আহমেদকে ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, কেন পুলিশ এমন তদন্ত করল এবং এই মুহূর্তে মেয়েটি কোথায়, তা জানিয়ে ছ’সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা পেশ করতে হবে।

Advertisement

শমীক ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৮ ০৪:৫২
Share:

অন্যা বিশ্বাস। ফাইল চিত্র।

মেয়েকে অপহরণ ও খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন এক দম্পতি। কিছু দিন পরে পুলিশ একটি পচাগলা দেহ দেখিয়ে ওই দম্পতিকে দিয়ে শনাক্ত করিয়ে নেয়। কিন্তু ময়না-তদন্তে জানা যায়, সেটি দম্পতির মেয়ের দেহ নয়। এবং সেই মৃতদেহের আগেও এক বার ময়না-তদন্ত হয়েছে! সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতে ছা়ড়া পায় অভিযুক্তেরা। মেয়েকে ফিরে পেতে সেই দম্পতি এ বার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলেন।

Advertisement

নদিয়া জেলা পুলিশের এই কাজে বুধবার তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি রবিকৃষণ কপূরের ডিভিশন বেঞ্চ। সরকারি কৌঁসুলি সাবির আহমেদকে ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, কেন পুলিশ এমন তদন্ত করল এবং এই মুহূর্তে মেয়েটি কোথায়, তা জানিয়ে ছ’সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা পেশ করতে হবে।

আবেদনকারীর আইনজীবী সুবীর দেবনাথ ও অঙ্কিত অগ্রবাল জানান, নদিয়ার ধুবুলিয়ার শান্তিনগরের বাসিন্দা বছর সতেরোর অন্যা বিশ্বাস ২০১৪ সালের ১১ মার্চ কম্পিউটার শিখতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। তার বাবা অনুকূল বিশ্বাস ও মা দীপালিদেবী থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পরে তাঁরা অভিযোগ জানান, স্থানীয় শরৎপল্লির বাসিন্দা প্রশান্ত মণ্ডল তাঁদের মেয়েকে অপহরণ করেছে। ২৫ মার্চ অপহরণের মামলা দায়ের করে তদন্তে নামে পুলিশ। অন্যার মা ২৯ মার্চ ফের অভিযোগ জানান, আগের রাতে প্রশান্ত তাঁকে ফোন করে তাঁদের মেয়েকে খুন করার কথা জানিয়েছে। পরের দিন অর্থাৎ ৩০ মার্চ সকালে বর্ধমানের পূর্বস্থলী থানার যজ্ঞেশ্বর ঘাটে একটি মৃতদেহ পাওয়া যায়। তদন্তকারী অফিসার মানিক সমাদ্দার অনুকূলবাবুদের জানান, দেহটির সঙ্গে অন্যার মিল আছে। দীপালিদেবী সেখানে যান এবং পুলিশকে জানান, তাঁর মনে হচ্ছে, দেহটি তাঁর মেয়েরই। প্রশান্ত এবং তার দুই ভাইকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের বাবা কুটীশ্বর মণ্ডলের বিরুদ্ধেও অপহরণ ও খুনের ধারায় চার্জশিট পেশ করে পুলিশ।

Advertisement

বিচার চলাকালীন বর্ধমান হাসপাতালের ময়না-তদন্তকারী চিকিৎসক দেবাশিস সরকার জানান, উদ্ধার হওয়া আধপচা দেহটি ২৫-৩০ বছরের কোনও মহিলার। তা ছাড়া ওই দেহে ময়না-তদন্তের পরেকার সেলাইও আছে। রিপোর্টেও তা উল্লেখ করা হয়েছে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিচারক তথ্যপ্রমাণের অভাবে অভিযুক্তদের খালাস দেন। কিন্তু রায়ে তদন্তকারী অফিসারের গাফিলতি নিয়ে পুলিশ সুপারের কাছে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করার সুপারিশ করেন। বিচারকের পর্যবেক্ষণ ছিল, দেহ উদ্ধার, সুরতহাল, ময়না-তদন্ত— কোনও সময়েই তদন্তকারী অফিসার হাজির ছিলেন না। ওই দেহের হাড় ও দাঁত ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়নি। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট দেখেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অভিযুক্তেরা খালাস পেয়ে যাওয়ায় অনুকূলবাবু এবং তাঁর স্ত্রী রাজ্যের মুখ্যসচিব, পুলিশের ডিজি, নদিয়ার পুলিশ সুপার, ধুবুলিয়ার ওসি-র কাছে মেয়েকে খুঁজে বার করে দেওয়ার জন্য লিখিত অনুরোধ জানান। কোনও সুরাহা না-হওয়ায় হাইকোর্টে মামলা করেন ১৬ জুলাই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement