JMB Members

বাংলাদেশি জঙ্গিগোষ্ঠীর পাঁচ সদস্যকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ কোর্টের! যোগ ছিল খাগড়াগড় বিস্ফোরণকাণ্ডেও

২০১৬ সালে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ, বসিরহাট এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্য অসম থেকে এই পাঁচ জেএমবি সদস্যকে গ্রেফতার করেন তদন্তকারীরা। দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়ায় ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:২৭
Share:

জেএমবির পাঁচ সদস্যকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল কলকাতার নগর দায়রা আদালত। —প্রতীকী চিত্র।

বাংলাদেশি জঙ্গিগোষ্ঠী জামাত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর পাঁচ সদস্যকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল আদালত। দেশদ্রোহিতার অভিযোগে তাঁদের দোষী সাব্যস্ত করেছে কলকাতার নগর দায়রা আদালত। ধৃতদের সঙ্গে খাগড়াগড় বিস্ফোরণকাণ্ডেরও যোগ ছিল বলে জানা যাচ্ছে। ন’বছর আগে, ২০১৬ সালে গ্রেফতার হয়েছিলেন জেএমবির পাঁচ সদস্য মহম্মদ রুবেল, জবিরুল ইসলাম, মহম্মদ শাহিদুল ইসলাম, মৌলানা ইউসূফ শেখ এবং আনোয়ার হোসেন।

Advertisement

২০১৬ সালে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ, বসিরহাট এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্য অসম থেকে এই পাঁচ জেএমবি সদস্যকে গ্রেফতার করেন তদন্তকারীরা। কলকাতা পুলিশে স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের (এসটিএফ) হাতে ধরা পড়েন ওই পাঁচ জন। এসটিএফ জানিয়েছে, জেএমবি-র কয়েক জন সদস্য বেআইনি কাজকর্ম চালাচ্ছেন‌ বলে গোপন সূত্রে আগাম খবর পেয়েছিলেন তদন্তকারীরা। সেই সূত্র‌ ধরেই নজরদারি শুরু হয়। তাতে তদন্তকারীদের অনুমান, উত্তর ২৪ পরগনায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে এ দেশে প্রবেশ করেছিলেন জেএমবি সদস্যেরা। জঙ্গিগোষ্ঠীর অন্য সহযোগীদের সঙ্গে দেখা করে উত্তরপূর্ব এবং দক্ষিণ ভারতের বেশ‌কিছু জায়গায় নাশকতার ছক ছিল‌‌ তাঁদের। এসটিএফ জানাচ্ছে, ওই জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যেরা মনে করতেন বাংলাদেশে‌ শরিয়ৎ আইন চালু করা এবং বৃহত্তর বাংলাদেশ স্থাপন করার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা ভারত। রোহিঙ্গা এবং কাশ্মীর প্রসঙ্গেও ভারতের বিরুদ্ধে অভিমত ছিল তাঁদের। সেই কারণেই তাঁরা এ দেশে নাশকতার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে অনুমান করছে এসটিএফ।

দীর্ঘ বিচারপ্রক্রিয়ায় ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। শেষে মঙ্গলবার ওই পাঁচ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে নগর দায়রা আদালত। বুধবার তাঁদের সাজা ঘোষণা করেন বিচারক রোহন সিংহ। ধৃতদের মধ্যে আনোয়ার এবং জবিরুল বাংলাদেশি। বিদেশি নাগরিক আইনেও তাঁদের দোষী সাব্যস্ত করেছেন বিচারক।

Advertisement

দেশদ্রোহিতার মামলায় পাঁচ জনকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। করা হয়েছে আর্থিক জরিমানাও। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করার পাশাপাশি ওই ধারায় ২০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে পাঁচ জনের। অনাদায়ে তিন মাসের জেলের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। এ ছাড়া অন্য ধারাতেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে আসামিদের। ভারতীয় দণ্ডবিধির অপর একটি ধারায় রুবেলকে পাঁচ বছরের জেল এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে এক মাসের জেলের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ইউসূফকে অপর একটি ধারাতেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন বিচারক। অনাদায়ে ছ’মাসের জেলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শাহিদুলকে অন্য একটি অপরাধে পাঁচ বছরের জেল এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

অপর দুই আসামি আনোয়ার এবং জবিরুলকে বিদেশি নাগরিক আইনেও দোষী সাব্যস্ত করেছেন বিচারক। ওই ধারায় উভয়েরই তিন বছরের জেল এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হয়েছে। সেটিতেও অনাদায়ে এক মাসের জরিমানা করেছে নগর দায়রা আদালত। অপর একটি ধারায় দুই বাংলাদেশির পাঁচ বছরের জেল এবং ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে এক মাসের জেলের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। এই মামলায় ধৃতদের থেকে বিস্ফোরকও উদ্ধার করেছিলেন তদন্তকারীরা।

জানা যাচ্ছে, এই পাঁচ জনের সঙ্গে খাগড়াগড়কাণ্ডেরও যোগ রয়েছে। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর অষ্টমীর দিন বর্ধমানের খাগড়াগড়ে একটি বাড়িতে তীব্র বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছিল শাকিল গাজি নামে এক ব্যক্তির। পরবর্তী সময়ে ওই ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল বাংলাদেশি জঙ্গিগোষ্ঠী জেএমবির। ঘটনার প্রায় দু’বছর পরে ধৃত এই পাঁচ জেএমবি সদস্যেরও ওই বিস্ফোরণের সঙ্গে যোগ ছিল বলে সূত্রের খবর। এই মামলার সরকারি আইনজীবী জানান, দেশদ্রোহিতার অভিযোগে রাজ‍্যে প্রথম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল। এসটিএফের জন‍্যই এটা সম্ভব হল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement