শূন্য এজলাসে জামিন দেবে কে

বন্‌ধ ডাকলেই কাজ বন্ধ। আইনজীবীদের এ হেন পদক্ষেপে সোমবার অচল রইল কৃষ্ণনগর থেকে জঙ্গিপুর মহকুমা আদালত কিংবা রানাঘাট মহকুমা আদালত।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০৬
Share:

সুনসান রানাঘাট আদালত। — নিজস্ব চিত্র

বন্‌ধ ডাকলেই কাজ বন্ধ।

Advertisement

আইনজীবীদের এ হেন পদক্ষেপে সোমবার অচল রইল কৃষ্ণনগর থেকে জঙ্গিপুর মহকুমা আদালত কিংবা রানাঘাট মহকুমা আদালত। ফলে চরম হয়রানি পোহাতে হল কয়েকশো বিচারপ্রার্থীকে। কারও কোলে দুধের শিশু, আদালতে এসেছিলেন স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে রোখার আর্জি নিয়ে। কেউ এসেছিলেন অভিযোগ জানাতে এসেছিলেন, স্বামী খোরপোষের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। সংসার চলছে না।

কিন্তু আইনজীবীদের কর্মবিরতির ধাক্কায় অভিযোগ জানানোর বদলে দিনভর অপেক্ষার শেষে একরাশ অভিযোগ নিয়ে ঘরে ফিরে গেলেন তাঁরা।

Advertisement

অন্যান্য দিনের মতোই সোমবারও খোলাই ছিল জঙ্গিপুর মহকুমা আদালত। হাজির ছিলেন বিচারকেরা। কিন্তু আদালতের কোনও এজলাসেই দেখা মেলেনি আইনজীবীদের। এমনকী তৃণমূলের সমর্থক হওয়ার সুবাদে আদালতে সরকারের নিযুক্ত জনা ১৫ আইনজীবীদের কেউই ঢোকেননি বিচারকদের কোনও এজলাসেই। ফলে কোনও মামলারই বিচার হয়নি এ দিন।

এই মুহূর্তে মুর্শিদাবাদ জেলার আদালতগুলিতে মামলার সংখ্যা বেড়ে ১,৩২,৮৫২তে দাঁড়িয়েছে। শুধু বধূ নির্যাতনের মামলা রয়েছে হাজার পঁচিশেক। প্রায় ২০ হাজার মামলার দিন পড়ছে ৩ মাসের বেশি সময় অন্তর। ফলে ক্রমশই বিলম্বিত হচ্ছে বিচারপ্রক্রিয়া। হয়রান হচ্ছেন মানুষ।

চাপড়া থেকে কৃষ্ণনগর আদালতে এসেছিলেন বছর পঞ্চান্নর রোহিনী সিংহরায়। বধূ নির্যাতনের মামলার আসামী তাঁর বোন অনিমা প্রামানিক। কিন্তু আদালত যে ফাঁকা। দেখা নেই আইনজীবীদের। অনিমা বলেন, “ছেলেটার আজ মনে হয় জামিন হয়ে যেত। আবার কবে ডেট পড়বে, কে জানে?”

শুধু যে এই দিনটাই বন্ধ ছিল কৃষ্ণনগর আদালত, তা নয়। সব বন্‌ধই পালন করেন আইনজীবীরা, সেটা যে রাজনৈতিক দলই ডাকুক না কেন। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন, গণ্ডগোল এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত।

সাগরদিঘির পুরাডাঙার বাসিন্দা রূম্পা খাতুনের বিয়ে হয়েছিল বছর ছয়েক আগে। সাগরদিঘিরই হাতিশাল গ্রামে। দুই শিশুকন্যা-সহ রুম্পাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছেন স্বামী। এ নিয়েই আদালতে নালিশ ঠুকেছেন রুম্পা। সোমবার ছিল সেই মামলার দিন। ভোর ৬টার ট্রেনে চেপে জঙ্গিপুর স্টেশন হয়ে ২ কিলোমিটার পথ হেঁটে দুই মেয়েকে নিয়ে জঙ্গিপুর আদালতে যখন পৌঁছন, তখন সকাল সাড়ে ৮টা। সেই থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত অপেক্ষা করে ফিরে যান। বললেন, “বাবার বাড়িতে কোনও রকমে মাথা গুঁজে পড়ে আছি। আর কত দিন কে জানে?”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement