সিঙ্গুর থেকে রাজ্যে কংগ্রেসকে নিয়ে জোটের ডাক দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এ বার তিনিই রাজ্য কমিটির বৈঠকে জোটের পক্ষে সরব হোন, এমনটাই চাইছেন সিপিএমের জোটপন্থী নেতারা।
আগামী শুক্র ও শনিবার কলকাতায় রাজ্য কমিটির বৈঠক বসছে। তাতে হাজির থাকতে কলকাতায় যাচ্ছেন সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাট ও বৃন্দা কারাট। প্রথা অনুযায়ী, তাঁরা রাজ্য কমিটির বৈঠকে নিজেদের মতামত জানাবেন না। শুধুই রাজ্যের নেতাদের মতামত বোঝার চেষ্টা করবেন। দু’দিন পরেই ১৬ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে পলিটব্যুরোর বৈঠকে তাঁরা নিজেদের মত জানাবেন। যেখানে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের জোটের প্রস্তাব পত্রপাঠ ফেরত পাঠাতে এককাট্টা কেরল লবি। জোটপন্থী নেতাদের ইচ্ছে, কেরল লবির হাতিয়ার ভোঁতা করে দিতে আগেই সীতারাম-প্রকাশের সামনে রাজ্য কমিটিতে জোটের পক্ষে সওয়াল সেরে রাখুন বুদ্ধদেব। আর তার পর বুদ্ধদেব দরকারে চিঠি লিখে নিজের মতামত পলিটব্যুরোকে জানান।
জোটপন্থী নেতাদের এই ইচ্ছের কারণ হল, পলিটব্যুরোর সমীকরণ। সেখানে অঙ্কের হিসেবে জোটের পক্ষে সায় মেলা কঠিন। পলিটব্যুরোর ১৬ জন সদস্যের মধ্যে প্রকাশ ও তাঁর কেরল লবির সংখ্যাগরিষ্ঠতাই বেশি। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এখন পলিটব্যুরোর সদস্য নন। বিশাখাপত্তনম পার্টি কংগ্রেসে তাঁকে কেন্দ্রীয় কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। পলিটব্যুরোয় আলিমুদ্দিনের তরফে জোটের পক্ষে সওয়াল করার লোক মাত্র তিনজন—সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসু ও মহম্মদ সেলিম।
কিন্তু শীর্ষ কমিটিতে না থাকলেও এখনও সর্বোচ্চ স্তরে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মতামতের যথেষ্ট ওজন রয়েছে, সে বিষয়ে সকলেই একমত। এমনকী জোটবিরোধী নেতারাও বলছেন, বুদ্ধদেব দলের ভিতরে কী বক্তব্য রাখছেন, তার উপরে অনেক কিছু নির্ভর করছে। কলকাতায় প্রকাশের সামনে বুদ্ধদেব নিজে জোটের পক্ষে মুখ খুললে কারাটও তা উড়িয়ে দিতে পারবেন না। এমনকী বুদ্ধদেবের বক্তব্য শুনে কেরলের কিছু নেতাও নমনীয় অবস্থান নিতে পারেন বলে জোটপন্থীদের আশা।
তবে বুদ্ধদেব যে হেতু রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য, তাই সিপিএমের প্রথা অনুযায়ী, রাজ্য কমিটির বৈঠকে তাঁর মতামত পেশ না করারই কথা। কিন্তু চাইলে অনুমতি নিয়ে সম্পাদকমন্ডলীর কোনও সদস্য রাজ্য কমিটিতে বক্তব্য পেশ করতেই পারেন। এ বার বিশেষ পরিস্থিতিতে তেমনটাই চাইছেন দলের জোটপন্থীরা। তাঁরা চান, রাজ্য কমিটির বৈঠকে বুদ্ধবাবু বলুন যে, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ তৃণমূলের শাসন থেকে মুক্তি পেতে চায়। এ জন্য বিরোধীদের জোট চাইছে তারা। সাধারণ মানুষ ও দলের কর্মী-সমর্থকদের সেই ইচ্ছেকে সম্মান জানানো দরকার। দলের উপজাতি সাব কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে এসে দিল্লিতে আজ বিমান বসুও মন্তব্য করেছেন, পশ্চিমবঙ্গ অত্যাচারিত মানুষের জোট হচ্ছে।
তবে কারাটরা বলছেন, তৃণমূলের সন্ত্রাসে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ঠিকই, তবে এ জন্য সংগঠন মজবুত করা দরকার। তা না করে নেতারা পার্টি কংগ্রেসের রাজনৈতিক লাইনে বদল চাইছেন। ইয়েচুরি জোটের যুক্তির সঙ্গে একমত। কিন্তু জোটবিরোধীরা তাঁর উপরেও চাপ তৈরি করছেন। সংবাদপত্রে ইয়েচুরি-রাহুলের বৈঠকের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ইয়েচুরির বিরোধী নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, কেন পার্টিকে অন্ধকারে রেখে তিনি এই বৈঠক করেছেন? তবে ইয়েচুরি জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে রাহুলের কোনও বৈঠক হয়নি। সংসদে কোনও নেতার সঙ্গে দেখা হওয়ার অর্থ বৈঠক নয়। রাহুলের সঙ্গে জোট নিয়ে তাঁর কোনও বৈঠক হয়নি।