CPM Congress alliance

পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এক মঞ্চে হাত-হাতুড়ি-কাস্তে, বীরভূম থেকে যৌথ তির, লক্ষ্য পদ্ম ও জোড়াফুল

ঘটনাচক্রে, এই সময় বীরভূমেই চলছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জনসংযোগ যাত্রা’। বৃহস্পতিবার লাভপুরে দলের নয়া কর্মসূচিতে ছিলেন তিনি। সিউড়ির সভা থেকে তাঁকে নিশানা করেন সেলিম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২৩ ২২:৫০
Share:

একমঞ্চে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।

মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি উপনির্বাচনে অনুকূলেই গিয়েছিল জোট করে লড়াইয়ের ফল। এ বার পঞ্চায়েত ভোটের আগে আবার কাছাকাছি আসতে শুরু করেছে সেই বাম-কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার বীরভূমের সিউড়িতে যৌথ সমাবেশ করল দুই দল। গত বিধানসভা নির্বাচনের পর এই প্রথম একমঞ্চে দেখা গেল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমকে। তৃণমূল এবং বিজেপিকে একাসনে বসিয়ে আক্রমণ শানালেন তাঁরা। তুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে আঁতাঁতের অভিযোগও। বাম-কংগ্রেসকে পাল্টা আক্রমণ করেছে তৃণমূল এবং বিজেপি।

Advertisement

ঘটনাচক্রে, এই সময় বীরভূমেই চলছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জনসংযোগ যাত্রা’। বৃহস্পতিবার লাভপুরে দলের নয়া কর্মসূচিতে ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। সিউড়ির বেণীমাধব স্কুলের মাঠের সভা থেকে তাঁকে নিশানা করেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘জেলায় জেলায় একটি যাত্রা বেরিয়েছে। শাসকদলের এক নেতা সেই যাত্রায় অংশ নিয়েছেন। এখন যে জেলায় শাসকদলের নেতা নিজের যাত্রা করছেন, সেখানেই তাঁর দলের কর্মীরা বাম-কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন।’’

পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সঙ্গে জোট হতে পারে, এই অবস্থান আগেই জানিয়ে দিয়েছে সিপিএম এবং কংগ্রেস। তবে পঞ্চায়েত ভোটের দস্তুর মেনে আসন সমঝোতার বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া আছে স্থানীয় নেতৃত্বের উপরেই। পঞ্চায়েত ভোটের আগে বীরভূম জেলায় একের পর এক থানা অভিযান বা ব্লক স্তরের কর্মসূচিতে দু’দলকে ইদানীং একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে। এ বার সেই জেলার সদরে যৌথ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ নিলেন সিপিএম ও কংগ্রেসের রাজ্য স্তরের শীর্ষ নেতৃত্ব।

Advertisement

কয়েক দিন আগেই সিউড়িতে এই মাঠেই সভা করে আসন্ন লোকসভা ৩৫টি আসনে জেতার কথা বলে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেখানে দাঁড়িয়ে সেলিম বলেন, লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে যাঁরা ভুল করে তৃণমূল বা বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন, তাঁরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের সময় এমন যুদ্ধ-যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করা হল, দেখে মনে হল, একটা ভোট দিলেই পাকিস্তানে বোমা পড়বে। অথচ, তখন কাশ্মীরের যিনি রাজ্যপাল ছিলেন, সেই সত্যপাল মালিক এখন বলছেন সেই দিনের ঘটনা কী ভাবে ঘটানো হয়েছিল।’’ অভিষেকের নবজোয়ার কর্মসূচিকেও আক্রমণ করেছেন সেলিম। বলেছেন, ‘‘আগে যেমন সার্কাস পার্টি তাঁবু নিয়ে আসত, এখন তেমনই তৃণমূল নতুন সার্কাস পার্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ ওই তাঁবু গুটিয়ে দেবে।’’

আবার সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে কেন্দ্রের মোদী সরকারকে আক্রমণ করেছেন অধীর। তিনি বলেন, ‘‘ওরা জানত, সুপ্রিম কোর্টে গেলে নাগরিকত্ব আইন খারিজ হয়ে যাবে। তাই এত দিন সব কিছু চেপে গিয়েছিল। আবার ভোটের সময় নাগরিকত্ব আইন নিয়ে আসবে। ১৯৫২ সালে অসমের হিন্দু-মুসলমান মানুষ একযোগে একটি দাবি তুলেছিল। তারা বলেছিল, এনআরসি করতে হবে। সেই সময় বাইরে থেকে প্রচুর লোক এসে অসমে ঢুকে পড়ছিল। স্থানীয় মানুষের ভাষা সংস্কৃতি বাঁচাতে তখন এই দাবি উঠেছিল। কিন্তু বিজেপি রাজনীতি করার জন্য অসমে এনআরসি করতে চাইল। অসমে বলা হল, এনআরসিতে ৪০ লাখ মানুষের নাম আছে। পরে বলা হল ৩০ লাখ। এখন তা ১৯ লাখে নেমে এসেছে। ১৯ লাখের মধ্যে ১৪ লাখ হিন্দু। হিন্দুদের নাম দেখে বিজেপি পিছিয়ে এসেছে অসমে। কিন্তু সেই এনআরসি বাংলায় আসবে ভোটের স্বার্থে।’’ অধীরের অভিযোগ, এনআরসি নিয়ে বিজেপি ও তৃণমূল দু’দলই রাজনীতি করছে। মোদী-মমতা আঁতাঁতের অভিযোগ তুলে অধীর বলেন, ‘‘মোদীর সর্দি লাগলে দিদির কাশি হয়!’’

বাম-কংগ্রেসের যৌথ সমাবেশ নিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ কটাক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ওই দুটো দল হচ্ছে পুতুলনাচের পুতুল। সুতো বিজেপির হাতে রয়েছে। যাতে বিজেপির সুবিধা। বিজেপির দুই ভাই সিপিএম এবং কংগ্রেস। দুটো মিলে শূন্য হয়েছিল। ওদের কোনও ভ্যালু নেই। বাংলার মানুষ ওদের প্রত্যাখ্যান করেছে।’’ মোদী-মমতা আঁতাঁত নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘২০২১ সালের বিধানসভায় বিজেপিকে হারাল কে? তৃণমূলই তো হারিয়েছে। ওরা তো শূন্য রয়েছে। আঁতাঁতের কথা উঠছে কী ভাবে?’’

অন্য দিকে, বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এই জোটকে অতীতে মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছেন। ভবিষ্যতেও করবেন। ২০২১ সালের ভোটে বাংলার মানুষ বাংলার রাজনীতির গতিমুখ নির্ধারিত করে দিয়েছেন। তৃণমূলকে হারাতে পারে একমাত্র বিজেপিই। এই বাইনারি তৈরি করেছেন মানুষই। পশ্চিমবঙ্গে এই মুহূর্তে যে রাজনীতি চলছে, তা তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে মেরুকৃত। সিপিএম ও কংগ্রেস যৌথ ভাবে চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু জনমানসে এর কোনও প্রভাব নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন