২০১৮ ও ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয়েছিল দু’টি বই। —গ্রাফিক সনৎ সিংহ।
তিনি অসুস্থ। চলচ্ছক্তিহীন। কিন্তু সেই অসুস্থ, চলচ্ছক্তিহীন, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসা প্রাক্তন মুখ্যন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দু’টি বই নতুন করে বিপুল সংখ্যায় ছাপতে চলেছে সিপিএমের দলীয় প্রকাশনা সংস্থা ‘ন্যাশনাল বুক এজেন্সি’ (এনবিএ)। শারদ উৎসবে বইয়ের স্টল দেওয়া সিপিএমের বরাবরের সাংগঠনিক কর্মসূচি। পুজোর মাস দেড়েক বাকি থাকতেই সেই কাজ শুরু করে দিল তাদের প্রকাশনা সংস্থা।
২০১৮ সাল থেকেই মোটামুটি গৃহবন্দি বুদ্ধদেব। সে বছর পুজোতেই তাঁর লেখা ‘নাৎসি জার্মানির জন্ম ও মৃত্যু’ প্রকাশ করেছিল এনবিএ। সেই বই হইহই করে বিকিয়েছিল বামমহলে। তার পরের বছর শারদীয়ায় ফের বুদ্ধদেবের নতুন বই প্রকাশ করে দলের প্রকাশনা সংস্থাটি। ‘স্বর্গের নীচে মহাবিশৃঙ্খলা’য় চিনা বিপ্লবের কথা লিখেছিলেন তিনি। সেই দু’টি বইই এ বার নতুন করে ছাপার পরিকল্পনা নিয়েছে এনবিএ।
প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছেন, ‘‘ওই দু’টি বইয়ের এ বারও বিপুল চাহিদা থাকবে। সেই মতো আমরা বই দু’টির পুনর্মুদ্রণ করছি।’’ তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের থেকে সিপিএমের ৭০০-র বেশি বই বিপণিতে বইগুলি যাবে। গড়পড়তা হিসাব ধরে নতুন করে বুদ্ধদেবের জোড়া বই ছাপতে হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তবে সংখ্যা সম্পর্কে কোনও নির্দিষ্ট তথ্য জানাতে চাননি অনিরুদ্ধ। যদিও সিপিএম সূত্রের খবর, দু’টি বই মিলিয়ে ৩৫ হাজারের বেশি কপি ছাপা হবে।
বেশ কয়েক বছর আগে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের লেখা দু’টি বই ‘চিলিতে গোপনে’ এবং ‘বিপন্ন জাহাজে এক নাবিকের গল্প’ বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন বুদ্ধদেব। চিলির বিশিষ্ট কবি পাবলো নেরুদার কবিতাও অনুবাদ করেছিলেন তিনি। সরকার থেকে বামফ্রন্ট চলে যাওয়ার পর লেখা দু’টি বই ‘ফিরে দেখা’ এবং ‘ফিরে দেখা ২’ সাড়া ফেলেছিল বাম কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। তার অনেক আগে যখন জ্যোতি বসুর মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব, তখন তাঁর লেখা নাটক ‘দুঃসময়’ বঙ্গ রাজনীতিতে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছিল।
সিপিএমের প্রকাশনা সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার পুজোয় নতুন কিছু বইও প্রকাশ করছে তারা। তার মধ্যে রয়েছে মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে একটি বইও। রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষার বর্তমান অবস্থা নিয়েও একটি সংকলন প্রকাশিত হবে বলে জানা গিয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে বই বিক্রি বেড়েছে বলে দাবি সিপিএম নেতাদের। সরকার থেকে চলে যাওয়ার পর হঠাৎ কেন বিক্রি বাড়ল? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘সরকারে থাকার সময়ে মতাদর্শগত চর্চা বলে কিছু ছিল না। সারা বছরই লোকসভা, বিধানসভা, পঞ্চায়েত, পুরসভা, স্কুল, কলেজ, গ্রন্থাগার, সমবায় ইত্যাদি ভোট নিয়ে সময় কেটে যেত। কিন্তু এখন সেটা অনেকটা বদলেছে। দলে অন্তর্ভুক্ত হওয়া নতুনদের মধ্যে রাজনৈতিক পড়াশোনা করার খিদেও দেখা যাচ্ছে।’’ তিনি এ-ও মেনে নিয়েছেন, ‘‘সব সময় নতুনদের সময়োপযোগী লেখা বা বই দেওয়া যাচ্ছে না।’’
তবে সিপিএমের আশা, বুদ্ধেদেবর বইয়ের এ বারও কাটতি থাকবে। সেই কারণেই বিপুল সংখ্যা তাঁর লেখা ছাপা হচ্ছে। সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বুদ্ধদেব। তিনি এখন বাড়িতেই চিকিৎসাধীন। কিন্তু সিপিএম তথা বাম জনতার কাছে এখনও তিনিই ‘নেতা’। তাঁর ‘আবেদন’ এখনও সকলের চেয়ে বেশি। সেই কারণেই সবচেয়ে বেশি তাঁর লেখা বইয়ের চাহিদাও।