ফণী-কামড় মোদীর, পাল্টা ছোবল দিদির

‘‘আপনি তো নির্বাচনী সভা করতে এসেছেন। অন্য সময় হলে বৈঠক করলে যেতাম। নির্বাচনের সময় আপনার সঙ্গে মঞ্চ কেন ভাগাভাগি করব? ওড়িশায় ভোট হয়ে গিয়েছে। তাই নবীন পট্টনায়কেরা গিয়েছেন।’’

Advertisement

রবিশঙ্কর দত্ত ও আনন্দ মণ্ডল

হলদিয়া ও গোপীবল্লভপুর শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৯ ০৩:৫১
Share:

ফাইল চিত্র।

ফণী-ফোনের ‘রহস্য’ কাটিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সোমবার হলদিয়ার নির্বাচনী সভায় প্রকাশ্যে জানালেন ঝড়ের পরে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও ফোনে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর আরও অভিযোগ, এ দিন কলাইকুন্ডা বিমান ঘাঁটিতে তিনি দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করতে চাইলেও ‘অহঙ্কারী দিদি’ তা হতে দেননি।

Advertisement

প্রায় তৎক্ষণাৎ গোপীবল্লভপুরের সভা থেকে মমতাও পাল্টা জানিয়ে দেন, প্রধানমন্ত্রী যখন কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন, তিনি তখন পরিস্থিতির দ্রুত মোকাবিলা করার জন্য খড়্গপুরে চলে গিয়েছিলেন। মোদীর উদ্দেশে মমতার কটাক্ষ, ‘‘আপনি তো কিছু হলেই টুইট করে দেন। পাবলিসিটি করেন। আমি কাজ করতে গিয়েছিলাম।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘আপনি তো নির্বাচনী সভা করতে এসেছেন। অন্য সময় হলে বৈঠক করলে যেতাম। নির্বাচনের সময় আপনার সঙ্গে মঞ্চ কেন ভাগাভাগি করব? ওড়িশায় ভোট হয়ে গিয়েছে। তাই নবীন পট্টনায়কেরা গিয়েছেন।’’

প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ‘‘স্পিডব্রেকার দিদি এই ঝড়ের ঘটনাতেও রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন। ঝড়ের পর মমতাদিদির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাঁর অহঙ্কার এত বেশি যে উনি আমার সঙ্গে কথা বলেননি।’’

Advertisement

গোপীবল্লভপুরের পরে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের কোতুলপুরের সভায় এই প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ঝড়ের সময় আপনি তো মিটিং করে বেড়াচ্ছিলেন। একটা সভাও বাতিল করেননি। আমি সমস্ত সভা বাতিল করে খড়্গপুরে গিয়ে বসেছিলাম। ঝড়ের মুখে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম।’’

এ দিন হলদিয়ার সভায় মোদী বলেন, ‘‘ক্ষয়ক্ষতির হিসেব নিতে এখানকার প্রশাসনের সঙ্গে বসতে চেয়েছিলাম। ভারত সরকার কী কী মদত দিতে পারে, তার জন্য বৈঠক করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু অহঙ্কারী দিদি তা-ও করতে দেননি। দিদির এই রাজনীতি সত্ত্বেও বাংলার লোককে ভরসা দিচ্ছি, কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের মানুষের পাশে আছে।’’

গোপীবল্লভপুরের সভায় মোদীর অভিযোগের প্রত্যুত্তরে পাল্টা কটাক্ষ করেছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘গত কাল একটা চিঠি পাঠিয়ে দিলেন। ওঁর বিমান এসে নামবে কলাইকুন্ডায়। আমরা ওঁর চাকর-বাকর, রিপোর্ট দিতে যেতে হবে। এ সব লোক দেখানো। ছবি তোলার জন্য। বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা। কলাইকুন্ডায় কেন যাব?’’

এই সূত্রেই মমতার অভিযোগ, ‘‘ভোট বড় বালাই। আগে যখন বন্যা হয়েছে, নিজে আপনার কাছে রিপোর্ট দিয়ে এসেছিলাম। একটা পয়সাও দেননি। দু’বার গিয়ে দেখা করেছি। আজ যা হয়েছে ওইটুকু সামলানোর ক্ষমতা আমাদের আছে। ভিক্ষে দরকার নেই। আর আপনি দেবেন কোথা থেকে? আপনি তো এখন এক্সপায়ারি প্রাইম মিনিস্টার। আপনি এখন নামে আছেন কামে নেই।’’ মুখ্যমন্ত্রীর আরও দাবি, তাঁকে বাদ দিয়ে রাজ্যের অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। যা সংবিধান বিরোধী। দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো-বিরোধী।

ভোটের মরসুমে দুর্যোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী রাজনীতি করছেন, এ কথা বোঝাতে পরে বেশ কিছু তথ্যও পেশ করেছেন মমতা। জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে একাধিকবার তিনি নিজে প্রধানমন্ত্রীকে জানান। ডিভিসির জলাধারগুলি থেকে জল ছাড়ার জন্য যে গ্রাম ভেসে যাচ্ছে, সে কথাও জানিয়েছিলেন। জলাধারগুলি সংস্কারেরও অনুরোধ করেছিলেন। অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, সে সময় রাজ্যের ২১ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্র কোনও সাহায্য করেনি। ২০১৭ সালেও একই ঘটনা ঘটে বলে উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

মোদীর অবশ্য দাবি, ঝড়ের মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তা নিয়ে গোটা দুনিয়ায় আলোচনা হচ্ছে। সকলে ভারত সরকারের প্রশংসা করছে। আর রবিবারের মতো এ দিনও মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ ফণী আর দেশের দুর্যোগ মোদী।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন