ফণীর পথই বাঁচাল বঙ্গকে

পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনায় শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ফণীর তাণ্ডব থেকে বাংলা বেঁচে গিয়েছে। ঈশ্বর আছেন! তবে বেশ কিছু বাড়ি ভেঙেছে। সমস্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৯ ০৩:২৩
Share:

গাছ পড়ে ভেঙে গিয়েছে গাড়ি। নিজস্ব চিত্র।

উৎকণ্ঠার প্রহর শেষে স্বস্তির সুরটাই এখন শেষ কথা বলছে।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনায় শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ফণীর তাণ্ডব থেকে বাংলা বেঁচে গিয়েছে। ঈশ্বর আছেন! তবে বেশ কিছু বাড়ি ভেঙেছে। সমস্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।”

প্রধানত ক্ষতির চিহ্ন বহন করছে দুই মেদিনীপুর বা দুই ২৪ পরগনার উপকূলবর্তী এলাকা। বড়-সড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা কেটে রোদ উঠতে দিঘা এ দিন ছন্দে ফিরেছে। নদিয়া-মুর্শিদাবাদ ছুঁয়ে বাংলাদেশে ঢোকার আগেও বেশ কয়েকটি মাটির বাড়ির দফারফা করে গিয়েছে ফণী।

Advertisement

‘‘ফণী আর ফিরবে না। শনিবার দুপুরের মধ্যেই সে নিতান্ত কমজোর।’’— কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বিকেলে জানিয়ে দিয়েছেন। তবে কলকাতা-সহ বাংলা যে বড় বিপদ থেকে বেঁচেছে তাতে দ্বিমত নেই আবহবিদের। কলকাতার একটি কলেজের অধ্যক্ষ তথা ভূগোলের অধ্যাপিকা শুক্লা হাজরা বলছিলেন, ‘‘পুরী-ভুবনেশ্বর হয়ে ঘূর্ণিঝড় গতিপথ একটু পাল্টালেই কলকাতার কপালে দুঃখ ছিল।’’

কী ভাবে রক্ষা পেল, কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গ?

শুক্লাদেবীর ব্যাখ্যা, ‘‘গভীর সমুদ্রে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণাবর্ত এ দেশের বুকে বেশ কয়েকটি ‘নিম্নচাপ পকেট’ লক্ষ্য করে এগোচ্ছিল। বর্ষার প্রাক্কালে এমনটা আকছার ঘটে থাকে। এ যাত্রা, ফণী উত্তর-পূর্ব ভারতে একটি নিম্নচাপের আকর্ষণে ছুটছিল। মেঘালয়-অরুণাচল প্রদেশের উপরে ছিল সেই নিম্নচাপটি।’’ শুক্লাদেবী বলছেন, ওই নিম্নচাপটি সামান্য পূর্বে মায়ানমারের উত্তরে অবস্থান করলেই ফণীর গতিপথ কলকাতার উপরে সরতে পারত। তা ছাড়া, সেই ক্ষেত্রে পুরী-ভুবনেশ্বর ছুঁয়ে ফের বঙ্গোপসাগরে ঢুকে জলীয় বাষ্প থেকে তার শক্তি বাড়ানোরও আশঙ্কা ছিল।’’ ঘূর্ণিঝড় হিসেবে ফণীর শক্তি অবশ্য একেবারেই কুলীনগোত্রের। ভারতীয় আবহাওয়া দফতর-সহ কয়েকটি রিপোর্ট খতিয়ে দেখে শুক্লাদেবী বলছেন, ‘‘পুরী-ভুবনেশ্বরে ফণীর ঘূর্ণীর গড় গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার। কখনও তা ২০০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়। এই ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়টির ভুবনেশ্বর ছুঁয়ে মাটিতে জলীয় বাষ্পের অভাবে শক্তিক্ষয় হলেও চলার পথে মারাত্মক বিপর্যয়ের আশঙ্কা ছিলই! পুরী-ভুবনেশ্বর তা ভালই টের পেয়েছে।’’

তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের ক্ষতির মাত্রা কম। কলকাতাতেও কম-বেশি ৪০০০ লোককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ-প্রশাসন। রামনগর-১,২, নন্দকুমার ব্লক তাণ্ডবের কিছুটা স্বাদ পেয়েছে। দুই মেদিনীপুরেই নদী তীরবর্তী এলাকাগুলিতেও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। বসিরহাট, হাসনাবাদ, কাকদ্বীপ, পাথরপ্রতিমাও কিছুটা ভুক্তভোগী। বাঁকুড়া, বর্ধমান, নদিয়া, মুর্শিদাবাদেও কিছুটা চাষের ক্ষতি হয়েছে। সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ত্রাণ চেয়ে

চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানান দুর্গাপুর পূর্বের সিপিএম বিধায়ক সন্তোষ দেব রায়।

তবে আবহাওয়া দফতরের কর্তা সঞ্জীববাবুর আশ্বাস, ‘‘ঘূর্ণিঝড়ের বিপদের সম্ভাবনা আপাতত কেটেছে। বিকেল থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কাল থেকে পরিষ্কার আকাশ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন