সাগরের উপরে তৈরি হয়ে গিয়েছে ঘূর্ণিঝড় মোন্থা। সতর্কতা এ রাজ্যেও। ছবি: পিটিআই।
বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে স্থলভাগের দিকে এগিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় মোন্থা। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের সোমবার দুপুরের বিশেষ বুলেটিন বলছে, শেষ ছ’ঘণ্টায় গতি বৃদ্ধি হয়েছে তার। মঙ্গলবার সকালে ‘প্রবল’ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। রাতেই অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে আছড়ে পড়বে মোন্থা। ওই দিন কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের আট জেলায় দুর্যোগের সতর্কতা রয়েছে। তার মধ্যে উপকূলের দুই জেলায় হতে পারে ভারী বৃষ্টি।
আলিপুর হাওয়া অফিসের সোমবার দুপুরে প্রকাশিত বিশেষ বুলেটিন বলছে, শেষ ছ’ঘণ্টায় দক্ষিণ-পশ্চিম এবং সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে ঘণ্টায় ১৮ কিলোমিটার গতিতে স্থলভাগের দিকে এগোচ্ছে মোন্থা। বুলেটিন অনুসারে চেন্নাই থেকে ৫২০ কিলোমিটার পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্বে, কাকিনাড়া থেকে ৫৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব, পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ৮৫০ কিলোমিটার পশ্চিমে, বিশাখাপত্তনম থেকে ৬০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্ব এবং গোপালপুর থেকে ৭৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে অবস্থান করছে। মঙ্গলবার সকালের মধ্যে ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে’ পরিণত হবে। ‘প্রবল’ আকারেই মঙ্গলবার রাতে অন্ধ্রপ্রদেশের মছলিপত্তনম এবং কাকিনাড়ার কাছে কলিঙ্গপত্তনম উপকূলের মধ্যবর্তী অংশে আছড়ে পড়বে। ঝড়ের সর্বোচ্চ গতি থাকবে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। দমকা হাওয়ার বেগ ছুঁতে পারে ১১০ কিলোমিটারের গণ্ডিও।
মঙ্গলবার, মোন্থার ল্যান্ডফলের দিনে দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েক জেলায় দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পাশাপাশি ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার গতিতে দমকা হাওয়া বইতে পারে। ওই জেলাগুলিতে হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে হতে পারে ভারী (৭ থেকে ১১ সেন্টিমিটার) বৃষ্টি। বুধ এবং বৃহস্পতিবার দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় হালকা বৃষ্টির সঙ্গে দমকা ঝো়ড়ো হাওয়ার সতর্কতা রয়েছে। বুধবার ভারী বৃষ্টি হতে পারে হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বৃহস্পতিবার পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে। শুক্রবারও এই জেলাগুলিতে ঝড়বৃষ্টির জন্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বীরভূম, মুর্শিদাবাদে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
উত্তরবঙ্গের দুই জেলা, দার্জিলিং এবং কালিম্পঙে মঙ্গলবার হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বাকি জেলায় ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। বুধবার থেকে আগামী রবিবার পর্যন্ত উত্তরের আট জেলাতেই ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। বুধবার জলপাইগুড়িতে ঝড়বৃষ্টির জন্য রয়েছে হলুদ সতর্কতা। বৃহস্পতিবার উত্তরের আট জেলাতেই রয়েছে সতর্কতা। এর মধ্যে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, উত্তর দিনাজপুর, মালদহে রয়েছে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস। শুক্রবার উত্তরের আট জেলাতেই হতে পারে ভারী বৃষ্টি। তার মধ্যে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারে ভারী থেকে অতি ভারী (৭ থেকে ২০ সেন্টিমিটার) বৃষ্টির জন্য কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। শনিবারও বৃষ্টি চলবে উত্তরে। রবিবার তা পরিমাণে কমবে।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সাগরে যেতে বারণ করা হয়েছে। এখন যাঁরা সাগরে রয়েছেন, তাঁদের দ্রুত ফিরে আসতে বলা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা রাজ্যে তাপমাত্রার কোনও হেরফের হবে না। তার পরে দু’দিন ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমবে তাপমাত্রা।