(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
১০০ দিনের কাজ নিয়ে হওয়া মামলায় সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেল কেন্দ্র। হাই কোর্টের নির্দেশই বহাল রাখল শীর্ষ আদালত। গত ১ অগস্ট থেকে রাজ্যে ১০০ দিনের কাজ শুরু করতে বলেছিল হাই কোর্ট। উচ্চ আদালতের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই শীর্ষ আদালতে গিয়েছিল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর সরকার। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ কেন্দ্রের আবেদন খারিজ করে দেয়। কেন্দ্রের উদ্দেশে বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চের মন্তব্য, “আপনারা মামলা তুলে নেবেন, না কি আমরা খারিজ করব?” তার পরেই আদালত মামলাটি খারিজ করে দেয়।
সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রের আবেদন খারিজ করে দেওয়ায় হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে ১০০ দিনের কাজের টাকা মঞ্জুর করতে হবে কেন্দ্রকে। তা ছাড়া এর ফলে ১০০ দিনের কাজ নিয়েও বাধা কাটল। চার বছর পরে ফের ১০০ দিনের কাজ শুরু হবে রাজ্যে। এই প্রসঙ্গে রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে কেন্দ্রের সরকার ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছিল। হাই কোর্ট আগেই এই বিষয়ে রায় দিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল কেন্দ্র। আজ মাত্র ৩০ সেকেন্ডে কেন্দ্রের আর্জি খারিজ করে দিয়েছেন বিচারপতিরা। মানুষও দেখল কারা সাধারণ মানুষের টাকা আটকে রেখেছে।”
১০০ দিনের কাজ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর সমাজমাধ্যমে পোস্ট অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিনের কাজের মজুরি দেওয়া হচ্ছে না, এই অভিযোগ তুলে হাই কোর্টে মামলা করেছিল পশ্চিমবঙ্গ খেতমজুর সমিতি। সোমবার ওই সংগঠনের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “কেন্দ্রের সরকার অন্যায় ভাবে এই প্রকল্পের টাকা বন্ধ রেখেছিল। আদালতের নির্দেশের ফলে গরিব মানুষ আবার কাজ পাবেন।”
রাজ্যে গত তিন বছর ধরে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ হয়ে রয়েছে, যা নিয়ে সরব বাংলার শাসকদল তৃণমূল। কিন্তু এই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা কেন্দ্রীয় সরকার আটকে দিয়েছে। অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রের দেওয়া ১০০ দিনের কাজের টাকা নিয়ে বিস্তর দুর্নীতি হয়েছে। প্রকৃত সুবিধাভোগীদের বঞ্চিত করে ওই টাকা অন্যদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে। এই যুক্তিতেই এ রাজ্যে ১০০ দিনের কাজের বরাদ্দ টাকা আটকে রেখেছিল কেন্দ্র।
সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রকাশ্যে আসার পরেই সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লেখেন, “যাঁরা মনে করে বাংলাকে হেনস্থা করা যায়, চুপ করিয়ে দেওয়া যায়, আজকের রায় তাঁদের গালে গণতান্ত্রিক উপায়ে থাপ্পড় মেরেছে। তাঁরা মানুষের ভোটেও হেরেছে, সুপ্রিম কোর্টেও হারল।” প্রসঙ্গত, এর আগে ১০০ দিনের কাজের টাকা নিয়ে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগে দিল্লি গিয়েছিলেন অভিষেক। ‘বঞ্চিত’দের নিয়ে পুজোর আগে রাজধানীতে যান তিনি। তবে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়নি। সেখান থেকে ফিরে কলকাতায় রাজভবনের সামনে ধর্নায় বসেছিলেন তৃণমূলের সাংসদ। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস তখন কলকাতায় ছিলেন না। পাঁচ দিন ধরে অভিষেকের ধর্না চলেছিল। তার পর রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি জমা দিয়েছিলেন তিনি। অভিষেক সেই সময় জানিয়েছিলেন, রাজ্যপাল পদক্ষেপ না করলে আগামী দিনে আরও বড় আন্দোলনের পথে হাঁটবেন তিনি। মমতার কথায় এর পর ধর্না তুলেও নেন তিনি।
গত ১৮ জুন কলকাতা হাই কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায় দাসের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছিল, দুর্নীতি রুখতে রাজ্য সরকারকে যে কোনও শর্ত দিতে পারবে কেন্দ্র। তবে ১০০ দিনের কাজ আবার শুরু করতে হবে। সমগ্র প্রকল্পটিকে বন্ধ করে রাখা যাবে না। কেন্দ্রের উদ্দেশে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম বলেছিলেন, ‘‘এই সংক্রান্ত সমস্ত অভিযোগ ২০২২ সালের আগের। সেই সব নিয়ে আপনারা যা খুশি পদক্ষেপ করুন। কিন্তু এখন প্রকল্পের কাজ চালু করা হোক।’’ কাজ চালু সংক্রান্ত হাই কোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল কেন্দ্র। সোমবার কেন্দ্রের আবেদন খারিজ করে হাই কোর্টের নির্দেশ বহাল রাখার কথা জানিয়ে দিল শীর্ষ আদালত।