আয়লায় ভাঙা বাঁধ মেরামত হয়নি সুন্দরবনে

আয়লার জলোচ্ছ্বাসে নদী ও সমুদ্র বাঁধ তছনছ করে প্রবল ঢেউয়ের তোড় সে দিন ধেয়ে এসেছিল গ্রামের দিক। তলিয়ে গিয়েছিল বিঘের পর বিঘে কৃষিজমি, পুকুর, খাল-বিল। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, মারা গিয়েছিলেন ১৪৯ জন। গৃহহীন প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৯ ০৪:১৭
Share:

এখনও সারানো হয়নি বাঁধ। ফাইল চিত্র।

কোথাও বাঁধ ভাল মতো মেরামত হয়নি। কোথাও কংক্রিটের বাঁধ তৈরির কাজ মাঝপথে থমকে। কোথাও আবার জোড়াতালি দিয়ে সারানো বাঁধ মাঝে মধ্যেই ভাঙে জলের তোড়ে। ২০০৯ সালের ২৫ মে আয়লার ক্ষত এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে কাকদ্বীপের উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। তারই মধ্যে ফণীর আতঙ্ক তাঁদের রাতের ঘুম কেড়েছে।

Advertisement

আয়লার জলোচ্ছ্বাসে নদী ও সমুদ্র বাঁধ তছনছ করে প্রবল ঢেউয়ের তোড় সে দিন ধেয়ে এসেছিল গ্রামের দিক। তলিয়ে গিয়েছিল বিঘের পর বিঘে কৃষিজমি, পুকুর, খাল-বিল। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, মারা গিয়েছিলেন ১৪৯ জন। গৃহহীন প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ। মারা যায় গবাদি পশু, মাছ। মূলত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কাকদ্বীপ মহকুমার নদী ও সমুদ্রবেষ্টিত সাগর, নামখানা ও পাথরপ্রতিমা ব্লক। ক্ষয়ক্ষতির তালিকায় সামনের সারিতে ছিল রায়দিঘির মথুরাপুর ২ ব্লকের বহু এলাকাও।

সাগরের গঙ্গাসাগর পঞ্চায়েতের বেগুয়াখালি গ্রামের কাছে আয়লায় প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার নদী বাঁধ ধুয়ে গিয়েছিল। ধবলাট পঞ্চায়েতে বোটখালি গ্রামের কাছে ১২ কিলোমিটার সমুদ্র বাঁধ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে বেগুয়াখালিতে বাঁধ মেরামতি হলেও বোটখালিতে এখনও মাত্র চার কিলোমিটার বাঁধ তৈরি হয়েছে। ভাঙা বাঁধ দিয়ে কোটালে জোয়ারের জল এলাকায় ঢুকে পড়ে। সাগর ব্লকের ঘোড়ামারা পঞ্চায়েতের খাসিমারা, মন্দিরতলা, রায়পাড়া, বাঘপাড়া ও হাটখোলা গ্রামের কাছে আয়লায় প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার নদী-সমুদ্র বাঁধ ভেঙেছিল। তার কিছুটা অংশে কাজ হলেও বেশির ভাগ অংশে বাঁধ এখনও তৈরি হয়নি বলে এলাকার মানুষের অভিযোগ।

Advertisement

নামখানা ব্লকে সব থেকে ক্ষতি হয়েছিল মৌসুনি পঞ্চায়েত এলাকার নদীবাঁধের। বাগডাঙা, বালিয়াড়া, কুসুমতলা ও বাঁকা পয়েন্টের কাছে মোট ৭ কিলোমিটার নদী ও সমুদ্র বাঁধ জলস্রোতে তছনছ হয়ে যায়। প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা। ওই বাঁধের মধ্যে ৫ কিলোমিটার সারানো হলেও বাকি বাঁধ তৈরির কাজ এখনও হয়নি। ভরা কোটালের জলে এখনও এলাকা প্লাবিত হয়। স্থানীয় বাসিন্দা সামসের আলি, জাহাঙ্গির গাজিরা জানান, বাঁধ মেরামতি না হওয়ায় প্রতি রাতেই তাঁদের আতঙ্কে থাকতে হয়।

পাথরপ্রতিমা ব্লকে নদী ও সমুদ্রবেষ্টিত পঞ্চায়েত বলতে শ্রীধরনগর, জি-প্লট, বনশ্যামনগর, ব্রজবল্লভপুর, পাথরপ্রতিমা, রামগঙ্গা, অচিন্ত্যনগর ও লক্ষ্মীজর্নাদনপুর। ওই সব ক’টি পঞ্চায়েত মিলিয়ে মোট ৪২টি পয়েন্টে নদী-সমুদ্র বাঁধ তছনছ হয়েছিল আয়লায়। কয়েক কিলোমিটার সমুদ্র বাঁধ ভেঙেছিল জি-প্লট এলাকায়। এর মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি বাঁধ নির্মাণ হলেও বাকি বাঁধ বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে বলে অভিযোগ। শিবু মাইতি, অমর জানারা জানালেন, আয়লার পরে কেটে গিয়েছে প্রায় দশ বছর। এখনও বাঁধ মেরামতি না হওয়ায় কোনও কোনও এলাকায় নোনা ঢোকে। চাষ-আবাদ করা যায় না। মথুরাপুর ২ ব্লকের বাসিন্দা ইয়াসিন গাজির অভিযোগ, ‘‘আয়লায় ঠাকুরান নদীর বাঁধ কয়েক কিলোমিটার ভেঙেছিল। তা এখনও তৈরি না হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছি।’’

সুন্দরবন উয়ন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরার অবশ্য দাবি, ‘‘বেশির ভাগ বাঁধ করা হয়ে গিয়েছে। কিছু জায়গায় আটকে আছে জমিজটে। জমি মালিকের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা চলছে।’’

এরই মধ্যে আসতে চলেছে ফণী। প্রকৃতি আবার কী বিধ্বংসী চেহারা নিয়ে হাজির হয়, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সুন্দরবন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন