স্তূপীকৃত: পড়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহৃত পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস। হাওড়া স্টেশন চত্বরে।—ফাইল চিত্র।
রাজ্যে এমনিতেই দূষিত পদার্থের অন্ত নেই। তার উপরে বিপদের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে কোভিড বর্জ্য। সাধারণত, হাসপাতাল, নার্সিংহোম বা প্যাথলজি সেন্টার থেকে চিকিৎসা বর্জ্য তৈরি হয়। কিন্তু কোভিড বর্জ্য তৈরি হচ্ছে গৃহস্থ বাড়ি, শপিং মল বা বেসরকারি অফিস থেকেও। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এই বর্জ্য সাবধানে এবং নির্দিষ্ট উপায়ে নষ্ট না-করলে তা সংক্রমণ বাড়াতে পারে। কিন্তু কত পরিমাণ কোভিড বর্জ্য যথাযথ নিয়ম মেনে নষ্ট করা হচ্ছে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এমনকি, আমজনতার মধ্যে এ নিয়ে কতটা সচেতনতা রয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে অনেকের মনে।
এ নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলাও করেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। সেই মামলায় এ নিয়ে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছে আদালত।আগামিকাল, বুধবার সেই মামলার ফের শুনানি রয়েছে।
কোভিড রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহৃত জিনিসপত্র তো রয়েইছে, তার পাশাপাশি পিপিই, মাস্ক, গ্লাভস ইত্যাদিও নিত্যদিন প্রচুর পরিমাণে বর্জ্য তৈরি করছে। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তীর মতে, শুধু চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীরা নন, বহু সাধারণ মানুষও কিন্তু মাস্ক এবং গ্লাভস ব্যবহার করছেন। কিন্তু মাস্ক বেশির ভাগ পুনর্ব্যবহারযোগ্য হলেও গ্লাভস কিন্তু বেশির ভাগই একবার ব্যবহারযোগ্য। ফলে সেগুলি কী ভাবে কোথায় নষ্ট করা হচ্ছে তা অনেকেরই জানা নেই। এগুলি থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। পিপিই বহু অফিসের সাফাইকর্মীরাও ব্যবহার করছেন, সেগুলি নিয়েও চিন্তা রয়েছে।
২০১৬ সালের কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিতে চিকিৎসা বর্জ্যের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট উপায়ে নষ্ট করার কথা বলা হয়েছে। প্রত্যেকটি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমকে নিজেদের ওয়েবসাইটে উৎপন্ন বর্জ্যের পরিমাণ ও তা নষ্ট করার উপায় জানাতে বলা হয়েছে। কিন্তু এ রাজ্যের কটি হাসপাতাল সেই নির্দেশিকা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে পরিবেশকর্মীদের। পরিবেশবিজ্ঞানের এক গবেষকের বক্তব্য, যারা তথ্য প্রকাশ করছে তাদের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছ্বতার অভাব রয়েছে।
পরিবেশকর্মীদের অনেকেই বলছেন, কলকাতার ক্ষেত্রে পুরসভা কোভিড বর্জ্য সামলানোর দায়িত্ব একটি পেশাদার সংস্থাকে দিয়েছেন। কিন্তু এই বর্জ্য কিন্তু জেলাগুলির প্রত্যন্ত এলাকাতেও তৈরি হচ্ছে। সেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা উন্নত নয়। সেখানে এই বর্জ্য ভাগাড়ে পড়লে সংক্রমণ বাড়তে পারে। বস্তুত, দিল্লি ও মুম্বইয়ে আবর্জনা কুড়িয়ে তা বিক্রি করার পেশায় যুক্ত কয়েক জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ মিলেছিল। সে সময় জানা গিয়েছিল. তাঁরা যে জঞ্জাল থেকে প্লাস্টিক কুড়িয়েছিলেন তার মধ্যে মাস্ক, গ্লাভসের বর্জ্য ছিল। সুভাষবাবু বলছেন, এ রাজ্যেও সাফাইকর্মীদের মধ্যে কোভিড সংক্রমণ ছড়িয়েছে। গোড়া থেকে রাজ্যের এ ব্যাপারে সক্রিয়তার অভাব ছিল বলে তিনি মনে করেন।
রাজ্য পরিবেশ দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, নির্দিষ্ট বিধি মেনেই কোভিড বর্জ্য নষ্ট করতে বলা হয়েছে। বিস্তারিত আদালতে রিপোর্ট আকারে জমা দেওয়া হবে।