Gautam Deb

পাহাড়ে আগুন, রাজ্যের পুরস্কার ফেরত, তরাইতে আটকানো হল গৌতমকে

বৃহস্পতিবার নেপালি কবি ভানু ভক্তের ২০৩ তম জন্মদিন ছিল। সেই উপলক্ষে শিলিগুড়ির অদূরে কার্শিয়াং ব্লকের পানিঘাটা বাজারে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার কথা ছিল রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৭ ১৪:৫৫
Share:

পানিঘাটা থেকে দু’কিলোমিটার দূরে।—নিজস্ব চিত্র।

এমনিতেই উত্তপ্ত ছিল। কিন্তু, বুধবার রাত থেকে একের পর এক ঘটনায় পাহাড়ের উত্তাপ যেন কয়েক গুণ বেড়ে গেল।

Advertisement

সরকারি অফিস, বন বাংলো, স্টেশন, তামাং বোর্ডের চেয়ারম্যানের বাড়িতে আগুন লাগানোর পাশাপাশি ভাঙচুর করা হল একাধিক গাড়িতে। এমনকী, পাহাড় পেরিয়ে গণ্ডগোল নেমে এল তরাইতে। কবি ভানু ভক্তের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আসার পথে রাজ্যের মন্ত্রী গৌতম দেবকেও পড়তে হল বিক্ষোভের মুখে। মোর্চার আন্দোলনের জেরে মূল অনুষ্ঠানস্থলেও যেতে পারেননি তিনি।

বৃহস্পতিবার নেপালি কবি ভানু ভক্তের ২০৩ তম জন্মদিন ছিল। সেই উপলক্ষে শিলিগুড়ির অদূরে কার্শিয়াং ব্লকের পানিঘাটা বাজারে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার কথা ছিল রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের। কিন্তু, মন্ত্রীর গাড়ি সেখানে পৌঁছনোর আগেই রাস্তায় পাথর ফেলে অবরোধ করেন মোর্চা সমর্থকেরা। রাস্তার উপরেই জ্বালিয়ে দেওয়া হয় গাড়ির টায়ার। দূর থেকে চিৎকার করতে থাকেন অশান্ত মোর্চা সমর্থকেরা। পরে ওই পাথর, টায়ার সরিয়ে পানিঘাটা বাজারের দিকে এগোয় মন্ত্রীর গাড়ি।

Advertisement

আরও পড়ুন: ইস্তফায় কি মিরিক কাউন্সিলরেরা

তত ক্ষণে পানিঘাটা বাজারে প্রচুর মোর্চা সমর্থক জড়ো হয়েছেন। পুলিশ তাঁদের ব্যারিকেড দিয়ে আটকেও রাখে। সময় যত গড়িয়েছে, মোর্চা সমর্থকদের ভিড় ততই বাড়তে থাকে। এর মধ্যেই পানিঘাটা বাজার থেকে ৫০০ মিটার আগেই থামিয়ে দিতে হয় মন্ত্রীর গাড়ি। দু’দিকে চা-বাগান আর সামনে পাহাড়। ব্যারিকেডের এ পারে দাঁড়িয়ে গৌতমবাবুর গাড়ি। ও পারে তখন পাশের চা-বাগান থেকে ছোড়া পাথর এসে পড়ছে। বাজারের দিক থেকে চা-বাগান পেরিয়ে কুকরি নিয়ে বেশ কয়েক জন মোর্চা সমর্থককে রাস্তায় উঠে আসতে দেখা যায়। কাজেই পানিঘাটা বাজারে পৌঁছতেই পারেননি গৌতমবাবু। তিনি তার আধ কিলোমিটার আগেই কবির জন্মদিনের অনুষ্ঠান পালন করেন। তাঁকে ঘিরে তখন বেশ কয়েক জন মোর্চা সমর্থক বিক্ষোভ দেখান।

দেখুন ভিডিও:

এর পর আরও আড়াই কিলোমিটার পিছিয়ে এসে চেঙ্গা মোড়ের কাছে নদীর পাড়ে আরও একটি অনুষ্ঠান করেন গৌতমবাবু। তত ক্ষণে পানিঘাটা বাজারে পুলিশের একটি গাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। গণ্ডগোলের আশঙ্কায় মন্ত্রী আরও পিছিয়ে ত্রিহানা চা-বাগানের কাছে রাস্তার উপর আরও একটি অনুষ্ঠান করেন। পরে মোর্চা এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকার তীব্র নিন্দা করেন গৌতমবাবু। তিনি বলেন, “এ রকম ভাবে আন্দোলন হতে পারে না। এটা কোনও আন্দোলন নয়, এটা গুন্ডামি। কোনও সভ্য সমাজের পক্ষে এটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। প্রত্যক্ষ ভাবে এই গুন্ডামিতে মদত দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার।” মোর্চা যদিও গোটা ঘটনার দায় অস্বীকার করেছে।

অন্য দিকে, বুধবার রাত থেকেই দার্জিলিঙের বিভিন্ন জায়গায় গণ্ডগোল পাকায় মোর্চা। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন সরকারি অফিস ও বন বাংলোয়। ওই রাতে দার্জিলিঙে ম্যালের কাছে ট্যুরিস্ট ইনফর্মেশন সেন্টার পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পুড়িয়ে দেওয়া সালেবঙ্গ বিট অফিস এবং সংলগ্ন কোয়ার্টার্সগুলি। আগুন লাগানো হয় তামাং বোর্ডের চেয়ারম্যানের বাড়িতে। কার্শিয়াঙের গয়াবাড়ি স্টেশনেও আগুন লাগানো হয়। এ ছাড়া দার্জিলিঙেরই ধত্রেও বনবাংলো এবং সুকনায় রেভিনিউ ইন্সপেক্টরের অফিসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি তিস্তা বাজারের কাছে সিকিমের প্রায় ১৩টি গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়।

সব মিলিয়ে পাহাড়ের উত্তপ্ত পরিস্থিতি আরও গরম হয়ে উঠল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন