আবার ঘরেই ফিরে গেলেন দেবরাজ

বিদ্রোহ করেই কংগ্রেসে গিয়েছিলেন। কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে বিধাননগর পুরভোটে তৃণমূলের শাসানি-হুমকিকে হারিয়ে জিতে কাউন্সিলরও হয়েছিলেন। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বিধাননগরের সেই বিদ্রোহী দেবরাজ চক্রবর্তী ফিরে গেলেন তাঁর পুরনো ঘরেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:০৩
Share:

সেই দেবরাজ। তৃণমূলের কোপে পড়ে যিনি জেলে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। কংগ্রেসের টিকিটে পুরসভায় জয়ের পর দমদম সেন্ট্রাল জেল থেকে মুক্তি পান। — ফাইল চিত্র

বিদ্রোহ করেই কংগ্রেসে গিয়েছিলেন। কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে বিধাননগর পুরভোটে তৃণমূলের শাসানি-হুমকিকে হারিয়ে জিতে কাউন্সিলরও হয়েছিলেন। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বিধাননগরের সেই বিদ্রোহী দেবরাজ চক্রবর্তী ফিরে গেলেন তাঁর পুরনো ঘরেই। তৃণমূলে ভবনে এসে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে দেবরাজ কংগ্রেস ছেড়ে রবিবার যোগ দিলেন তৃণমূলে। তাঁরই সঙ্গে এ দিন তৃণমূলে যোগ দিলেন প্রাক্তন ফুটবলার রহিম নবি।

Advertisement

কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর প্রাক্তন আপ্তসহায়ক দেবরাজ তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসের প্রার্থী হওয়ায় তাঁর উপর প্রথম থেকেই ‘চাপ’ ছিল শাসক দলের। ভোটের দিন তৃণমূলের উপর হামলার অভিযোগে ভোটের পরের দিনই দেবরাজকে পুলিশ গ্রেফতার করে। মুক্তি পেয়ে পূর্ণেন্দু ‘জেঠু’র গোপন অনেক কথা ফাঁস করে দেওয়ার পাল্টা হুমকি দিয়েছিল দেবরাজ। বিধাননগরের রাজারহাট এলাকার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর হয়ে জেতার পরেই তাকে তৃণমূলে নেওয়ার দড়ি টানাটানিতেও অবশ্য নিজের ‘বিদ্রোহ’ অব্যাহত রেখেই দেবরাজ থেকে যান কংগ্রেসেই।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করতে দেবরাজ চলে গিয়েছিলেন হাজি মহসিন স্কোয়ারে মাদ্রাসা শিক্ষকদের অনশনমঞ্চে। সেখানেই অধীরকে প্রণাম করে তরুণ দেবরাজ আশ্বাস দিয়েছিলেন কোনও ভাবেই তৃণমূলের কাছে তিনি নতজানু হবেন না। কংগ্রেসের সঙ্গেই থাকবেন বলে কথা দিয়েছিলেন অধীরকে। কিন্তু সেই আশ্বাস মিথ্যা হওয়ার খবর টেলিভিশনে দেখে অধীরের বক্তব্য, ‘‘ও আমাদের কাছে এসেছিল।
আমরা ওর কাছে যাইনি। খুব স্নেহ করেছিলাম ছেলেটিকে। রাজনৈতিক সম্মান, মর্যাদা দিয়েছিলাম ওকে। এখন ওর যদি কংগ্রেস করতে ভাল না লাগে, তাতে কংগ্রেসের কিছু যায় আসে না!’’

Advertisement

শাসক দলে যোগ দিলেন রহিম নবিও।ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

বিরোধী কাউন্সিলর হিসেবে বিধাননগর পুরসভায় শাসক দলের সহযোগিতা না পেয়েই দেবরাজ তৃণমূলে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠদের দাবি। যদিও দেবরাজ প্রকাশ্যে সে কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘‘এরকম কোনও অসুবিধা হয়নি। মেয়র তো সকলের মধ্যে সমান ভাবে কাজ ভাগ করে দিয়েছেন!’’ কংগ্রেস হাইকম্যান্ড এখনও কংগ্রেস-সিপিএমের সমঝোতা নিয়ে কোনও ঘোষণা করেনি। কিন্তু তার আগেই জেলায় জেলায় কংগ্রেস-সিপিএম বোঝাপড়ার ইঙ্গিত স্পষ্ট। আর বিধানসভা ভোটের মুখে সেই ইঙ্গিতকে কার্যত দায়ী করে দেবরাজ বলেন, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেসই এখন আসল কংগ্রেস। আমাদের এলাকাতেও সিপিএমের সঙ্গে অশুভ জোট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু যে স্বপ্ন নিয়ে কংগ্রেসে এসেছিলাম, এখন সিপিএমের সঙ্গে সমঝোতা হওয়ায় সে স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছে। এই অশুভ জোটে সহমত হতে পারছি না। তাই তৃণমূলেই ফিরে এলাম।’’ জোট-সম্ভাবনার কারণে দেবরাজের কংগ্রেস-ত্যাগের কথা শুনে অধীরের কটাক্ষ, ‘‘এ সব ওর ছলের কথা!’’ কংগ্রেসের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সভাপতি তাপস মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘বিপদে পড়ে দেবরাজ কংগ্রেসে এসেছিলেন। কংগ্রেস ওঁর বিপদে পাশে ছিল। এখন লোভে তৃণমূলে গিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে বেইমানি করলেন।’’

তবে প্রত্যাশিত ভাবেই দেবরাজ তাঁর পুরনো ঘরে ফিরে আসায় খুশি পূর্ণেন্দুবাবু। তিনি বলেন, ‘‘দেবরাজ ভুল পথে চলে গিয়েছিল। আবার ও ফিরে এসেছে। আমি খুব খুশি।’’ যদিও তৃণমূলের অন্দরের খবর, বিধানসভা ভোটের আগে দেবরাজকে যাতে দলে ফিরিয়ে না নেওয়া হয়, সে জন্য তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে পূর্ণেন্দুবাবু এবং সাংসদ দোলা সেন আবেদন করেছিলেন। তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব অবশ্য সেই আবেদনে একমত হননি। তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন হলেও ‘জেঠু’র সঙ্গে তাঁর দূরত্ব যে রয়েই গিয়েছে, তার ইঙ্গিত দিয়ে দেবরাজও এ দিন বলেছেন, ‘‘আমার ফিরে আসা নিয়ে কথা হয়নি ওঁর সঙ্গে। যোগাযোগ করব। উনি আমার এলাকা (রাজারহাট-গোপালপুর বিধানসভা এলাকার) চেয়ারম্যান। দল যে ভাবে নির্দেশ দেবে, মেনে চলব।’’ দেবরাজ আসায় বিধাননগর পুরসভায় এখন তৃণমূলের কাউন্সিলর বেড়ে ৩৮ হলে বলে পার্থবাবু জানান।

তৃণমূলে যোগ দিয়ে প্রাক্তন ফুটবলার রহিম বলেন, ‘‘দিদির কাজ দেখে আমি অনুপ্রাণিত। মানুষের জন্য ভাল কাজ করার মঞ্চ তৃণমূল। সে জন্যই যোগ দিলাম তৃণমূলে।’’ হুগলির পাণ্ডুয়া-নিবাসী এই প্রাক্তন ফুটবলারকে বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করার ভাবনা রয়েছে তৃণমূলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন