benachiti

সুটকেসে তরুণীর দেহ, দুর্গাপুরে গ্রেফতার সস্ত্রীক ব্যাঙ্ক ম্যানেজার

দুর্গাপুরের বেনাচিতির ফ্ল্যাটে বৃহস্পতিবার উদ্ধার হল বাক্সে ভরা পচাগলা দেহ। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা এক ব্যাঙ্ক ম্যানেজার এবং তাঁর স্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৪:২৫
Share:

শিল্পী অগ্রবাল। —নিজস্ব চিত্র।

ফের সেই দুর্গাপুর। ফের এক ব্যাঙ্ক ম্যানেজার। ফের বাক্সবন্দি তরুণীর দেহ।

Advertisement

আড়াই বছর আগে প্রেমিকা এবং তাঁর শিশুকন্যাকে খুনের পর দেহ দু’টি টুকরো টুকরো করে সুটকেসে ভরে গঙ্গায় ফেলতে গিয়ে ধরা পড়ে গিয়েছিল সমরেশ সরকার নামের এক ব্যাঙ্ক ম্যানেজার। সেই স্মৃতি ফের উসকে দিল দুর্গাপুরের বেনাচিতির ফ্ল্যাটে বৃহস্পতিবার উদ্ধার হওয়া বাক্সে ভরা পচাগলা দেহ। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা এক ব্যাঙ্ক ম্যানেজার এবং তাঁর স্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এ দিন সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ দুর্গাপুর থানায় একটি ফোন আসে। এক মহিলা কণ্ঠ ফোনে জানায়, তাদের ফ্ল্যাটে লিফটের উল্টো দিকে একটি বেওয়ারিশ সুটকেস পড়ে রয়েছে। খবর পেয়েই বেনাচিতির রূপালি অ্যাপার্টমেন্টে তড়িঘড়ি পৌঁছয় পুলিশ। লিফটের সামনের ছোট ঘরের ভিতর থেকে উদ্ধার হওয়া ওই সুটকেস খুলে তারা এক তরুণীর পচাগলা নগ্ন দেহ উদ্ধার করে। এর পর সামনের ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতেই তাঁদের কথায় অসঙ্গতি খুঁজে পায় পুলিশ। ব্যাঙ্ক ম্যানেজার ওই বাসিন্দা এবং তাঁর স্ত্রীকে প্রথমে আটক করা হয়। পরে এ দিন বিকালে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

Advertisement

স্টেট ব্যাঙ্কের মেজিয়া শাখার ওই ম্যানেজারের নাম রাজীব কুমার। তিনি ১২ তলার রূপালি অ্যাপার্টমেন্টের একটি ফ্ল্যাটে সস্ত্রীক ভাড়া থাকেন। স্ত্রী মনীষা স্টেট ব্যাঙ্কের ফুলঝোরা শাখার সহকারী ম্যানেজার। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, ওই তরুণীকে খুন করে সুটকেস বন্দি করা হয়েছিল। ঠিক কবে ওই তরুণী মারা গিয়েছেন, ময়নাতদন্তের পরেই তা জানা যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মৃত তরুণীর নাম শিল্পা অগ্রবাল (২৮)। তাঁর বাড়ি বাঁকুড়ার মেজিয়ায়। রাজীব যে শাখার ম্যানেজার, সেখানেই ‘ব্যাঙ্ক বন্ধু’ হিসাবে কাজ করতেন শিল্পা। সেই সূত্রেই দু’জনের পরিচয়। গত শুক্রবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। তবে শনিবার সন্ধ্যা সওয়া ৭টা নাগাদ শেষ বার মোবাইলে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। তখন জানান, কিছু ক্ষণের মধ্যেই বাড়ি ফিরবেন। তার পর থেকে তাঁর সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ হয়নি পরিবারের।

কী ভাবে খুন হলেন শিল্পা? রাজীব এবং তাঁর স্ত্রী-ই কি এই খুনের সঙ্গে জড়িত? যদি অন্য কেউ খুন করে থাকে, তবে রাজীবের ফ্ল্যাটে সুটকেসবন্দি দেহ এল কী ভাবে? এ সবের হদিশ পেতে আপাতত রাজীব আর মনীষাকে জেরা করছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, প্রতি শনিবার অফিস শেষে রাঁচী চলে যান মনীষা। সেখানে তাঁর বাবা-মায়ের কাছে তাঁদের চার বছরের সন্তান থাকে। সোমবার সেখান থেকেই সরাসরি ব্যাঙ্কে আসতেন। গত ১০ তারিখ থেকেই তাই মনীষা ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন না। ফিরেছেন সোমবার অর্থাৎ ১২ ফেব্রুয়ারি। সেই সময়েই কী শিল্পাকে ফ্ল্যাটে ডেকে এনে খুন করেছেন রাজীব? কিন্তু, কেন?

আরও পড়ুন

শিউরে দেওয়া আটটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড

পুলিশ জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত খুনের কোনও মোটিফ পাওয়া যায়নি। তবে, শিল্পার এক জামাইবাবু এ দিন জানিয়েছেন, শেয়ার বাজারে খাটানোর নাম করে কিছু দিন আগে রাজীব ওই তরুণীর কাছ থেকে লাখখানেক টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু, এর পর সেই টাকা বার বার চেয়েও ফেরত পাননি শিল্পা। ওই আত্মীয়ের দাবি, টাকাপয়সা নিয়ে গণ্ডগোলের জেরেই শিল্পাকে খুন করেছেন রাজীব। ঘটনায় সাহায্য করেছেন মনীষা।

তবে, পুলিশ এই দাবি নিয়ে খুব একটা সহমত নয়। তাদের মতে, রাজীব এবং তাঁর স্ত্রী স্টেট ব্যাঙ্কের উঁচু পদে কাজ করেন। বেশ ভাল অঙ্কের বেতনও পান তাঁরা। সেই নিরিখে এক লাখ টাকার জন্য এমন ভাবে খুন করাটা কি খুব স্বাভাবিক? তবে পুলিশেরই অন্য একটা অংশের দাবি, সামান্য টাকা নিয়েও বিবাদের জেরে খুন হওয়ার উদাহরণ অনেক রয়েছে। কাজেই বিষয়টা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়ার নয়।

আরও পড়ুন
সুটকেস খুলতেই দেখা গেল তরুণীর মুন্ডুহীন দেহ!

শিল্পার এক দাদা এ দিন দাবি করেছেন, তাঁর বোনকে ধর্ষণের পর খুন করেছেন ওই ব্যাঙ্ক ম্যানেজার। তদন্তকারীদের একটা অংশ অবশ্য জানিয়েছেন, শিল্পার গলায় ফাঁসের চিহ্ন ছিল। তবে, ধর্ষণের বিষয়টি নিয়ে তাঁরা কোনও মন্তব্য করেননি। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, শিল্পাকে খুন করে সুটকেসে দেহ ভরে তা পাচার করার ছক কষা হয়েছিল। যে হেতু ওই ফ্ল্যাটে অনেকগুলি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে, তাই আর শেষ মুহূর্তে সেই সাহস দেখাতে পারেননি ওই দম্পতি।

বছর আড়াই আগে এই দুর্গাপুরের বিধাননগরের বাসিন্দা সুচেতা চক্রবর্তী এবং তাঁর শিশুকন্যা দীপাঞ্জনাকে খুন করে সেই দেহ টুকরো টুকরো করে চারটে সুটকেসে ভরেছিলেন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের তৎকালীন ম্যানেজার সমরেশ সরকার। তার পর সেই সুটকেসগুলি মাঝ গঙ্গায় ফেলার সময়ই শেওড়াফুলিতে স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ে যান সমরেশ। এখন তিনি জেলবন্দি।

তবে শিল্পাকে কেন এবং কী ভাবে খুন হতে হল? তদন্তে সবটাই খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন