প্রহরা: মাংস কাটার জায়গা সিল করার পরে সেখানে মোতায়েন পুলিশ। বুধবার, দেগঙ্গায়। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়।
দেগঙ্গায় ভাগাড়ের মাংসের হদিস মেলার পরে বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়ল পুলিশ।
সোমবার সন্ধ্যার পরে বারাসত ও দেগঙ্গা সীমানা এলাকার সোহায়-শ্বেতপুর পঞ্চায়েতের মণ্ডলগাঁতিতে মৃত পশুর মাংস বোঝাই ছোট মালবাহী গাড়ি আটক করে জনতা। পুলিশ এসে গাড়িটি আটক করে। গ্রেফতার করা হয় সফিয়ার রহমান নামে এক কসাইকে।
বুধবার পুলিশ ছাড়াও মণ্ডলগাঁতির ওই জায়গাটি পরিদর্শনে যান উত্তর ২৪ পরগনার জেলা শাসক অন্তরা আচার্য। এ ছাড়াও গিয়েছিলেন প্রাণীসম্পদ ও মৎস্য দফতরের আধিকারিকেরা।
ছাড়পত্রে নেই পঞ্চায়েত প্রধানের সই (চিহ্নিত)। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়
এক সঙ্গে প্রশাসনের এত জনকে দেখে এ দিন ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি স্থানীয়েরাও। জেলা শাসকের সামনেই পুলিশের উদ্দেশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁরা জানান, বারবার বলা সত্ত্বেও ওই মৃত পশুর মাংস পাচারের ব্যবসা বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়নি পুলিশ। এমনকি জেলা প্রশাসনও এ নিয়ে নিরুত্তাপ ছিল বলেই এ দিন জানান এলাকার ক্ষুব্ধ মানুষজন। জেলা শাসক অন্তরাদেবী অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা গোটা জেলায় মাংস কাটার বিষয়ে ডেটা বেস তৈরি করছি। কারা কোথায় কী মাংস কাটছেন তার উপরে নজরদারি করা হবে।’’ বর্তমানে মাংস কাটার কিছু কিছু ট্রে়ড লাইসেন্স দেওয়া হয় জেলা থেকেই।তবে জেলা শাসকের এই আশ্বাসে এখনই ভুলতে রাজি নন মণ্ডলগাঁতির মানুষ।
সোমবার রাতের ওই ঘটনার পরেই পুলিশ সিল করে দেয় মৃত পশুর ওই ‘জবাইখানা’। মঙ্গলবার থেকেই সেখানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বুধবারও সেখানে প্রচুর পুলিশ ছিল। প্রশাসনের কর্তারা ভিতরে ঢুকলেও সাধারণ লোকজন বাইরে থেকেই নিজেদের ক্ষোভ জানান। বিক্ষোভকারীদের বলতে শোনা যায়, ‘‘এত দিন দেখিনি কেন? পুলিশ কি ঘুমিয়ে ছিল? এখন জেগেছে।’’ পুলিশের সামনেই এলাকার মহিলারা চিৎকার করে বলেন, ‘‘এক বছর আগে থেকে এখানে ভাগাড়ের পচা মাংস পাচার বন্ধের জন্য পুলিশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে আবেদন করেছিলাম। তখন কাউকে দেখা যায়নি। আজ যখন সত্যিটা প্রকাশ পেল তখন নিজেদের পিঠ বাঁচাতে তৎপরতা দেখাচ্ছে প্রশাসন।’’
উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘ঘটনার খবর পাওয়ার পরেই পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এক জনকে গ্রেফতারও হয়েছে।’’ ধৃত সফিয়ারকে বুধবার বারাসত জেলা আদালতে পাঠানো হলে বিচারক তাকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
সোমবার ওই মৃত পশুর মাংসের গাড়ি ধরা পড়ার পরে পুলিশ জানতে পেরেছে, মণ্ডলগাঁতির ওই নির্জন জায়গা থেকে মৃত পশুর মাংস কেটে প্যাকেট করে জেলার বিভিন্ন জায়গা তো বটেই, এমনকি কলকাতায়ও পাঠানো হত। স্থানীয় মানুষকে বোঝানো হত, হাইব্রিড মাগুর মাছের খাবারের জন্য ওই মাংস কাটা হচ্ছে।
সেই তথ্য কানে আসতেই এ দিন ঘটনাস্থলে পৌঁছয় জেলা প্রাণিসম্পদ দফতর, মৎস্য দফতরের অধিকর্তারা। তালাবন্ধ মাংস কাটার জায়গার তালা খুলে ভিতরে ঢুকে তাঁরা সবকিছু লিপিবদ্ধ করেন। প্রাণিসম্পদ দফতরের উপ অধিকর্তা তপন সাধুখাঁ বলেন, ‘‘ভয়ঙ্কর ঘটনা। যা দেখলাম, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। সেখান থেকে যা নির্দেশ আসবে, পরবর্তীতে সে ভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ হাইব্রিড মাছের খাবার তৈরির আড়ালে আসলে যে ভাগাড়ের মাংসের কারবার চলছিল তার জন্যেও উপরমহলে রিপোর্ট দেওয়া হবে বলে জানান ওই দুই দফতরের আধিকারিকেরা।
এ দিকে হাইব্রিড মাগুর মাছের খাবারের জন্য ওই মাংস কাটা হচ্ছে বলে পাচারকারীরা স্থানীয় এলাকায় যে দাবি করেছিল, তেমন একটি ছাড়পত্রের কাগজও উদ্ধার হয়েছে। যে ছাড়পত্রটিতে সোহায়-শ্বেতপুর পঞ্চায়েতের নামও রয়েছে। তবে সেটিতে প্রধান কিংবা কোনও পঞ্চায়েত কর্তার কোনও সই নেই। যদিও পঞ্চায়েতের তরফে জানানো হয়েছে যে, ওই সংক্রান্ত ফাইলে সই রয়েছে।