প্রতীকী ছবি।
পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের জেরে বাজারে নগদের অভাব। সেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টায় আজ মাসে ১৮ হাজার টাকার কম বেতনের ক্ষেত্রেও চেক বা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বেতন দেওয়ার অনুমতি দিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। এ জন্য কেন্দ্র ৮০ বছরের পুরনো বেতন প্রদান আইন বা ‘পেমেন্ট অব ওয়েজেস অ্যাক্ট’-এ সংশোধন করতে অর্ডিন্যান্স আনতে চলেছে। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এই সিদ্ধান্তে সিলমোহর বসিয়েছে।
কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী বন্দারু দত্তাত্রেয় যুক্তি দিয়েছেন— এর ফলে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও শিল্প সংস্থাগুলির সুবিধা হবে। সুরাহা হবে শ্রমিকদেরও। কারণ বাজারে নগদের অভাব বলে শিল্প সংস্থাগুলিকে বেতন দিতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছিল। উল্টো দিকে শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, এর ফলে শ্রমিকদের সমস্যা আরও বাড়বে। কারণ বাজারে নগদের জোগান নেই। ব্যাঙ্ক-এটিএমে গিয়ে টাকা মিলছে না। চেক বা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পেলে শ্রমিকদের এ বার ব্যাঙ্কে গিয়ে লাইন দিতে হবে।
এত দিন ১৮ হাজার টাকার কম বেতন চেকে বা সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দিতে গেলে শিল্প সংস্থাগুলিকে কর্মীদের অনুমতি নিতে হতো। আইন সংশোধন করে অর্ডিন্যান্স জারি হলে, এ বার থেকে তার আর দরকার পড়বে না। নগদের অভাবে শ্রমিকদের সমস্যার প্রশ্নে শ্রমমন্ত্রীর জবাব, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করবে। তত দিন পর্যন্ত নগদে বেতন দেওয়ার বিকল্পও হাতে থাকছে।
তা হলে তাড়াহুড়ো করে অর্ডিন্যান্স জারি কেন? শ্রমমন্ত্রীর জবাব, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে কম নগদের অর্থনীতির উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। আইন সংশোধনের জন্য লোকসভায় বিলও পেশ হয়েছিল। কিন্তু হট্টগোলের জেরে তা পাশ হয়নি। সেই কারণেই অর্ডিন্যান্সের পথ নিতে হচ্ছে।’’ অর্ডিন্যান্স জারি হলে তা সরকারি, বেসরকারি সব ক্ষেত্রের জন্যই প্রযোজ্য হবে। শ্রমমন্ত্রীর কথায়, শ্রমিক সংগঠনগুলিই এ বিষয়ে দাবি জানিয়ে আসছিল। কারণ এর মাধ্যমে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের বঞ্চনা করা হয়। কাগজে-কলমে যে বেতন দেখানো হয়, নগদে তা দেওয়া হয় না। পুরো লেনদেন চেকের মাধ্যমে সেই ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ মিলবে না। সিটু-র সাধারণ সম্পাদক তপন সেনের পাল্টা যুক্তি, ‘‘এই পরিস্থিতিতে চেকে বেতন আমরা চাইনি। শ্রমমন্ত্রী অসত্য কথা বলছেন। যেখানে ব্যাঙ্কের শাখা বা এটিএম নেই, সেখানকার শ্রমিকেরা কী করবেন? যাঁরা ভিন রাজ্যে কাজ করতে যান, তাঁরাই চেক ভাঙাবেন কী করে?’’ অর্ডিন্যান্স জারি হলেও কেন্দ্রকে ছ’মাসের মধ্যে সংসদের সিলমোহর আদায় করতে হবে। এআইটিইউসি নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘সংসদে আমরা এর বিরোধিতা করব।’’