Dengue

গাঁ উজাড় করে মৃত্যু রোজগেরের, আঁধারে কল্পনারা

জ্বর-ডেঙ্গিতে উজাড় হয়ে যাওয়া দেগঙ্গার অন্তত ১৫টি ঘরেই এখন আঁধার। বাড়ির একমাত্র রোজগেরে মানুষেরই মৃত্যু হয়েছে জ্বর বা ডেঙ্গিতে। কী চলবে পরিবারের আগামী দিনগুলো?

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৩৭
Share:

শোকার্ত: দেগঙ্গায় মৃত মহম্মদ সেলিমের পরিবার। নিজস্ব চিত্র

বাঁচার খড়কুটো খুঁজতে গিয়ে ওঁরা শোক ভুলেছেন।

Advertisement

সকাল থেকে হাপিত্যেশ করে বসে থাকছেন কল্পনা বিবি। কখন দু’মুঠো চাল-ডাল আনবেন পড়শিরা! তবে খাওয়া জুটবে।

ঘুমের মধ্যে খিদেয় কেঁদে উঠছে দেড় বছরের জান্নাতুন। মা কল্পনার মাথায় হাত! দুধ কিনবেন কী ভাবে? ঘরে যে কানাকড়িও নেই!

Advertisement

একবেলা খেয়ে দিন কাটছে রোজিনা বিবির! দু’বেলা ভাত-রুটি কবে মিলবে, জানা নেই!

এই দুর্দশা কোনও এক, দুই বা তিন জন মহিলার নয়। জ্বর-ডেঙ্গিতে উজাড় হয়ে যাওয়া দেগঙ্গার অন্তত ১৫টি ঘরেই এখন আঁধার। বাড়ির একমাত্র রোজগেরে মানুষেরই মৃত্যু হয়েছে জ্বর বা ডেঙ্গিতে। কী চলবে পরিবারের আগামী দিনগুলো? সেই চিন্তাতেই শোক ভুলছেন এঁরা। কপাল চাপরাচ্ছেন সরকারি কোনও সাহায্য মিলছে না বলে।

আরও পড়ুন: রক্ত খাচ্ছে মশা, বামফ্রন্ট রক্তকরবীতে

দেগঙ্গার আমুলিয়া হাটের কল্পনা বিবির কথাই ধরা যাক। তাঁর স্বামী মহম্মদ সেলিম কাপড় সেলাইয়ের কাজ করতেন। মাসখানেক আগে ধার করে কোনও মতে একচিলতে ঘর বানান। সেই ধার শোধের আগেই গত ১৭ অক্টোবর জ্বরে মারা যান সেলিম। পাড়ার লোকেরা চাঁদা তুলে তাঁর সৎকার করেন। তার পর থেকে দেড় বছরের মেয়ে জান্নাতুনকে নিয়ে পড়শিদের দেওয়া খিচুড়ির ভরসাতেই দিন কাটছে তাঁর। কল্পনার শাশুড়ি জাহানারা বিবির খেদ, ‘‘ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে কয়েক হাজার টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। ছেলেকে বাঁচাতে পারলাম না। ঘরে কানাকড়িও নেই। বউমাকে বাপেরবাড়িতেও পাঠাতে পারছি না। কী ভাবে যে দিন কাটছে, আমরাই জানি। লোকের কাছে হাত পাতছি।’’

জ্বর-ডেঙ্গি রোধে প্রশাসনের উদাসীনতা এবং চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে গ্রামবাসীদের বিস্তর অভিযোগ ছিলই। এলাকায় মৃত্যু-মিছিল এবং স্বজনহারা পরিবারগুলির দুর্দশা দেখে সেই অভিযোগই এখন পাল্টে গিয়েছে ক্ষোভে। গ্রামবাসীরা বলছেন, এ রাজ্যে মদ খেয়ে মারা গেলে সরকার ক্ষতিপূরণ দেয়। কিন্তু এই বিপর্যয়ে ক্ষতিপূরণ নিয়ে সরকারের মুখে রা নেই। পরিবারগুলো চলবে কী করে?

সত্যিই আর চালাতে পারছেন না নীলিমা বিবি। জ্বর-ডেঙ্গির প্রকোপ শুরু হওয়ার সময় পণ্ডিতপোলের পল্লি চিকিৎসক, নীলিমার স্বামী জব্বার লস্কর দিনরাত এক করে দিয়েছিলেন রোগীদের চিকিৎসায়। সেই তিনিই কিছুদিন আগে জ্বরে মারা যান কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। বেলেঘাটা আইডি, নীলরতন সরকার হাসপাতাল— কোথাও আইসিসিইউ-তে জায়গা হয়নি। নীলিমার ক্ষোভ, ‘‘মানুষের সেবা করতে গিয়ে নিজে অসুখে পড়ল। নিজে তো সরকারি চিকিৎসাটাও পেল না। এ বার কে দেখবে ছেলেমেয়েদের? পড়াশোনা, খাওয়া খরচ কে জোগাবে?’’

প্রতিদিনের সংসার চালানোটাই দায় হয়েছে ওই সব স্বজনহারাদের। তার উপরে রয়েছে জ্বর-ডেঙ্গির আতঙ্কও। ফের রোগ হানা দিলে চিকিৎসার খরচ মিলবে কী ভাবে? জ্বরে মৃত কে এম চাঁদপুর গ্রামের আবদুল্লা সাহাজির পরিবার চলছে পড়শিদের চাঁদায়। তাঁর পরিবারের প্রশ্ন, ‘‘এ ভাবে আর কতদিন?’’

একই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে শ্বেতপুরে, খাঁপুরে, চাঁপাতলায়, মারাকপুরে...।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement