অযথা ডেঙ্গি-আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে, ক্ষিপ্ত মমতা

আক্রান্তের সংখ্যা রোজই বাড়ছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে আসছে প্রাণহানির খবরও। তবু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, ডেঙ্গি নিয়ে রাজ্যে অযথা আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। সরাসরি কারও নাম করেননি। তবে সোমবার বিধানসভায় ডেঙ্গি নিয়ে আলোচনায় তিনি বলেন, ‘‘অযথা প্যানিক ছড়িয়ে দিচ্ছে। পাবলিককে বলে দিচ্ছে, যাও ভর্তি হও। টেস্ট করো। মানুষের পকেট লুটে নিচ্ছে!’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৬ ০৪:১৫
Share:

আক্রান্তের সংখ্যা রোজই বাড়ছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে আসছে প্রাণহানির খবরও।

Advertisement

তবু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, ডেঙ্গি নিয়ে রাজ্যে অযথা আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। সরাসরি কারও নাম করেননি। তবে সোমবার বিধানসভায় ডেঙ্গি নিয়ে আলোচনায় তিনি বলেন, ‘‘অযথা প্যানিক ছড়িয়ে দিচ্ছে। পাবলিককে বলে দিচ্ছে, যাও ভর্তি হও। টেস্ট করো। মানুষের পকেট লুটে নিচ্ছে!’’

মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই মন্তব্য করলেও স্বাস্থ্যকর্তারা স্বীকার করে নিচ্ছেন, পরিস্থিতি রীতিমতো জটিল হয়ে পড়েছে। এতটাই জটিল যে, রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্ত বা মৃতের নির্দিষ্ট সংখ্যা নিয়েও মুখে কুলুপ এঁটেছেন তাঁরা। শুধু জানাচ্ছেন, আক্রান্তের সংখ্যা ছ’হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংখ্যাটা। মৃত্যুও হচ্ছে। এ দিনই কলকাতায় জ্বরে তিন জনের মৃত্যুর খবর পৌঁছেছে স্বাস্থ্য ভবনে। ডেঙ্গির সমস্ত উপসর্গ ছিল তিন জনেরই।

Advertisement

আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগ করলেও মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, সরকার কোনও অবহেলা করছে না। সব রকম প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করছে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনও গাফিলতি বরদাস্ত করা হচ্ছে না, হবে না বলেও হুঁশিয়ার করে দেন তিনি। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সরকার একা সব পারে না। বিভিন্ন ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে বলব, আপনারাও সচেতনতা প্রসারে এগিয়ে আসুন।’’

রবিবার দুপুর থেকে সোমবার দুপুরের মধ্যে কলকাতায় জ্বরে যে-তিন জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে দু’ভাই বিবেক সাউ (১২) ও সজ্জন সাউ (৮)। হরিশ মুখার্জি রোডে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির অদূরে বিজয় বসু রোডের বাসিন্দা ছিল তারা। তৃতীয় জনের বাড়ি খিদিরপুরের গঙ্গাধর ব্যানার্জি রোডে। সকলেরই ডেঙ্গির উপসর্গ ছিল। রক্তপরীক্ষার আগেই দু’ভাইয়ের মৃত্যু হয়। তৃতীয় জনের রক্ত কয়েক দিন আগে পরীক্ষা করা হয়েছিল ঠিকই, তবে ডেঙ্গি ধরা পড়েনি। তিনটি ক্ষেত্রেই চিকিৎসকেরা জ্বরের উৎস যথাযথ ভাবে চিহ্নিত করতে পারেননি। তবে তাঁদের একটা বড় অংশই বলছেন, ডেঙ্গির ক্ষেত্রে অনেক সময়েই প্রথম বারের রক্তপরীক্ষায় কিছু ধরা পড়ে না।

১২ বছরের বিবেক এবং আট বছরের সজ্জন এক সপ্তাহ ধরে জ্বরে ভুগছিল। রবিবার সকালে একবালপুরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয় দু’ভাইকে। দুপুরেই মারা যায় সজ্জন। দ্রুত অবনতি হচ্ছিল বিবেকেরও। বাড়ির লোকেরা তাকে নিয়ে যান এসএসকেএম হাসপাতালে। এ দিন সকালে সেখানেই মৃত্যু হয় তার। দু’ভাইয়ের কারও ডেথ সার্টিফিকেটেই ডেঙ্গির কথা লেখা হয়নি। সজ্জনের ক্ষেত্রে ডেথ সার্টিফিকেটে অজানা জ্বরের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। বিবেকের মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখা হয়েছে ‘সেপসিস এবং ইন্ট্রাভাস্কুলার কোয়াগুলেশন’। অর্থাৎ তার রক্তনালির মধ্যে রক্ত জমাট বেঁধে যাচ্ছিল। এই সব ক্ষেত্রে আক্রান্তের বিভিন্ন অঙ্গ দ্রুত বিকল হতে শুরু করে, ইদানীং ডেঙ্গির ক্ষেত্রে যা প্রায়ই হচ্ছে বলে চিকিৎসকেরা জানান।

খিদিরপুরের গঙ্গাধর ব্যানার্জি লেনের বাসিন্দা মন্টু সাউ (২৫) চার দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। এ দিন একবালপুরের এক নার্সিংহোমে তাঁর মৃত্যু হয়। এ ক্ষেত্রেও নার্সিংহোম-কর্তৃপক্ষ ডেথ সার্টিফিকেটে অজানা জ্বরের কথাই লিখেছেন। মন্টুবাবুর দাদা বিনোদ সাউয়ের অভিযোগ, তাঁরা অসু্স্থ ভাইকে নিয়ে শহরের একাধিক সরকারি হাসপাতালে ঘুরেছেন। কিন্তু সব জায়গাতেই তাঁদের প্রত্যাখ্যান করা হয়। কোনও সরকারি হাসপাতালে ঠাঁই না-পেয়ে শেষ পর্যন্ত তাঁরা ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করেন মন্টুবাবুকে।

ওই তিন জনের মধ্যে কারও মৃত্যুই ডেঙ্গিতে হয়নি বলে পুরসভার মেয়র-পারিষদ অতীন ঘোষের দাবি। তা হলে কি একে ‘অজানা জ্বর’ বলা হবে? অতীনবাবু এই ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী এ দিন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান। পরে এই নিয়ে প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, ‘‘অজানা জ্বর? সেটা আবার কী বস্তু? আমার কিছু জানা নেই।’’

মুখ্যমন্ত্রী এ দিন সরকারি নির্দেশিকা মেনে সব রকম জ্বরের চিকিৎসার উপরে জোর দিয়েছেন। সরকার নির্দেশিত পথে চলার পক্ষে সওয়াল করেছেন মেয়র-পারিষদ অতীনবাবুও। যিনি বিবেক-সজ্জনের চিকিৎসা করেছেন, তাঁর চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মেয়র-পারিষদ। তাঁর দাবি, ‘‘জ্বরের পরে রক্ত পরীক্ষা না-করেই ওই দু’জনকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছিল। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র নির্দেশিকার বিরোধী।’’ জ্বর হলেই তৎক্ষণাৎ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপের জন্য পুরসভার পক্ষ থেকে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।

জেলাতেও ডেঙ্গির প্রকোপ অব্যাহত। মুর্শিদাবাদের ফরাক্কার শিবনগর ও সাঁকোপাড়ায় গত এক সপ্তাহে ২৮ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। রবিবার সন্ধ্যায় রমেশ ঘোষ (১৮) নামে তেহট্টের এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়। হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ জানান, ডেঙ্গিতেই মারা গিয়েছেন রমেশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন