রবিবার পর্যন্ত বৃষ্টির পূর্বাভাস, নাডার দৌলতে কার্তিকেও নাছোড় শ্রাবণ

ক্যালেন্ডারে কার্তিক। কিন্তু আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা যেন শ্রাবণকে হার মানাচ্ছে! বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় এখনও দানা বাঁধেনি। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত গভীর নিম্নচাপ হিসেবেই রয়েছে সে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৫০
Share:

বৃষ্টিতে নাজেহাল। বৃহস্পতিবার ধর্মতলায় সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।

ক্যালেন্ডারে কার্তিক। কিন্তু আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা যেন শ্রাবণকে হার মানাচ্ছে!

Advertisement

বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় এখনও দানা বাঁধেনি। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত গভীর নিম্নচাপ হিসেবেই রয়েছে সে। কিন্তু তার আগমনী বার্তাতেই বৃহস্পতিবার উড়ে গিয়েছে হেমন্তের আবহাওয়া। আকাশে শুধু মেঘই ছড়ায়নি, দফায় দফায় বৃষ্টিও হয়েছে কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের বহু জায়গায়। জোরালো বৃষ্টিতে কলকাতার বেশ কিছু রাস্তায় জলও জমে গিয়েছিল।

প্রশ্ন উঠেছে— ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার আগেই যদি এমন পরিস্থিতি হয়, তা হলে সেটা তৈরি হলে কী হবে? আর সেই ঘূর্ণিঝড় যদি এ রাজ্যের দিকেই ধেয়ে আসে?

Advertisement

হাওয়া অফিস কিন্তু তেমন আশঙ্কা করছে না। দিল্লির মৌসম ভবনের আবহবিজ্ঞানীরা জানান, নিম্নচাপটি আজ, শুক্রবার ভোরেই অতিগভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। রাতে আরও শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিতে পারে সেটি। বঙ্গোপসাগর, আরব সাগর এবং আন্দামান সাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলে এই এলাকার আটটি দেশ পালা করে তাদের নাম দেয়। সেই রীতি মেনে ওমান নতুন এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়েছে ‘না়ডা’— আরবি ভাষায় যার অর্থ শিশিরকণা।

তবে শিশিরকণা রাজ্যে ঢুকবে না বলেই মনে করছেন আবহবিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, গতিপথের দিক থেকে পূর্বসূরি ‘রোয়ানু’র অনুগামী হতে পারে ‘নাডা’। অর্থাৎ ওড়িশা-বাংলা উপকূলের কাছ থেকে বাঁক নিয়ে সোজা বাংলাদেশের দিকে রওনা হবে সে। রবিবার চট্টগ্রাম উপকূলের কাছে স্থলভূমিতে ‘নাডা’ আছড়ে পড়তে পারে বলে মনে করছেন আবহবিদেরা। তবে যাত্রাপথে এ রাজ্যে তার ছাপ রেখে যাবে ঘূর্ণিঝড়টি।

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলছেন, শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত কলকাতা-সহ উপকূলীয় জেলাগুলিতে বৃষ্টি হতে পারে। কোনও কোনও এলাকায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাসও রয়েছে।

আবহবিদদের অনেকেই বলছেন, এ রাজ্যে হামলা না চালালেও শীত আসার আগে বঙ্গোপসাগরের এই ‘শিশিরকণা’ বদলে দিতে পারে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া। বিগড়ে যেতে পারে শীতের নির্ঘণ্ট।

আবহবিদরা জানান, বর্ষা বিদায়ের পর উত্তর ভারত থেকে ঠান্ডা শুকনো হাওয়া ধীরে ধীরে ঢুকতে থাকে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। তার জেরেই বাতাসের শুষ্কতা বাড়ে, তাপমাত্রা কমে। ক্রমে থিতু হয় শীত। কিন্তু নভেম্বরে সাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলে উত্তুরে হাওয়া আটকে যায়। বাতাসে আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়, শুকনো হিমেল আবহাওয়ার বদলে মেলে ভ্যাপসা গরম। আবহবিদদের কথায়, ‘‘উত্তুরে হাওয়ার পথ যত বেশি দিন আটকে থাকবে, ততই পিছিয়ে যাবে শীত।’’

এই অসময়ে কেন হাজির হল ঘূর্ণিঝড়? আবহবিদরা বলছেন, অসময়ের ধারণাটি ঠিক নয়। মার্চ থেকে মে ও অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর, এই সময়েই ঘূর্ণিঝ়ড় তৈরির অনুকূল পরিস্থিতি থাকে বঙ্গোপসাগরে। কারণ, বর্ষাকালে বায়ুমণ্ডলের নিচুস্তরে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং উপরের স্তরে পুবালি হাওয়া বিপরীত অভিমুখে বইতে থাকে। এই বিপরীতমুখী হাওয়ার ধাক্কায় ঘূর্ণিঝড়ের মেঘ তৈরি হতে পারে না। সাগরে নিম্নচাপ বা গভীর নিম্নচাপ দানা বাঁধলেই মৌসুমি অক্ষরেখা তাকে টেনে স্থলভূমিতে নিয়ে আসে। ফলে জোলো হাওয়া শুষে সে আর শক্তি বাড়াতে পারে না। কিন্তু বর্ষার শুরুতে বা শেষে অনুকূল পরিস্থিতি থাকার কারণে ঘূর্ণিঝ়ড় সহজেই দানা বাঁধতে পারে, যেমনটা এখন হয়েছে।

শুক্রবার কী হতে পারে: প্রথমে অতিগভীর নিম্নচাপ, পরে ঘূর্ণিঝড় ‘নাডা’

সম্ভাব্য গন্তব্য: বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূল

পশ্চিমবঙ্গে প্রভাব: দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি ও কলকাতায় রবিবার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে। ঝোড়ো হাওয়ায় সাগর উত্তাল থাকবে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ। সোমবার থেকে আবহাওয়ার উন্নতির সম্ভাবনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন