শক্তি খুইয়েছে নিম্নচাপ, না-ও হতে পারে ‘নাডা’

গতি বাড়িয়ে দ্রুত স্থলভূমির কাছাকাছি চলে আসায় শক্তি কমে গিয়েছে বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপটির। শুক্রবার শেষ বেলায় সেই স্বস্তির বার্তাই অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে পৌঁছে দিল মৌসম ভবন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৫
Share:

ধেয়ে আসছে নাডা ঘূর্ণিঝড়

গতি বাড়িয়ে দ্রুত স্থলভূমির কাছাকাছি চলে আসায় শক্তি কমে গিয়েছে বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপটির। শুক্রবার শেষ বেলায় সেই স্বস্তির বার্তাই অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে পৌঁছে দিল মৌসম ভবন।

Advertisement

মৌসম ভবন শুক্রবার জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে গভীর নিম্নচাপটির শক্তি এতটুকু বাড়েনি। বরং গতি বেশি থাকায় এ দিন সে চলে এসেছে অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলের কাছে। যে কোনও নিম্নচাপ উপকূলের কাছে এলেই তার শক্তি কমতে শুরু করে। এ ক্ষেত্রেও সেটাই হবে বলে মনে করছেন আবহবিদেরা। শেষ পর্যন্ত সেটি আদৌ ঘূর্ণিঝড় ‘নাডা’য় পরিণত হবে কিনা, তা নিয়েও সন্দিহান আবহবিদেরা।

কী হতে পারে

Advertisement

• অতিগভীর নিম্নচাপ

পশ্চিমবঙ্গে প্রভাব

• কলকাতায়-সহ উপকূলীয় জেলাগুলিতে বৃষ্টি হতে পারে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ। সোমবার থেকে আবহাওয়ার উন্নতির সম্ভাবনা।

এতে কি দুর্যোগের আশঙ্কা কমবে? আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, বায়ুপ্রবাহের দিক বদলে গভীর নিম্নচাপটি যদি ফের উপকূল থেকে অনেকটা দূরে সরে যায় তা হলে অন্য কথা। না হলে এই গভীর নিম্নচাপটি থেকে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা বিশেষ নেই। যদি শেষ পর্যন্ত গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত না হয় তা হলে কী হবে?

আবহবিদেরা বলছেন, তার গতিপথ ঠিকই থাকবে। পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের কাছে এসে সেটি বাঁক খেয়ে চলে যাবে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের দিকে। তবে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত না হওয়ায় তার মধ্যে থাকা বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ কম হবে। তার ফলে কমে যাবে বিপদের আশঙ্কাও।

আবহবিদেরা জানান, রবিবার পর্যন্ত কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের উপকূলীয় জেলাগুলিতে বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও তার মাত্রা কিছুটা কম হবে। আজ, শনিবার গভীর নিম্নচাপটি সামান্য শক্তিবৃদ্ধি করে অতিগভীর নিম্নচাপ হিসেবে বাংলাদেশ দিয়ে স্থলভূমিতে ঢুকতে পারে। কিন্তু সেখানেও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা অনেক কম।

চলতি সপ্তাহের গোড়ায় আন্দামান সাগরে দানা বেঁধেছিল একটি নিম্নচাপ। ক্রমেই শক্তি বাড়িয়ে গভীর নিম্নচাপের চেহারা নিয়েছিল সে। তার মতিগতি দেখে ঘূর্ণিঝড় তৈরির সতর্কতাও জারি করেছিল দিল্লির মৌসম ভবন। ওমান তার নাম দিয়েছিল ‘নাডা’। আরবি ভাষায় তার অর্থ শিশিরকণা। আবহবিদেরা জানিয়েছিলেন, ওড়িশা-বাংলা উপকূলের কাছ থেকে বাঁক নিয়ে বাংলাদেশ উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে সে। মৌসম ভবনের ঘূর্ণিঝড় বিভাগের অধিকর্তা মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র এ দিন বলেন, ‘‘গভীর নিম্নচাপটি কিছুটা জোর বাড়ালেও আর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে না বলেই আমরা মনে করছি।’’ তা সত্ত্বেও নিম্নচাপটির উপরে নজরদারি চলছে বলে জানান তিনি।

কেন এমন মতিবদল গভীর নিম্নচাপের?

মৃত্যুঞ্জয়বাবুর ব্যাখ্যা, গভীর নিম্নচাপটির গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ২০ কিলোমিটার। নিম্নচাপের ক্ষেত্রে এই গতিবেগ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই বেশি। সাধারণত নিম্নচাপ বা অতিগভীর নিম্নচাপ ঘণ্টায় ১০-১২ কিলোমিটারের বেশি গতিতে এগোয় না। গভীর সমুদ্রে থাকার সময়েই গভীর বা অতিগভীর নিম্নচাপ শক্তি সংগ্রহ করতে পারে। কিন্তু দ্রুত গতিতে এগোনোর ফলে গভীর নিম্নচাপটি উপকূলের কাছাকাছি এসে পড়েছে। তাই আর সাগরের জোলো হাওয়া শুষে শক্তি বাড়াতে পারছে না সে।

তা হলে ফের কিছুটা শক্তি বৃদ্ধির কথা কেন বলছেন আবহবিজ্ঞানীরা?

আবহবিজ্ঞানীরা জানান, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এই সময়েই ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার আশঙ্কা সব থেকে বেশি থাকে। কারণ, বর্ষাকালের মতো এ সময়ে বায়ুমণ্ডলের নিচু ও উপরের স্তরে বিপরীতমুখী হাওয়া বয় না। কিন্তু বাতাসে জলীয় বাষ্প থাকে। তার উপরে সাগরের জলের তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে ঘূর্ণিঝড় তৈরির পরিস্থিতি আরও অনুকূল হয়ে ওঠে। এই যুক্তি দেখিয়েই আবহবিদদের কেউ কেউ বলছেন, উপকূল থেকে দূরে সরে গিয়ে ফের তাড়াতাড়ি শক্তি বাড়াতেও পারে গভীর নিম্নচাপটি। তাই ঘূর্ণিঝড় তৈরির আশঙ্কাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

‘‘আচমকা ভোলবদলে ফের সাগরে শিশিরবিন্দু দানা বাঁধে কি না, সেটাই এখন দেখার’’, মন্তব্য এক আবহবিজ্ঞানীর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন