একে তো আসতে দেরি হয়েছে। তার উপরে মিনমিন করছিল বর্ষা। দক্ষিণবঙ্গে এ বার অন্তত তাকে শক্তি জোগাচ্ছে নিম্নচাপ। আশা জাগাচ্ছে ঘাটতি মিটিয়ে দেওয়ারও। সোমবার রাত থেকেই চলছে ভারী বৃষ্টি। আগামী কয়েক দিনও তার এমনই দাপট চলবে বলে হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূলে একটি নিম্নচাপ ঘনীভূত হয়েছে। তার হাত ধরেই বর্ষা বেশি মাত্রায় সক্রিয় হবে দক্ষিণবঙ্গে। বাড়বে বৃষ্টির পরিমাণও। সোমবার রাত থেকেই সেই বর্ষার দাপট টের পাওয়া গিয়েছে। সোমবার বিকেল থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত কলকাতায় ৯৮.৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যা চলতি মরসুমে ২৪ ঘণ্টায় মধ্যে সব থেকে বেশি।
আবহবিদেরা বলছেন, উপকূলের কাছে থাকায় নিম্নচাপটি আর বিশেষ শক্তি বাড়াবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে নিম্নচাপটির গতি খুব কম। ফলে স্থলভূমিতে ঢুকে শক্তি ক্ষয় করতে দেরি হবে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “আগামী দিন দুয়েক কলকাতা ও সংলগ্ন জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।’’
এ বার বর্ষা খুব দুর্বল। তার জেরে কেরলে ঢুকতেই দেরি হয়েছে তার। তার পরে আরবসাগরের ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতেই আটকে ছিল বর্ষা। সাধারণ ভাবে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা ঢোকার কথা ৮ জুন। কিন্তু এ বছর নানা বাধাবিপত্তি কাটিয়ে সে এখানে পৌঁছেছে ১৮ জুন। কিন্তু তার পরেও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টির কপাল বিশেষ খোলেনি। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও উত্তর-পশ্চিম ভারতের বড় অংশে বর্ষা পৌঁছয়নি।
দিল্লির মৌসম ভবন সূত্রের খবর, ১ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত হিসেব অনুযায়ী গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টির ঘাটতি পৌঁছেছে ২৫ শতাংশে। আলিপুরের আবহবিদেরা বলছেন, বর্ষা ঢুকলেও মৌসুমি বায়ুর তেমন জোর ছিল না। তার ফলেই বৃষ্টির দাপাদাপি তেমন বাড়তে পারেনি। বৃষ্টি-ঘাটতির প্রভাব পড়েছে খরিফ শস্যেও। রাজ্যে ৫০ শতাংশের বেশি জমিতে এখনও ধানের বীজতলা তৈরি করা যায়নি। আবহবিদেরা বলছেন, জুলাই-অগস্টে ভাল বৃষ্টি না-হলে রাজ্যের কৃষি মার খেতে পারে।
তবে নতুন নিম্নচাপ সব আশঙ্কা দূর করে দিতে পারে বলে হাওয়া অফিসের আশা। ওই নিম্নচাপের দৌলতে জুলাইয়ে জোরালো বর্ষণের ইঙ্গিত দিচ্ছে তারা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই নিম্নচাপ স্থলভূমিতে ঢুকে মৌসুমি বায়ুর দাপট বাড়িয়ে দেবে। তার জেরে বাড়বে বর্ষার শক্তি।
সেই শক্তি ঘাটতি মেটাতে পারে কি না, সেটাই এখন দেখার।