100 Days Work Project

অনুমোদন হয়নি শ্রম বাজেট, আটকে প্রকল্প

একশো দিনের কাজের বরাদ্দ চালু নিয়ে যে নির্দেশ কেন্দ্রকে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট, তার নেপথ্যে মূল তত্ত্বই ছিল ‘জনস্বার্থ’। আদালতের সেই নির্দেশে ১ অগস্ট থেকে বরাদ্দ চালু হওয়ার কথা থাকলেও, তা এখনও হয়নি।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৫ ০৭:৪৩
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আদালতের রায় সত্ত্বেও প্রশাসনিক জটে আটকে একশো দিনের কাজের বরাদ্দ। কারণ, ‘শ্রম বাজেট’ অনুমোদন না হলে প্রকল্পের বরাদ্দ চালু হয় না। এ রাজ্যের ক্ষেত্রে সেই অনুমোদন এখনও নেই। লক্ষাধিক দরিদ্র উপভোক্তার জীবিকার স্বার্থে কবে এই প্রশাসনিক জট কাটবে, তার উত্তরও অমিল কেন্দ্র-রাজ্যের তরফে।

একশো দিনের কাজের বরাদ্দ চালু নিয়ে যে নির্দেশ কেন্দ্রকে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট, তার নেপথ্যে মূল তত্ত্বই ছিল ‘জনস্বার্থ’। আদালতের সেই নির্দেশে ১ অগস্ট থেকে বরাদ্দ চালু হওয়ার কথা থাকলেও, তা এখনও হয়নি। উল্টে জনস্বার্থের প্রসঙ্গ পাশ কাটিয়ে প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের দড়ি টানাটানি অব্যহত প্রশাসনিক এবং দুর্নীতি সংক্রান্ত নানা প্রশ্নে। প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসনিক স্তরে কেন্দ্র বা রাজ্যের যা অবস্থান, তাতে কেন ভুগতে হবে প্রকল্পের উপর নির্ভরশীল আর্থিক ভাবে অনেক পিছিয়ে থাকা লক্ষাধিক উপভোক্তাকে! শ্রম বাজেট নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের বৈঠক কেন হচ্ছে না, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও।

প্রতি অর্থ বছরের আগে কতজন একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কাজ চাইবেন, তা অনুমান করে শ্রম বাজেট তৈরি হয়। রাজ্যের তরফে তা পাঠানো হয় কেন্দ্রের কাছে। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের সচিবের নেতৃত্বাধীন একটি ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি তা অনুমোদন করে। এই শ্রম বাজেটের ভিত্তিতেই প্রতি অর্থ বছরে রাজ্যের জন্য একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বরাদ্দ নির্ধারিত হয়। সাধারণত প্রতি বছর জানুয়ারির শেষে এই বাজেট অনুমোদন হয়ে যায়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের জন্য ২০২১-২২-এর পরে আর কোনও শ্রম বাজেট অনুমোদন হয়নি। তার পরেই দুর্নীতির অভিযোগে রাজ্যে একশো দিনের কাজের প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়। ২০২২ সালে ৩২.১০ কোটি কর্মদিবসের প্রস্তাব কেন্দ্রকে পাঠিয়েছিল রাজ্য। কিন্তু তা অনুমোদিত হয়নি। তার পর থেকে এ পর্যন্ত কর্মদিবসের আর কোনও প্রস্তাব কেন্দ্রকে পাঠায়নি রাজ্যও!

পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের কথায়, ‘‘কেন্দ্রের নির্দিষ্ট বয়ানে শ্রম বাজেটের প্রস্তাব পাঠাতে হয়। কিন্তু কেন্দ্র যখন তা মানছেই না, তখন নতুন করে প্রস্তাব পাঠানোর সুযোগ নেই।’’

প্রসঙ্গত, আগের দুর্নীতির দায় কেন দরিদ্র উপভোক্তাদের নিতে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল আদালতও। বলা হয়েছিল, প্রকল্প চালু হোক, তবে দুর্নীতির প্রশ্ন চলুক কেন্দ্রের নজরদারিও। কিন্তু শ্রম বাজেট এখনও অনুমোদিত না থাকায় প্রকল্প হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক কলকাতা হাই কোর্টের ওই রায়কে এখনও চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পাল্টা মামলা দায়ের করেনি। এদিকে মন্ত্রকের আমলারাও এ বিষয়ে নীরব। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক গত ২২ জুলাই সংসদে প্রশ্নের লিখিত উত্তরে জানিয়েছিল, হাই কোর্টের রায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সম্প্রতি লোকসভায় কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে জানিয়েছে, গত তিন বছরে (২০২২-২৩ থেকে ২০২৪-২৫)-এ কেন্দ্রীয় অর্থ সাহায্যে চলা প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গের জন্য ৩৩,৫৪৩ কোটি টাকা মঞ্জুর হয়েছে। এছাড়া পরিকাঠামোয় খরচে বিশেষ সাহায্য হিসেবে ২০২০-২১ থেকে এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের জন্য ২৩,০৭৩ কোটি টাকা মঞ্জুর হয়েছে। কিন্তু একশো দিনের কাজের প্রকল্পে অনিয়ম মিলেছিল বলে টাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানও অভিযোগ করে বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার সংস্কার বা স্বচ্ছতার জন্য কোনও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ করেনি। কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার জনগণের উন্নয়ন, কল্যাণ এবং অধিকারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল এবং থাকবে।’’ পাল্টা রাজ‍্য সরকারের অন্দরের বক্তব্য, অতীতের কিছু ভুল সংশোধন করা হয়েছে। কেন্দ্র যেমন সুপারিশ করেছিল, পদক্ষেপ হয়েছে সে ভাবেই। সব শর্ত মানা হয়েছে। তার পরেও বরাদ্দ না ছেড়ে এই অভিযোগ তোলা দুর্ভাগ্যজনক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন