Bengali New Year Celebration

ঢাকায় ব্রাত্য ‘মঙ্গল’ শব্দ, ঐতিহ্য রক্ষায় ‘বাঙালির মঙ্গলচিহ্ন’ নিয়ে শোভাযাত্রা কলকাতায়, আর্থিক সহায়তায় কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক

বাংলাদেশের বাংলা ক্যালেন্ডার মুহম্মদ শহীদুল্লাহের প্রবর্তিত একটি পদ্ধতি অনুযায়ী তৈরি হওয়ায় সেখানে ‘পহেলা বৈশাখ’ পশ্চিমবঙ্গের এক দিন আগেই আসে। তাই সোমবার কলকাতায় চৈত্র সংক্রান্তি হলেও ঢাকায় সোমবারই বর্ষবরণ পালিত হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৮:৫৮
Share:

গত কয়েক বছরে কলকাতার রাস্তায় এ ভাবেই ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বেরিয়েছে। —ফাইল চিত্র।

সীমান্তের ও পারে বহু বছরের পরম্পরায় ছেদ পড়েছে। বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে ঢাকার বিখ্যাত ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম এ বার বদলে গিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শোভাযাত্রা আদৌ বেরোবে কি না, তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত শোভাযাত্রা বেরিয়েছে। কিন্তু সে যাত্রা ‘মঙ্গল’ বর্জিত। আকারে এবং প্রভাবে কলকাতার ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ ঢাকার মতো নয়। কিন্তু ঐতিহ্য-পরম্পরা অক্ষুণ্ণ রেখে বর্ষবরণে ‘মঙ্গল’ শব্দ ধরে রাখছে কলকাতা। ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ভাবে কলকাতার এই বর্ষবরণ শোভাযাত্রাকে এ বার আর্থিক সহায়তা করছে কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রক।

Advertisement

বাংলাদেশের বাংলা ক্যালেন্ডার মুহম্মদ শহীদুল্লাহের প্রবর্তিত একটি পদ্ধতি অনুযায়ী তৈরি হওয়ায় সেখানে ‘পহেলা (‘পয়লা’-কে বাংলাদেশে ‘পহেলা’ বলা হয়) বৈশাখ পশ্চিমবঙ্গের এক দিন আগেই আসে। তাই সোমবার কলকাতায় চৈত্র সংক্রান্তি হলেও ঢাকায় সোমবারই বর্ষবরণ পালিত হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরে যে ভাবে ছাত্রছাত্রীদের আয়োজনে তা হয়, এ বার তেমন হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনাতেই সব হয়েছে। শোভাযাত্রার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। তা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও কর্তৃপক্ষ তাতে গুরুত্ব দেননি।

ঐতিহ্য-পরম্পরা অক্ষুণ্ণ রেখে বর্ষবরণে ‘মঙ্গল’ শব্দ ধরে রাখছে কলকাতা। —ফাইল চিত্র।

এ হেন পরিস্থিতিতেই মঙ্গলবার, পয়লা বৈশাখ কলকাতায় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বেরোচ্ছে। বঙ্গীয় সনাতনী সংস্কৃতি পরিষদের আয়োজনে বিকেল ৪টে থেকে মোহরকুঞ্জের সামনে জমায়েত শুরু। সূর্য আরও পশ্চিমে ঢললে দক্ষিণমুখে যাত্রা শুরু। রবীন্দ্র সদন, গগনেন্দ্র প্রদর্শশালা, কলকাতা তথ্যকেন্দ্র হয়ে এক্সাইড মোড়। সেখান থেকে বাঁ-দিকে। সোজা রাস্তায় এগিয়ে বিড়লা তারামণ্ডলকে অর্ধবৃত্তাকার পথে প্রদক্ষিণ করে সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রালের সামনে দিয়ে আবার মোহরকুঞ্জে গিয়ে শোভাযাত্রা শেষ। সব মিলিয়ে দেড় কিলোমিটারের পদযাত্রা। কিন্তু আয়োজকদের দাবি, ‘খাঁটি বাঙালিয়ানার’ উদ্‌যাপনে এই শোভাযাত্রার জুড়ি মেলা ভার।

Advertisement

আয়োজক সংগঠনটি আরএসএস-ঘনিষ্ঠদের হাতে তৈরি। এই সংগঠনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্তেরা আগে সঙ্ঘ বা সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পদে ছিলেন। তাঁদের বর্ষবরণ কর্মসূচি এ বার পঞ্চম বর্ষে। ঢাকার কর্মসূচির সঙ্গে মিলিয়ে নাম রাখলেও সাজসজ্জা বা আয়োজনে কলকাতার মিছিল ঢাকার চেয়ে শুরু থেকেই কিছুটা আলাদা। ঢাকায় যে ধরনের প্রতিকৃতি বা সাজসজ্জা নিয়ে মিছিল হয়, কলকাতার শোভাযাত্রায় তা থাকে না। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘ঢাকার মিছিলে যে সাপ, পেঁচা, বাদুড়, পতঙ্গ ইত্যাদির প্রতিকৃতি থাকে, আমরা সে সব নিই না। ঢাকায় কেন ওই সব প্রতিকৃতি বা প্রতীক নেওয়া হয়, তা নিয়ে তাঁদের নিজস্ব ব্যাখ্যা রয়েছে। আমাদের তা নিয়ে কিছু বলার নেই। কিন্তু বাঙালির কাছে যেগুলো মঙ্গলের চিরন্তন প্রতীক, আমরা সে সব নিয়েই বর্ষবরণ করি।’’ সেই প্রতীক হল মঙ্গলঘট, লজ্জাগৌরী, কুলো, চামর। তার সঙ্গে শঙ্খধ্বনি-সহ শোভাযাত্রা। শ্রীখোল বাদক এবং কীর্তনের দলও থাকে। এ বার থাকছেন গৌড়ীয় নৃত্যশিল্পীরা। থাকছে রায়বেঁশে নাচের একটি দলও। আর থাকছেন গৌড়াধিপতি শশাঙ্কের বেশধারী এক ঘোড়সওয়ার।

প্রবীরের বক্তব্য, ‘‘বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতি ও পরম্পরা ধরে রাখার জন্য এখন এ পার বাংলাই সম্বল। কলকাতার মঙ্গল শোভাযাত্রা মঙ্গলবার সেই কাজটাই করবে।’’ দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতিকেন্দ্র’ এ বার কলকাতার এই ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’কে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। আয়োজকেরা জানাচ্ছেন, তাঁরা কারও কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা চাননি। কারণ, সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ এবং স্বয়ংসেবকরা দেশের নানা প্রান্ত থেকে এই সংগঠনকে সহায়তা পাঠিয়ে থাকেন। তা সত্ত্বেও ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রক এ বার সমর্থন জোগাচ্ছে। এটা কি সীমান্তের ও পারের পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ‘খাঁটি’ বাঙালিয়ানার একমাত্র ‘পীঠস্থান’ হিসেবে কলকাতাকে তুলে ধরার প্রয়াস? উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছেন শোভাযাত্রার আয়োজকেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement