অভাব নিত্যসঙ্গী, স্টার পেয়েও উচ্চশিক্ষা অনিশ্চিত দুই বোনের

এক দিন কাজে না গেলে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়ে বাবার। সেই ঘরের দুই বোন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে স্টার পেয়েছে। দু’চোখে স্বপ্ন আরও পড়াশোনা করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অসচ্ছ্বলতা সেই স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হতে দেবে কি না, হুগলির মশাটের আউষবালির কেকা ঘোষ তা নিয়েই চিন্তায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মশাট শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৪ ০১:২১
Share:

কেকা ও রিয়া। —নিজস্ব চিত্র।

এক দিন কাজে না গেলে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়ে বাবার। সেই ঘরের দুই বোন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে স্টার পেয়েছে। দু’চোখে স্বপ্ন আরও পড়াশোনা করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অসচ্ছ্বলতা সেই স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হতে দেবে কি না, হুগলির মশাটের আউষবালির কেকা ঘোষ তা নিয়েই চিন্তায়।

Advertisement

শিয়াখালা বেণিমাধব উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রীটি উচ্চ মাধ্যমিকে পেয়েছে ৩৯৮। কম্পিউটার এবং ভূগোলে তার প্রাপ্ত নম্বর নয়ের ঘরে। এত ভাল রেজাল্ট করেও খুব একটা খুশিতে নেই মেয়েটি। বাবা কিঙ্করবাবু পেশায় খেতমজুর। চার জনের পরিবারে তিনিই একমাত্র রোজগেরে। সেই সামান্য আয়েই সংসার খরচ থেকে শুরু করে দুই মেয়ের পড়াশোনা চালানো যে কতটা কঠিন, তিনি তা টের পাচ্ছেন। ফলে আর কতটা এগোবে কেকার পড়াশোনা তা নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন চিহ্ন। কেকার ইচ্ছে, বড় হয়ে ভূগোলের শিক্ষিকা হবে। তার কথায়, “আমার মত অনেক ছেলেমেয়েকে অভাবের জন্য পড়া ছেড়ে দিতে হয়। বড় হয়ে এমন ছেলেমেয়েদের পাশে দাঁড়াতে চাই।” কেকা জানায়, শুধুমাত্র ভুগোল এবং ইংরেজিতে গৃহশিক্ষক ছিল তার। আর পড়শি এক যুবক সংস্কৃত এবং কম্পিউটার দেখিয়ে দিয়েছেন। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও সাহায্য করেছেন। আপাতত কলেজে ভর্তি হওয়ার তোড়জোড় করছে কেকা। তবে এখনও বইপত্র জোগাড় করে উঠতে পারেনি।

বোন রিয়াও কম মেধাবি নয়। এ বার পশ্চিম তাজপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। দিদির মতোই সেও স্টার পেয়েছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৫৪৪। রিয়া চায় ডাক্তার হতে। জোরকদমে একাদশ শ্রেণির পড়া শুরু করে দিয়েছে সে। পড়াশোনার পাশাপাশি দুই বোনই সংসারের মা কাবেরীদেবীকে কাজে সাহায্য করে। মেধাবি দুই মেয়ের পড়াশোনার খরচ চলবে কী করে, তা ভাবতেই চোখে জল এসে যায় কিঙ্কর ঘোষের। বলেন, “মেয়ে দু’টো পড়াশোনায় এত ভাল। কিন্তু আমি আর টানতে পারছি না। কী হবে ঈশ্বর জানেন।” টালির ছাউনি দেওয়া জীর্ণ মাটির বাড়িতে দাঁড়িয়ে দুই বোন অবশ্য জানিয়ে দেয়, যত কষ্টই হোক, পড়াশোনা চালিয়ে যেতে আপ্রাণ চেষ্টা করবে তারা।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন