ভোটে পাখির চোখ খুঁজে নিতে ব্যর্থ হয়েছে তাঁর তির। গাণ্ডিব হাতে তুলে নেওয়ার আগে অর্জুন এখন অভিমানী! তাঁর বার্তা পৌঁছচ্ছে এলাকার ঘরে ঘরে।
এই অর্জুন তৃণমূলের বিধায়ক। ভাটপাড়ার দোর্দণ্ডপ্রতাপ বিধায়ক। সঙ্গে ভাটপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যানও বটে। এ বার লোকসভা ভোটে অর্জুন সিংহের খাস তালুকে পিছিয়ে পড়েছে শাসক দল। ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে একমাত্র ভাটপাড়া বিধানসভায় পিছিয়ে পড়েন তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদী। ওই কেন্দ্রে বিজেপি এগিয়ে ছিল দু’হাজার ৫১৫ ভোটে। দু’বছরের মধ্যেই বিধানসভা ভোট। তার আগে অর্জুনের মতো বিধায়কের এলাকায় পিছিয়ে পড়ার ঘটনায় জলঘোলা শুরু হয়েছে শাসক দলের অন্দরে। এমন পরিস্থিতিতে অর্জুনের তরফে এখন বাড়িতে বাড়িতে লিফলেট পাচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা।
হিন্দি ও বাংলা, এই দুই ভাষায় প্রচারপত্র ছাপিয়েছেন বিধায়ক। স্থানীয় মানুষের উদ্দেশে প্রচারপত্রে লিখেছেন, ‘এলাকার উন্নয়নের জন্য আমি যা কাজ করেছি, আপনারা তা স্বীকার করেননি। তারই ফলস্বরূপ আপনাদের ভোট গিয়েছে বিজেপি-র পক্ষে’। আরও লিখেছেন, ‘আপনাদের ভোট দেখে আমি অনুভব করছি, আমার উপরে আপনাদের আর বিশ্বাস নেই। উল্লেখ করতে চাই, আপনাদেরই সহযোগিতায় এই এলাকার নাম আমি পশ্চিমবঙ্গে উজ্জ্বল করেছি! সেই কাজ আপনারা স্বীকার করেননি দেখে আমি বেদনাহত’। একই সঙ্গে অর্জুনের অঙ্গীকার, ‘আগামী দিনে আপনাদের বিশ্বাস ধরে রাখার জন্য আমার কাজের মধ্যে দিয়েই প্রাণপণ চেষ্টা করব’।
লোকসভা ভোটে নিজের বিধানসভা এলাকায় পিছিয়ে পড়ার পরে ভোটারদের কাছে এমন আবেদন নিঃসন্দেহে অভিনব। কিন্তু তাঁর কাজের বিচার করার ভোট তো বিধানসভায় হবে। বা নিদেনপক্ষে পুরসভায়। এখন ছিল দেশের সরকার গড়ার লক্ষ্যে লোকসভার ভোট। তা হলে এই ব্যর্থতাকে তিনি নিজের উপরেই নিচ্ছেন কেন? অর্জুনের জবাব, “আমি ২৪ ঘণ্টা মানুষের সঙ্গে থাকি। তাই এলাকায় এমন ফল আমাকে আঘাত দিয়েছে। সতর্ক না-হলে ভবিষ্যতে আরও বিপদ হতে পারে।” তৃণমূল বিধায়কের দাবি, প্রচারপত্র বিলি করার পরে অনেকের মতামতই তাঁর কাছে আসছে। অনেকেই জানাচ্ছেন, এই ভোটকে তাঁদের ‘দাদা’র ভোট বলে তাঁরা ধরেননি। তাই ‘ভুল’ করেই ভোটটা অন্য জায়গায় দিয়েছিলেন!
ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে এ বারের বিজেপি প্রার্থী, প্রাক্তন আইপিএস রুমেশ কুমার হান্ডা অবশ্য অর্জুনের এমন কাণ্ডে যথেষ্টই বিস্মিত। তাঁর বক্তব্য, “এ বার মোদী-সুনামি ছিল! তা ছাড়া আমি বলব, ব্যারাকপুর কেন্দ্রের মধ্যে তৃণমূল বিধায়ক শুভ্রাংশু রায়ের এলাকা বীজপুরে ভোটযন্ত্রকে একেবারে ধর্ষণ করা হয়েছে! ভাটপাড়ায় সেটা হয়নি।” বিজেপি প্রার্থীর প্রতিক্রিয়া, “শুনেছি, ভোটের আগে ভাটপাড়ার বিধায়ক বলেন যেখানে খুশি, ভোট দিতে। কোনও জবরদস্তি হবে না। এখন এ রকম আবেদন! কী চাইছেন, কে জানে!”
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, অর্জুনের প্রচারপত্রে কিন্তু লেখা হয়েছে, ‘ভোট দেওয়া সাংবিধানিক অধিকার। ভোটের দিন আপনারা সফল ভাবে সেই অধিকার প্রয়োগ করেছেন’। সাম্প্রতিক অতীতে ভাটপাড়ায় ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে জবরদস্তির অভিযোগ উঠলেও এ বার ছিল অন্য ছবি। তৃণমূলের একাংশের ব্যাখ্যা, ভোট দেওয়ার অধিকারের কথা উল্লেখ করে অর্জুন কৌশলে দলের অনেককেই বোঝাতে চাইছেন, জবরদস্তি না-করলে বাস্তব ছবি এই রকমই দাঁড়ায়! অন্য অনেক জায়গায় গা-জোয়ারি হলেও তাঁর এলাকায় হয়নি। অর্জুন অবশ্য বলছেন, “আমি ২৪ ঘণ্টা লোকের জন্য কাজ করি। তাই আমার মনে হয়েছে, এটা করা উচিত।”