হেলিপ্যাড তৈরির প্রস্তুতি। আরামবাগে তোলা নিজস্ব চিত্র।
উপর দিয়ে গিয়েছে বিদ্যুতের লাইন। হেলিকপ্টার নামার ক্ষেত্রে ঝুঁকি আছে। সে দিকে খেয়াল রেখে মঙ্গলবার আরামবাগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নির্বাচনী সভার জায়গা বদল করলেন নিরাপত্তা সংক্রান্ত আধিকারিকেরা। শনিবার সংশ্লিষ্ট দলটি বিভিন্ন এলাকা পর্যবেক্ষণ করার পরে গড়বাড়ি মাঠে (এখানেই কথা ছিল) হেলিপ্যাড তৈরির সিদ্ধান্ত বাতিল করে। ঠিক হয়েছে, নির্বাচনী সভাস্থল হবে শহর থেকে একটু তফাতে পারুলের মাঠে। সেখানেই তৈরি হবে হেলিপ্যাড।
আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অপরূপা পোদ্দার ওরফে আফরিন আলির সমর্থনে সভা করবেন মমতা। সভায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে বলে স্থানীয় নেতৃত্বের আশা। প্রশাসনকে অবশ্য কম পক্ষে হাজার পঞ্চাশ লোক হবে বলে তাঁরা জানিয়ে রেখেছেন। গত শুক্রবার থেকে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট দফতর। তাঁদের নির্দেশ মতোই সভামঞ্চ বানানো হচ্ছে। সভা শুরু দুপুর ২টোয়। হেলিপ্যাড বানানো হচ্ছে সভামঞ্চের প্রায় ১৭০ মিটার পিছনে।
আরামবাগের এই সভাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত। যদিও দলের অভ্যন্তরেই একটা অংশের অভিযোগ, হুগলি জেলার এই প্রান্তে দলের অন্দরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের মীমাংসা নিয়ে নেত্রী উদাসীন। দলের এই অংশটির দাবি, প্রচারের সময়ে হয় তো দলের কোন্দল ততটা সামনে আসছে না। কিন্তু ইভিএমএ তার প্রভাব পড়বে কিনা, তা ভাবাচ্ছে দলের এই অংশকে।
কিন্তু কেন এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব?
একাধিক গোষ্ঠীর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মূলত পুরনো পোড়খাওয়া নেতাদের দলে যথাযোগ্য সম্মান এবং স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না এই অভিযোগ এখনও ঘুরে ফিরে আসছে। পাশাপাশি উঠে আসছে, সিপিএম ছেড়ে আসা লোকজনকে অতিমাত্রায় প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে, এই অভিযোগ। এ ছাড়া, এলাকায় একচ্ছত্র ভাবে ক্ষমতা কায়েমের চেষ্টাও অন্য পক্ষকে খেপিয়ে তুলছে। কে কোন স্তরের নেতা, দলীয় ভাবে সেই নিয়োগপত্র না থাকায় যে যার মতো নিজেদের নেতা ঘোষণা করে বসছেন, এমন উদাহরণও আছে। স্কুল-কলেজ প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালন কমিটির প্রধান হিসাবে যাঁদের বসানো হয়েছে, তাঁদের অনেকের সম্পর্কে ক্ষোভ আছে দলের মধ্যেই। এই পরিস্থিতি মাথায় রেখে আরামবাগের বাইরে থেকে প্রার্থী এনেছে তৃণমূল। তাতে ভোটের মুখে দলের লোকজনের মধ্যে মারামারি-কাটাকাটি হয় তো কিছুটা কমেছে। কিন্তু নেত্রী মমতা এই নিয়ে কী বার্তা দেন, তা জানার আগ্রহ আছে সব পক্ষের মধ্যেই।
আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ আসনটি ১৯৮০ সাল থেকে বরাবর সিপিএমের দখলে। ১৯৮০ সালে সিপিএমের বিজয় মোদক হারিয়েছিলেন জেএনপি (জনতা) নেতা প্রফুল্লচন্দ্র সেনকে। ১৯৮৪ সাল থেকে সিপিএমের অনিল বসু টানা ২০০৪ সাল পর্যন্ত সাতবার জয়ী হয়েছেন এই কেন্দ্রে। তাঁর সাংসদ জীবনের শেষ দফায়, ২০০৪ সালের লোকসভা ভোটে তৃণমূল জোটের বিজেপি প্রার্থী স্বপনকুমার নন্দীকে তিনি হারান ৫,৯২,৫০২ ভোটে। বিজেপি প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। অনিল বসু ভোট পেয়েছিলেন ৭,৪৪,৪৬৪ ভোট। স্বপনকুমার নন্দীর প্রাপ্ত ভোট ছিল ১,৫১,৯৬২টি। এই মার্জিন সর্বকালের রেকর্ড।
পরবর্তী লোকসভা ভোটে ২০০৯ সালে সিপিএমের প্রার্থী শক্তিমোহন মালিক তৃণমূল জোটের কংগ্রেস প্রার্থী শম্ভুনাথ মালিককে হারান ২,১১,৫৫৮ ভোটের ব্যবধানে। এ বার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ তৃণমূল কারও সঙ্গে জোট না করেও আসনটি দখল করতে পারে কিনা, পারলেও ভোটের ব্যবধান কত হয় তা দেখতে দল এবং সাধারণ মানুষেরও কৌতুহল আছে।
হুগলি জেলা তৃণমূলের দুই শীর্ষ নেতা তপন দাশগুপ্ত এবং দিলীপ যাদবের অবশ্য দাবি, কোথায় কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। আরামবাগে দলের হয়ে ভোটের দায়িত্বে আছেন রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না এবং পুড়শুড়ার বিধায়ক পারভেজ রহমান। দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা এক রকম মেনেই নিয়েছেন বেচারামবাবু। যদিও তাঁর মতে, এই মুহূর্তে কোনও সমস্যা নেই। বেচারাম বলেন, “খুব পরিশ্রম করে সকলকে এক সঙ্গে করা গিয়েছে। এতটাই ঘাম ঝরিয়েছি আমরা, রাজ্যের মধ্যে রেকর্ড ভোটের ব্যবধানে জিতবেন অপরূপা।”
দলের একটি অংশ জানাচ্ছে, আরামবাগের থেকেও শ্রীরামপুর লোকসভা আসনে বিজেপি-কাঁটা ভাবাচ্ছে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বকে। বাপ্পি লাহিড়ীর একের পর এক রোড শো-এ তুমুল জনজোয়ার সেই ইঙ্গিতই করছে। মঙ্গলবার আরামবাগের সভা সেরে মমতা যাবেন শ্রীরামপুরে। স্টেডিয়ামে নামবে কপ্টার। বিকেল ৪টে নাগাদ সভা করার কথা শ্রীরামপুর স্পোর্টিং মাঠে। আজ, সোমবার হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থীর প্রদীপ সাহার সমর্থনে চুঁচুড়ার এডিএম বাংলো-সংলগ্ন মাঠে সভা করার কথা ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের।