ব্যাটারি চালিত এই টোটো গাড়ি নিয়েই উঠেছে বিতর্ক। —নিজস্ব চিত্র।
অটো বনাম টোটোর লড়াই।
মফঃস্বলে পরিবহণ ব্যবস্থায় নতুন আমদানি হওয়া ব্যাটারি-চালিত টোটো গাড়ি নিয়ে রোজই বাগ্বিতণ্ডা হচ্ছে হুগলি জেলার নানা জায়গায়। বুধবার শ্রীরামপুরে দু’পক্ষের চালকদের মধ্যে গোলমাল হয়। বিষয়টি থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়। বেশ কিছুক্ষণ অটো চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তি হয় যাত্রীদের।
কিছু দিন আগে বালিতে উভয় পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় মারামারি হয়েছিল। পরিস্থিতি সামলাতে র্যাফ নামাতে হয়েছিল। হুগলিতে এখনও সে রকম কিছু না হলেও রোজই টুকটাক ঝামেলা বাঁধছে দু’পক্ষের চালকদের মধ্যে। পরিবহণ দফতরের বক্তব্য, টোটোর ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশিকা না আসায় বিষয়টিতে তারা হস্তক্ষেপ করতে পারছে না।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকালে শ্রীরামপুরের খটিরবাজারে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। টোটো চালকদের অভিযোগ, কেন অটোর রুটে ঢুকে যাত্রী তোলা হচ্ছে, এই জবাব চেয়ে এক টোটো চালককে মারধর করা হয়। সেখানে গোলমাল মেটার পরে মাহেশের কাঠগোলা স্টপেজের সামনে ফের একপ্রস্থ ঝামেলা হয়। অটো চালকদের হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠান শ্রীরামপুর থানার আইসি প্রিয়ব্রত বক্সি। দু’পক্ষই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে। অটো চালকরা গাড়ি চালানো বন্ধ করে দেন। পুলিশ জানিয়েছে, গোলমালের ঘটনায় দুই অটো চালক এবং এক টোটো চালককে গ্রেফতার করা হয়। পরে অবশ্য থানা থেকেই তিন জনই জামিন পেয়ে যান।
ব্যাটারি চালিত টোটো গাড়ি পরিবেশ-বান্ধব। এই গাড়ি চললে অটো চালকদের আপত্তি কোথায়?
অটো চালকদের দাবি, সরকারকে অটো পিছু সরকারকে প্রায় ৭ হাজার টাকা রাজস্ব দিতে হয়। নির্দিষ্ট রুটেই তাঁদের গাড়ি চালাতে হয়। কিন্তু টোটো গাড়ির ক্ষেত্রে সে সবের বালাই নেই। ফলে, যত্রতত্র দাপিয়ে বেড়াতে শুরু করেছে টোটো। সর্বোপরি, টোটো গাড়ি আদৌ বৈধ নয় বলে তাঁদের অভিযোগ। অটো চালকদের বক্তব্য, অটোর জন্য নির্দিষ্ট রুটে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে টোটো গাড়ি। ফলে তাঁদের রুজি-রুটিতে টান পড়ছে। সরকারও বহু টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। মাসখানেক ধরে বালি, বেলুড়, লিলুয়া, উত্তরপাড়ার মধ্যে চলাচল করছিল এই গাড়ি। ইদানিং রিষড়া, শ্রীরামপুর, ভদ্রেশ্বরেও এই গাড়ি রাস্তায় নেমেছে। শ্রীরামপুর-বাগখাল রুটের এক অটোচালকের কথায়, “এখনই যদি আমরা প্রতিরোধ না করি, তা হলে টোটো গাড়িতে শহর ছেয়ে যাবে।”
যাত্রীদের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, টোটো গাড়ির ভাড়া অটোরিক্সা বা রিক্শার থেকে কম। রিক্শা ও অটোর জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। শ্রীরামপুরে সন্ধ্যার পর থেকে অটো সংখ্যায় অনেক কমে আসে। তার উপর অনেকেই নিজেদের মর্জিমতো চলাফেরা করে। দুর্ব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে। এই অবস্থায় টোটো গাড়ি যাত্রীদের সমস্যা কমাবে।
অটো চালকদের একাংশের বক্তব্য, বহু জায়গায় এখনও কোনও গাড়ি চলে না। কেবল রিক্শার উপর নির্ভর করতে হয়। সব সময় অবশ্য তা-ও মেলে না। টোটো যদি চালাতেই হয়, এমন জায়গায় চলুক। যেমন, শ্রীরামপুরের চাতরা, বড়বাগান এলাকায় যেতে হলে রিক্শা ছাড়া গত্যন্তর নেই। সুযোগ বুঝে রিক্শা চালকরা যেমন খুশি ভাড়া হাঁকেন। এই সমস্ত জায়গায় টোটো গাড়ি চললে আখেরে বেকার ছেলেরা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি সাধারণ মানুষেরও ভোগান্তি দূর হবে। অটো চালকদেরও ক্ষতি হবে না।
কিন্তু প্রশ্ন হল এই গাড়িগুলি রাস্তায় নামার অনুমতি কিংবা পারমিট কে দিল?
এ বিষয়ে অবশ্য প্রশাসনের কাছ থেকে সদুত্তর মেলেনি। শ্রীরামপুর-বাগখাল রুটের আইএনটিটিইউসি সভাপতি উত্তম রায় বলেন, “বৈধ গাড়ি চললে সমস্যা নেই। কিন্তু টোটোগুলি বিনা লাইসেন্সে চলছে। এটা ঠিক নয়। সংশ্লিষ্ট দফতর বিষয়টি ঠিক করুক।” জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “টোটো গাড়ির চালকরা আমাদের রুটে চলার কোনও কাগজ দেখাতে পারেনি। তবে, এটা পরিবহণ দফতরের বিষয়।”
হুগলির আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক (আরটিও) সৈকত দাস বলেন, “ওই গাড়ির ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনও নির্দেশিকা এখনও আসেনি। আশা করছি, নির্বাচন পর্ব মিটলে নির্দেশিকা আসবে। সেই মোতাবেক পদক্ষেপ করা হবে।” ওই দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “ওই গাড়ির কোনও রেজিস্ট্রেশন আদৌ দরকার কি না, তা নিয়েও আমাদের কোনও ধারণা নেই। সেন্ট্রাল মোটর ভেহিকল রুল অনুযায়ী যদি দেখা যায় রেজিস্ট্রেশন দরকার, সে ক্ষেত্রে তাই করা হবে। আপাতত আমরা সরকারি নির্দেশিকার দিতে তাকিয়ে আছি।”