তৃণমূলের বিরুদ্ধে দেওয়াল দখলের অভিযোগ ব্যারাকপুরে

‘দেওয়াল তুমি কার? তৃণমূল, সিপিএম না জনতার (পার্টি)?’— স্লোগান উঠছে কংগ্রেসের মিছিলে। প্রচার-যুদ্ধে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে দেওয়াল-লিখনে বিরোধীদের ছাপিয়ে গিয়েছে রাজ্যের শাসক দল। সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের বেশির ভাগ দেওয়ালেই ‘তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদী’র দাপট! ছোটখাটো কিছু দেওয়ালে বিরোধীরা রয়েছে নামেই। কংগ্রেসের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। খুঁজতে আতসকাচ লাগবে। দেওয়ালে এই ‘অস্তিত্বের সঙ্কট’-এর জন্য শাসক দলের বিরুদ্ধে বাধা দানের অভিযোগ তুলছে সকলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৪ ০০:০৩
Share:

বীজপুরে সব দেওয়াল এ ভাবেই দখল করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

‘দেওয়াল তুমি কার? তৃণমূল, সিপিএম না জনতার (পার্টি)?’— স্লোগান উঠছে কংগ্রেসের মিছিলে।

Advertisement

প্রচার-যুদ্ধে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে দেওয়াল-লিখনে বিরোধীদের ছাপিয়ে গিয়েছে রাজ্যের শাসক দল। সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের বেশির ভাগ দেওয়ালেই ‘তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদী’র দাপট! ছোটখাটো কিছু দেওয়ালে বিরোধীরা রয়েছে নামেই। কংগ্রেসের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। খুঁজতে আতসকাচ লাগবে। দেওয়ালে এই ‘অস্তিত্বের সঙ্কট’-এর জন্য শাসক দলের বিরুদ্ধে বাধা দানের অভিযোগ তুলছে সকলে।

সোমবার রাতেই নৈহাটিতে কংগ্রেসের তরফে পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে জানানো হয়, দেওয়াল লিখনের সময়ে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বাধা দেয় এবং লেখার সরঞ্জাম নষ্ট করে দেয় তৃণমূলের লোকজন। সিপিএম নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগে জানিয়েছে, বীজপুর বিধানসভা কেন্দ্রে তাদের দেওয়াল লিখতেই দেওয়া হয়নি। এমন অভিযোগ আরও রয়েছে। তৃণমূল কোনও ক্ষেত্রেই অভিযোগ মানেনি।

Advertisement

ব্যারাকপুরে এই একতরফা দেওয়াল-লিখন নতুন নয়। বাম জমানাতেও কংগ্রেস একই স্লোগান তুলেছিল। গত লোকসভা ভোটেও লাল কালিতে দেওয়াল জুড়ে ছিলেন ‘বামপ্রার্থী তড়িৎ তোপদার’। তৃণমূল-কংগ্রেস জোটপ্রার্থীর নাম খুঁজে পাওয়া দুষ্কর ছিল। এ বার উলটপুরাণ।

বড় দেওয়ালে বড় অক্ষরে নামটা জ্বলজ্বল করলে অনেক দিন ধরে অনেক লোক দেখতে পায়। লখনউ থেকে ব্যারাকপুরে এসে এ বার সেই সুযোগ সে ভাবে না মেলায় দৃশ্যতই হতাশ বামপ্রার্থী সুভাষিণী আলি। একে তো বিভিন্ন বোর্ডের পরীক্ষার জন্য নির্বাচনী বিধি-নিষেধের জেরে প্রথম দিকে প্রচার সে ভাবে করতে পারেননি। ফ্লেক্স-পতাকা গোড়ায় যতটুকু লাগানো হয়েছিল, নির্বাচন আধিকারিকদের কড়া নজরদারিতে অনেক জায়গা থেকেই সে সব রাতারাতি খুলে ফেলতে হয়েছে। ট্রেনে-বাসে চড়ে, দোরে-দোরে ঘুরে, ফেসবুকে বন্ধু পাতিয়ে রীতিমতো আদা-জল খেয়ে সুভাষিণী নিজেকে পরিচিত করিয়ে চলেছেন সেই ৮ মার্চ থেকে। কিন্তু প্রচারের এই মধ্যগগনে দেওয়াল-লিখন নিয়ে ক্ষোভ যাচ্ছে না তাঁর, “এ তো দেখছি, জোর যার মুলুক তার। আমাদের কর্মীরা ফাঁকা দেওয়ালে অনুমতি নিয়ে লিখতে গেলেও বাধা পাচ্ছেন তৃণমূলের গুণ্ডা বাহিনীর কাছে। বীজপুরে তো আমাদের দেওয়াল-লিখন করতেই দেওয়া হয়নি। বহু জায়গায় লেখা দেওয়াল মুছে দেওয়া হচ্ছে।’’

একই অভিযোগ বিজেপি প্রার্থী রুমেশকুমার হান্ডারও। স্ত্রী অসুস্থ হওয়ায় এমনিতেই প্রচারে বাধা পড়েছে। বেশ কিছু দিন ধরেই প্রার্থীর এলাকায় সে ভাবে সময় দিতে পারেননি। প্রার্থী বলছেন, ‘‘একটু সামলে নিয়ে প্রচার শুরু করেছি। কিন্তু সিপিএমের কায়দাতেই তৃণমূল যে ভাবে দেওয়াল কেড়ে নিয়েছে, তাতে মানুষই এক দিন প্রতিবাদ করবেন।”

কংগ্রেস প্রার্থী সম্রাট তপাদার প্রায়ই সাইকেল চালিয়ে বিভিন্ন মহল্লায় ঢুকে প্রচার সারছেন। দেওয়ালে কোথায় ‘সম্রাট’? তাঁরও অভিযোগ, “ভোটারদের বোঝাতে পারবে না বলে তৃণমূলের এত গা-জোয়ারি, দখলদারি। ব্যারাকপুরে প্রথম দিকে আমরা কিছু দেওয়ালে লিখতে পেরেছিলাম। কিন্তু নৈহাটি, বীজপুরে তো আমাদের কর্মীরা দেওয়াল লিখতে গিয়ে নিগৃহীত হয়েছে তৃণমূলের গুন্ডাদের হাতে।”

এ সব শুনে মিটিমিটি হাসছেন তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদী। বলছেন, “যা বলার মানুষ বলবে। আমি কিছু বলব না।’’ তবে, দলের জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষের দাবি, বিরোধীদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, “ওরা দেওয়ালে লিখতে পারেনি, সেটা ওদের ব্যর্থতা। এ ভাবে আমাদের খাটো করা হচ্ছে কেন?”

রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে ব্যারকপুরের রাস্তাঘাট বা পানীয় জল পরিষেবার কতটা উন্নতি হয়েছে, সে সবই ফলাও করে লেখা হয়েছে দীনেশবাবুর সমর্থনে লেখা বিভিন্ন দেওয়ালে। অভিনবত্ব আনতে ছোটদের প্রিয় কার্টুন চরিত্রও ব্যবহার করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন