তাপ্পি নয়, পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের দাবিতে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ

আর প্রতিশ্রুতি নয়, এ বার তাঁরা চান ভাল রাস্তা। শুক্রবার নিজেদের সেই দাবি আদায়ে রাস্তায় গাছের গুঁড়ি, বিদ্যুৎতের খুঁটি, ইট ফেলে ও কলা, আমগাছের চারা পুঁতে অভিনব বিক্ষোবে সামিল হলেন এলাকার মানুষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বসিরহাট শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৪ ০৮:২০
Share:

রাস্তার এখন যে অবস্থা।

আর প্রতিশ্রুতি নয়, এ বার তাঁরা চান ভাল রাস্তা। শুক্রবার নিজেদের সেই দাবি আদায়ে রাস্তায় গাছের গুঁড়ি, বিদ্যুৎতের খুঁটি, ইট ফেলে ও কলা, আমগাছের চারা পুঁতে অভিনব বিক্ষোবে সামিল হলেন এলাকার মানুষ। আরও অভিনব এটাই যে, যেখানে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ চলছিল সেখান থেকে কিছুটা দূরেই ওই একই রাস্তায় প্যাচ ওয়ার্কের জন্য ৪০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে বলে এক অনুষ্ঠানে ঘোষণা করলেন বিধায়ক। শুক্রবার এমনই দৃশ্য দেখা গেল বসিররহাট-২ ব্লকের রাজেন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের মোল্লাপাড়া বটতলা ও আন্দুলপোতা বাজারে।

Advertisement

তবে শুক্রবারই নয়, গত এক সপ্তাহ ধরেই মোল্লাপাড়ার বটতলা এলাকার বাসিন্দারা রাস্তার ভাল মেরামতির দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়ে আসছেন। তাঁদের অভিযোগ, রাস্তা জুড়ে বড় বড় ইট-খোয়ার টুকরো মাথা বের করে আছে। যেখানে সেখানে বড় বড় গর্ত। তার মধ্যে আবার জলে জমে গেলে যেন সাক্ষাৎ মৃত্যুফাঁদ। তবু ওই রাস্তা দিয়ে রোজ আশপাশের পাঁচটি পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় ৩০টি গ্রামের কয়েক লক্ষ মানুষকে যাতায়াত করতে হচ্ছে। অথচ রাস্তাটির ভাল মেরামতির জন্য তাঁরা বিধায়ক থেকে সাংসদ সবার কাছেই বহু আবেদন জানিয়েছেন কিন্তু কাজ হয়নি। তাই কোনওরকমে জোড়াতালি দিয়ে নয়, রাস্তার পূর্ণাঙ্গ সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

বসিরহাটের খোলাপোতা থেকে হাসনাবাদের ভেবিয়া শ্মশানঘাট পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার রাস্তা দীর্ঘদিন ধরেই সংস্কারের অভাবে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০০৫ সালে প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনায় খোলাপোতা, চাঁপাপুকুর, রাজেন্দ্রপুর, চাঁপালি ও ভেবিয়া এই পাঁচটি পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে দিয়ে এই রাস্তা তৈরি হয়। এর ফলে একদিকে বসিরহাট, বাদুড়িয়া, স্বরূপনগর ও অন্যদিকে হাসনাবাদ, চৈতল, মিনাখাঁ ও কলকাতায় যাওয়া সুবিধাজনক হয়। রাস্তায় বাস চলাচল শুরু হলে স্কুল-কলেজের পড়ুয়া থেকে নিত্যযাত্রী সকলেরই সুবিধা হতে থাকে। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় বর্তমানে ওই রাস্তার অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে রাস্তার পিচ উঠে ইট বেরিয়ে পড়েছে। দুর্ঘটনাও লেগে রয়েছে অহরহ। তা ছাড়া এক বছর ধরে ওই রাস্তায় বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ছাত্রছাত্রী থেকে কাজে বেরোনো মানুষজন সকলকেই।

Advertisement

এ দিন বিক্ষোভকারীদের মধ্যে রেজ্জাক মোল্লা, হুমায়ুন কবির, কাশেম রেজা বলেন, “রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে সেখান দিয়ে অসুস্থ কাউকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াও দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিধায়ক থেকে সাংসদ সকলকে সমস্যার কথা জানিয়েছি। কিন্তু কেউই কর্ণেপাত করেননি। তাই বাধ্য হয়েই এমন আন্দোলনে নামতে হয়েছে।”

রাজেন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের কবির রহমান বলেন, “বাম আমলে এই রাস্তা মেরামতির জন্য প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। মেরামতির কোনও কাজ হয়নি। আমরা ক্ষমতায় এসে রাস্তাটিকে কোনওমতে চলাচলের উপযুক্ত করেছি।” বসিরহাট উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক এটিএম আবদুল্লা রনি বলেন, “ওই রাস্তার আপৎকালীন মেরামতির জন্য ৪০ লক্ষ টাকা অনুমোদন করা হয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যেই কাজ শুরু হবে।” কিন্তু রাস্তার পূর্ণাঙ্গ সংস্কার নিয়ে স্থানীয় মানুষের যে আন্দোলন করছেন? এর উত্তরে বিধায়ক বলেন, “লোকসভা ভোটের পরে রাস্তাটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের জন্য ৯ কোটি ৪২ লক্ষ টাকার কাজ করা হবে।”

ছবি: নির্মল বসু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন