দই শেষ করে দোকানিকে খুন করে চম্পট

ক্রেতা সেজে মিষ্টির দোকনে ঢুকে মালিককে গুলি করে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করল দুষ্কৃতীরা। শনিবার রাতে ফলতার সহরারহাট মোড়ে ওই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের মধ্যে। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে রবিবার সকাল ছ’টা থেকে তাঁরা বেঞ্চ পেতে ওই মোড় অবরোধ করেন। প্রায় ছ’ঘণ্টা অবরোধ চলার পরে পুলিশ দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ ওঠে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ফলতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৪ ০২:৫৪
Share:

কার্তিক ঘোষ

ক্রেতা সেজে মিষ্টির দোকানে ঢুকে মালিককে গুলি করে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করল দুষ্কৃতীরা। শনিবার রাতে ফলতার সহরারহাট মোড়ে ওই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের মধ্যে। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে রবিবার সকাল ছ’টা থেকে তাঁরা বেঞ্চ পেতে ওই মোড় অবরোধ করেন। প্রায় ছ’ঘণ্টা অবরোধ চলার পরে পুলিশ দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ ওঠে।

Advertisement

নিহতের নাম কার্তিক ঘোষ (৩২)। বাড়ি ওই এলাকাতেই। তবে, কী কারণে তাঁকে খুন করা হল সে ব্যাপারে অন্ধকারে তাঁর পরিবারের লোকজন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, পুরনো শত্রুতার জেরে তাঁকে খুন করা হতে পারে। রবিবার ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের কর্তারা। পুলিশ সুপার বলেন, “ওই মিষ্টির দোকানের সিসি টিভির ফুটেজ থেকে কিছু তথ্য মিলেছে। দোকানের মেঝে থেকে দুষ্কৃতীদের ফেলে যাওয়া তিনটি ধারাল অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে একটি খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। অপরাধীদের খোঁজ চলছে।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ ক্রেতা না থাকায় কার্তিক দোকানের ক্যাশবাক্সের পাশে বসে মুড়ি খাচ্ছিলেন। সেই সময়ে তিনটি মোটরবাইকে ছয় দুষ্কৃতী আসে। প্রথমে চার জন দোকানে ঢুকে দই খেতে চায়। দোকানের কর্মচারী নির্মল প্রামাণিক তাদের চেয়ারে বসিয়ে দই এনে দেন। তাদের খাওয়া শেষ হওয়ার মুখে আরও দুই দুষ্কৃতী এসে দলে যোগ দেয়। তারাও দই খায়। তার পরে সকলে উঠে কার্তিককে ঘিরে ধরে। এক দুষ্কৃতী আগ্নেয়াস্ত্র বের করে কার্তিকের পেটে গুলি করে। তিনি পড়ে যেতেই বাকিরা ধারাল অস্ত্র দিতে কোপাতে থাকে।

Advertisement

গুলির শব্দ পেয়েই নির্মল এবং দোকানের আর এক কর্মচারী তরুণ পান দৌড়ে বেরিয়ে গিয়ে কাছেই নতুন রাস্তার মোড় থেকে কার্তিকের বন্ধুদের ডেকে আনতে যান। ওই মোড়েই কার্তিক আড্ডা মারতেন। সকলে দোকানে পৌঁছনোর আগেই অবশ্য দুষ্কৃতীরা বাইকে উঠে চম্পট দেয়। নির্মলরা এসে দেখেন, দোকানের উল্টো দিকের রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন কার্তিক। তাঁকে ভ্যানে করে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিত্‌সক মৃত ঘোষণা করেন। রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নির্মল বলেন, “ছ’জনের বয়স ২৫-৩০ বছর হবে। প্যান্ট-শার্ট পরে ছিল। বাংলায় কথা বলছিল। আগে কোনও দিন এই এলাকায় দেখিনি। দই খেয়ে উঠে ওরা যে ওই কাণ্ড করবে, বুঝতে পারিনি। মালিকের সঙ্গে ওরা কোনও কথাও বলেনি। উঠেই গুলি করল। তবে, টাকা-পয়সা কিছু নেয়নি।”

কার্তিক ছিলেন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। ওই এলাকায় তাঁর মিষ্টির দোকান ছাড়াও একটি আলমারির দোকান রয়েছে। এ ছাড়া, কলকাতাতেও মিষ্টির দোকান রয়েছে। পরোপকারী হিসেবেই তিনি এলাকায় পরিচিত। তাঁর মেয়ে মনীষা বলেন, “বাবা লোকজনের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়াত। বাবার কোনও শত্রু ছিল না। কারা কেন খুন করল বুঝতে পারছি না।” ‘সহরারহাট ব্যবসায়ী সমিতি’র সম্পাদক পদে ছিলেন কার্তিক। ওই সমিতির সদস্য কিরণ মণ্ডল বলেন, “এ ভাবে দোকানে ঢুকে দুষ্কৃতীরা যে কাউকে খুন করতে পারে, ভাবতে পারছি না। নিরাপত্তার অভাবে ভুগছি। অবিলম্বে পুলিশ অপরাধীদের গ্রেফতার করুক।”

আতঙ্ক ছড়ানোয় শনিবার রাত থেকেই র্যাফের টহল শুরু হয়ে যায় সহারারহাটে। রবিবার এলাকা কার্যত বন্‌ধের চেহারা নেয়। বন্ধ ছিল দোকানপাট। যানবাহনও কম চলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন