অঙ্কন: সুমিত্র বসাক।
কিছু দিন আগেই পোলবার সুগন্ধায় কামদেবপুরে এক স্কুলফেরত ছাত্রীকে একটি পানশালার পিছনে টেনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছিল।
ঘটনা নিয়ে রাজ্য জুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। তিনটি স্কুলের খুব কাছেই দিল্লি রোডের উপর মাথা তোলা পানশালাগুলোর বিরুদ্ধে ওই এলাকার বাসিন্দারা সরব হয়েছেন।
কামদেবপুরের বধূ দীপিকা মাইতি বলেন,“আমরা পঞ্চায়েতের কাছে জানতে চাইব, যেখানে তিনটে স্কুল রয়েছে সেখানে কেন দু’টি পানশালার অনুমতি দেওয়া হল? ওই পথেই ছেলেমেয়েরা স্কুলে যায়। পানশালায় নানা রকমের লোক আসে। দুষ্কৃতীরা মাতলামো করে। পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। মেয়েদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। বাড়ছে মেয়েদের উপর অত্যাচার।”
স্থানীয় স্কুলগুলিও চাইছে না, ওই এলাকায় পানশালা থাকুক। এক শিক্ষিকা বলেন, “বাম আমলেই আমরা বিডিও-র কাছে লিখিত ভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। সেই সময়ে সরকার ব্যবস্থা নিলে হয়তো এই ঘটনা এড়ানো যেত।”
ওই ধর্ষণের পরে অবশ্য হুগলির জেলাশাসক মনমীত নন্দা সুগন্ধার পানশালাটি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। জেলার বিভিন্ন জায়গায় চলা পানশালাগুলির ব্যাপারেও খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলায় চলা অন্তত ২০টি পানশালার কোনওটাতেই নাচের অনুমতি নেই। শুধু গানের অনুমতি নিয়েই রোজ নাচের আসর বসানো হচ্ছে।
আফগারি দফতরের এক অফিসার জানান, পানশালাগুলির জন্য পোশাক ও অন্যান্য বিষয়ে কড়া আচরণবিধি আছে। তার বিচ্যুতি হলে পুলিশ বা আফগারি, যে কোনও দফতরই পানশালা মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। খদ্দেরদের আসা-যাওয়া, পরিচয় সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য দিয়ে পানশালাগুলি থেকে রোজ স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে রিপোর্ট পাঠানোর কথা। পুলিশ চাইলে সেই তালিকা ধরে যে কাউকে ডেকে তথ্য যাচাই করে নিতে পারে।
প্রশ্ন হল, এই সব বিধি পানশালাগুলো আদৌ কতটা মানে? পুলিশই বা কতটা খেয়াল রাখছে?
নিয়ম অনুয়ায়ী, সকাল ১১টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত পানশালার দরজা খোলা থাকার কথা। কিন্তু চোরাগোপ্তা বহু রাত পর্যন্ত চালু থাকে বহু পানশালাই। পুলিশ এ সব দেখেও দেখে না বলে অভিযোগ। কোনও অনর্থ ঘটলে তা নিয়ে কিছু দিন ধরে হইচই হয়। তারপর ফের যে কে সেই। এলাকাবাসীর অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রে পানশালার ভিতরের ঘরে দেহব্যবসাও চলছে। মোটা টাকার বিনিময়ে ঘর ভাড়া দেওয়া হচ্ছে মত্ত খদ্দেরদের। অনেক সময়ে আবার খদ্দেররাই মহিলা সঙ্গে নিয়ে আসেন। তাঁদেরও ভিতরের ঘর খুলে দেওয়া হয়।
মহিলা নিয়ে ব্যবসার অভিযোগে হুগলির বৈদ্যবাটীর একটি পানশালায় পুলিশ হানা দিয়েছিল। এর পরে দীর্ঘদিন পানশালাটি বন্ধ থাাকে। পরে অবশ্য মালিকপক্ষ আদালতে গিয়ে পানশালা খোলার অনুমতি নিয়ে আসেন। কিন্তু শুধু বৈদ্যবাটী নয়ই, জেলার অনেক পানশালার বিরুদ্ধেই একই অভিযোগ রয়েছে। রাতের অন্ধকারে সেগুলির চৌহদ্দি ঘিরে অবাধে চলছে দেহব্যবসা। পুলিশ বা আফগারি দফতর সব জেনেও নিষ্ক্রিয় বলে অভিযোগ। চাপে পড়লে পুলিশকর্তারা দাবি করেন, পানাশালার বিষয়টি জেলা প্রশাসন এবং আবগারি দফতরের দেখার কথা। আবাগারি আবার বলে, এটা পুরোপুরি আইনশৃঙ্খলার বিষয়। অতএব কিছু যদি করতে হয়, পুলিশকেই করতে হবে।
জলপুলিশ-স্থলপুলিশের এই খেলায় ঘাই মেরে যায় গভীর জলের মাছেরা। ভরাডুবি হয় শুধু গেরস্তের।
(শেষ)।