আমাদের স্কুল

পলতাগড় রাধারানি শিক্ষামন্দির

...

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৪ ০২:২৪
Share:

প্রতি সপ্তাহে বৈঠক হয় অভিভাবকদের সঙ্গে

Advertisement

এই বিদ্যালয়ে প্রথম পা রেখেছিলাম ২০০৭ সালে। ১৯৫৪ সালে প্রধানত গ্রামের মেয়েদের শিক্ষিত করে তোলার তাগিদে স্থানীয় চক্রবর্তী পরিবার এবং কিছু শিক্ষানুরাগী ব্যক্তির সহায়তায় প্রথম বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসাবে পথচলা শুরু করেছিল পলতাগড় রাধারানি শিক্ষামন্দির। ১৯৫৯ সালে বিদ্যালয়টি সরকারি অনুমোদন পায়। ১৯৬৭-তে মাধ্যমিক স্তরে এবং ২০০৯ সালে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়। যদিও স্থানাভাবের কারণে কলা বিভাগ ছাড়া অন্য বিভাগ চালু করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী-সংখ্যা প্রায় ১২০০। অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই কৃষিজীবী পরিবার থেকে আসে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে কম্পিউটার, স্পোকেন ইংলিশ প্রশিক্ষণ এবং নানাবিধ এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি-র ক্লাস চালু আছে। পঞ্চম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পঠন-পাঠনের মানোন্নয়নে বোর্ড-নির্ধারিত ইউনিট টেস্ট ছাড়াও নিয়মিত মাসিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া ছাত্রছছাত্রীদের অগ্রগতি সম্পর্কে তাদের অভিভাবকদের ওয়াকিবহাল করতে প্রতি সপ্তাহে অভিভাবক-শিক্ষক সাক্ষাৎ-এর ব্যবস্থা রয়েছে। ২০১৩ সালে ‘রোল প্লে কম্পিটিশন’-এ সিঙ্গুর ব্লক থেকে প্রথম স্থান অধিকার করে আমাদের বিদ্যালয় জেলা স্তরে উন্নীত হয়। ২০১৪ সালে যুব সংসদ প্রতিযোগিতায় আমাদের বিদ্যালয় ব্লক লেভেলে তৃতীয় স্থান অধিকার করে ও সেরা ‘পার্লামেন্টারিয়ান’-এর পুরস্কার পেয়েছে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী পারমিতা মান্না। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে রেফারেন্স বই সরবরাহ করার জন্য একটি গ্রন্থাগার রয়েছে। গ্রন্থাগারিক না থাকা সত্ত্বেও বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মীরা নিজেরাই দায়িত্ব নিয়ে পড়ুয়াদের বই সরবরাহ করেন। খেলাধূলাতেও আমাদের স্কুলের খ্যাতি রয়েছে। ২০১১ সালে ন্যাশনাল গেমস-এ ১০০ মিটার ও ২০০ মিটার দৌড়ে এবং ২০১৩ সালে এশিয়ান ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড-এ ২০০ মিটার দৌড়ে পদক জিতে এনেছে আমাদের স্কুলের ছাত্রী আশা রায়।

তবে সাফল্যের মধ্যেও বিদ্যালয়ে পরিকাঠামোগত বেশ কিছু সমস্যার জন্য অনেক কিছুই করে ওঠা যায়নি। স্কুলে ছেলেমেয়েদের কোনও খেলার মাঠ নেই। স্থানাভাবের কারণে সর্বশিক্ষা মিশন থেকে ক্লাসঘর তৈরির জন্য প্রাপ্ত টাকা ফেরত পাঠাতে হচ্ছে। উচ্চমাধ্যমিক পাঠক্রমে ভূগোল নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ল্যাবরেটরি তৈরি করা যায়নি। জায়গার অভাবে ক্লাসঘরের মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে মিড-ডে মিল রান্নার ব্যবস্থা করতে হয়েছে। এত রকম প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ২০১৩ সালে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণের হার প্রায় ১০০ শতাংশ এবং উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণের হার ১০০ শতাংশ। আগামী দিনে শ্রেণিকক্ষে প্রোজেক্টরের মাধ্যমে পাঠদান এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগ চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। স্কুলের অনেক সমস্যা। তবু তার মধ্যেই এগিয়ে চলেছে ছাত্রছাত্রীরা।

Advertisement

পরিবারে আর্থিক অনটনের কারণে খেলাধূলা বা পড়াশোনার ক্ষেত্রে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে আমাকে। তবে স্কুলে পড়ার সময় আমি সেখানকার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নানা রকম সহায়তা পেয়েছি। অনুশীলনের কারণে ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় যোগদানের কারণে আমি নিয়মিত ক্লাস করারও সুযোগ পেতাম না। আমার সেই সমস্যার কথা ভেবে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা আমাকে সব রকম সাহায্য করেছেন। পাশপাশি সবসময় তাঁরা আমাকে খেলাধূলায় আরও উন্নতি করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। যে বছর বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিকে পাশ করি, সেই বছরই বিদ্যালয়ে যোগ দেন বর্তমান প্রধান শিক্ষক। প্রাক্তন ছাত্রী হলেও নানা দরকারে এখনও বিদ্যালয়ের কাছে সব রকম সহযোগিতা পাই।

ছবি: দীপঙ্কর দে

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement