ফের ব্যাঙ্কে কেপমারি, এ বার নিশানা বালি

মাত্র পাঁচ-দশ মিনিটের খেলা! তার মধ্যেই কাজ হাসিল করে চোখের সামনে দিয়ে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে তারা। ম্যাজিক নয়, কেপমারি! কেপমারদের এ হেন কেরামতির শিকার শহর থেকে জেলা। তাদের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছে পুলিশও। দক্ষিণ শহরতলির পাটুলি এলাকায় কয়েক দিন আগেই কেপমারদের হাতে দশ হাজার টাকা খোয়ান অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষক।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৪ ০০:০৭
Share:

মাত্র পাঁচ-দশ মিনিটের খেলা! তার মধ্যেই কাজ হাসিল করে চোখের সামনে দিয়ে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে তারা। ম্যাজিক নয়, কেপমারি! কেপমারদের এ হেন কেরামতির শিকার শহর থেকে জেলা। তাদের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছে পুলিশও।

Advertisement

দক্ষিণ শহরতলির পাটুলি এলাকায় কয়েক দিন আগেই কেপমারদের হাতে দশ হাজার টাকা খোয়ান অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষক। এ বার কেপমারেদের কবলে পড়ে টাকা খোয়ানোর তালিকায় উঠে এসেছে বালি। পুলিশ জানায়, ২৬ ফেব্রুয়ারি বালি বামুনডাঙার মধ্যজয়পুর বিল এলাকার বাসিন্দা বছর পঞ্চান্নের এক মহিলা বালি বাজারে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিতে এসেছিলেন। সেখানেই সহৃদয় সেজে সাহ্যয্য করার ছলে ওই মহিলার থেকে সাড়ে ১৪ হাজার টাকা হাতিয়ে চম্পট দিয়েছে অপরিচত এক যুবক। এই গোটা ঘটনাটির ছবি ধরা পড়েছে ব্যাঙ্কের সিসিটিভি-তে।

ঘটনার পরে ব্যাঙ্কের দরজায় টাঙানো হয়েছে ওই যুবকের ছবি। পুলিশও সেই ছবি বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে খোঁজ শুরু করেছে। কিন্তু ১৮ দিন কেটে গেলেও গ্রেফতার হয়নি কেউ। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, “বিভিন্ন জায়গায় ছবি পাঠানো হয়েছে। সোর্সও লাগানো হয়েছে। আশা করা যায়, অপরাধী ধরা পড়বে।” তবে ছবিতে যে যুবককে দেখা গিয়েছে, তাকে এলাকায় আগে দেখা যায়নি বলে দাবি পুলিশের।

Advertisement

বিশাখাদেবী জানান, ওই দিন বাড়ি তৈরির জন্য জমানো ৫৫ হাজার টাকা ব্যাঙ্কে জমা দিতে আসেন তিনি। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ব্যাঙ্কে ঢোকেন তিনি। টাকা জমা দিতে গেলে তাঁকে ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়, প্যান কার্ড না থাকলে এক সঙ্গে এত টাকা জমা নেওয়া যাবে না। বিশাখাদেবী বলেন, “তখন ৪৯ হাজার টাকা জমা দেব বলে ফের স্লিপ তুলি। কাকে দিয়ে লেখাব, তাই লোক খুঁজছিলাম।” সেই সময় কালো চেক শার্ট-কালো প্যান্ট, মাথায় টুপি, গালে হালকা দাড়ি এক যুবক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। তিনিও রাজি হয়ে যান। ব্যাঙ্কের সিসিটিভি-তেও এই ঘটনা দেখা গিয়েছে। ফুটেজে পুলিশ দেখেছে, দুপুর ১২টা ২৫ নাগাদ ব্যাঙ্কে ঢোকে ওই যুবক। সঙ্গে আরও এক যুবক। তার গায়ে সাদা চেক শার্ট। গালে হালকা দাড়ি থাকা এক যুবককেও ঢুকতে দেখা যায়। তার আচরণও ছিল সন্দেহজনক।

ওই মহিলা বলেন, “ছেলেটি স্লিপ লিখে দেবে বলে। তার পরে আমার স্লিপ নিয়ে লিখে দিতে বলে চেয়ারে বসা অন্য এক যুবককে। লেখার সময়ে ওই ছেলেটা আমার সঙ্গে এমন ভাবে কথা বলছিল যেন, বহু দিনের চেনা।” সাদা চেক জামা পরা যুবকও তখন সন্দেহজনক ভাবে ওই মহিলার উপরে নজর রাখছিল বলে দেখা গিয়েছে। সিসিটিভির ফুটেজ থেকে দেখা যাচ্ছে, ১২টা ৩৪ মিনিটে ওই মহিলা স্লিপ আর টাকা নিয়ে এক নম্বর কাউন্টারে এসে লাইনে দাঁড়ান। পিছনেই দাঁড়ায় কালো চেক শার্ট পরা যুবক। মহিলা বলেন, “ছেলেটি আমায় বলে টাকা ঠিক মতো গুছিয়ে না দিলে জমা নেবে না। বুঝতে পারছিলাম না, কী ভাবে গোছাতে বলছে। তখন ছেলেটি আমার হাত থেকে টাকা নিয়ে নিজেই গুছিয়ে দিতে লাগল।” ফুটেজে দেখা যায়, এর পরেই টাকা মহিলার হাতে দিয়ে দ্রুত ওই যুবক ব্যাঙ্ক থেকে বেরিয়ে গেল। সঙ্গে বেরিয়ে যায় সন্দেহজনক আচরণের ওই সাদা চেক শার্ট পরা যুবকও। বিশাখাদেবী বলেন, “কাউন্টারে টাকা জমা দেওয়ার পরে বলল সাড়ে ১৪ হাজার টাকা কম। কী ভাবে তা হল বুঝতেই পারছিলাম না। পরে ক্যামেরায় দেখলাম আমার হাত থেকে টাকা নিয়ে সাজানোর সময়ে ওই ছেলেটা পকেটে টাকা ভরছে।”

ঘটনার পরে বালি থানায় অভিযোগ করেছেন ওই মহিলা। পুলিশ জানায়, ওই যুবককে আগে এই এলাকায় দেখা যায়নি। পুলিশ জানায়, ব্যান্ডেল, হালিশহর-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে একটি দল এসে এ ধরনের কাজ করছে। পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে বলেন, “ব্যাঙ্কের পার্কিং লটেও ক্যামেরা লাগাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, ব্যাঙ্কে কারা কাজে এসেছেন আর কারা উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরছেন, পুলিশ ও ব্যাঙ্কের কর্মীদের তা নজর রাখতে বলা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন