বেপরোয়া লরির ধাক্কায় পিষ্ট গাড়ি, বালিতে মৃত চার

গভীর রাতে জাতীয় সড়কে অজ্ঞাতপরিচয় এক ভবঘুরের মৃতদেহ উদ্ধার করতে গিয়েছিল পুলিশ। হঠাত্‌ তাদের সামনেই ঘটে যায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা। পুলিশকর্মীরা দেখেন, একটি লরি অন্য লরিকে ওভারটেক করতে গিয়ে উল্টো দিক থেকে আসা একটি ছোট গাড়িতে প্রবল জোরে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যাচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৪ ০৩:৪৩
Share:

লরির ধাক্কায় দুমড়ে যাওয়া সেই গাড়ি। শনিবার, বালিতে।—নিজস্ব চিত্র।

গভীর রাতে জাতীয় সড়কে অজ্ঞাতপরিচয় এক ভবঘুরের মৃতদেহ উদ্ধার করতে গিয়েছিল পুলিশ। হঠাত্‌ তাদের সামনেই ঘটে যায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা। পুলিশকর্মীরা দেখেন, একটি লরি অন্য লরিকে ওভারটেক করতে গিয়ে উল্টো দিক থেকে আসা একটি ছোট গাড়িতে প্রবল জোরে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যাচ্ছে। গাড়িটি ওই অভিঘাতে দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে। এ দৃশ্য দেখেই তত্‌ক্ষণাত্‌ টহলদারি ভ্যান নিয়ে ধাওয়া করে পুলিশ ওই লরিটিকে ধরে ফেলে। তবে ফাঁকতালে চালক পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় গাড়ির পাঁচ জন আরোহীর মধ্যে চার জনই মারা গিয়েছেন। চিকিত্‌সাধীন অন্য জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

Advertisement

শুক্রবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বালির দু’নম্বর জাতীয় সড়কে। পুলিশ জানায়, মৃতেরা হলেন নিতাই মালাকার (৪৮), সুমন দত্ত (৪৮), বীরেন মিস্ত্রি (৪৫) ও সুব্রত অধিকারী (২৫)। আশঙ্কাজনক অবস্থায় পল্লব সিংহ শর্মাকে (২৬) কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এঁরা প্রত্যেকেই বরাহনগরের বাসিন্দা।

পুলিশ সূত্রের খবর, শুক্রবার রাত পৌনে ১টা নাগাদ বালির দিক থেকে একটি ছোট গাড়িতে চেপে ওই পাঁচ জন রাজচন্দ্রপুরের দিকে আসছিলেন। সে সময়ে দু’নম্বর জাতীয় সড়কের বালি হল্ট ও শিল্পশ্রী বাসস্টপের মাঝে গাড়িটিকে উল্টো দিক থেকে আসা যন্ত্রাংশ-বোঝাই একটি ছয় চাকার লরি মুখোমুখি ধাক্কা মারে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সামনের একটি লরিকে ওভারটেক করতে গিয়েই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেরে ওই লরিটি। পুলিশ জানায়, সেই রাতে দুর্ঘটনাস্থলের কিছুটা দূরেই এক ভবঘুরের মৃতদেহ উদ্ধার করতে গিয়েছিল নিশ্চিন্দা থানার পুলিশ। তাদের সামনেই ঘটে যায় ওই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এক পুলিশ অফিসার জানান, গাড়িটির সামনের অংশ পুরো দুমড়ে ভিতরে ঢুকে গিয়েছিল। তাঁরা গিয়ে দেখেন, ভিতরে ছটফট করছেন পাঁচ জন। রক্তে ভেসে যাচ্ছে চার দিক।

Advertisement

স্থানীয় হোটেলের কর্মীদের নিয়ে পুলিশ গাড়ির ভিতর থেকে পাঁচ জনকে উদ্ধার করে। অ্যাম্বুল্যান্স ও ট্যাক্সিতে চাপিয়ে তাঁদের প্রথমে লিলুয়ার টি এল জায়সবাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সুমনবাবু, বীরেনবাবু ও সুব্রতবাবুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিত্‌সকেরা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় নিতাইবাবু ও পল্লববাবুকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে নিতাইবাবুকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে পল্লববাবুকে মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়।

শনিবার সকালে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে নিশ্চিন্দা থানায় চলে আসেন মৃতদের পরিজন ও প্রতিবেশীরা। আসেন বরাহনগর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান রামকৃষ্ণ পাল, কাউন্সিলর তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা অঞ্জন পাল। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বরাহনগরের বারুইপাড়ায় বাড়ি পেশায় ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসায়ী সুমনবাবুর। তাঁর এক মেয়ে এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শোকে তাঁর স্ত্রী মাধবীদেবীর কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সুমনবাবুর ভাইপো অভিষেক দত্ত জানান, ওই দিন সন্ধ্যায় তিনি স্ত্রীর কাছ থেকে কয়েক হাজার টাকা নিয়ে ইটের লরি ‘বুক’ করতে বেরিয়েছিলেন। তার পরে আর বাড়ি ফেরেননি। গভীর রাতে পুলিশের কাছ থেকে তাঁরা দুর্ঘটনার খবর পান।

দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটি মিলনগড়ের বাসিন্দা বীরনবাবুর বলে তাঁর ছেলে বিশ্বনাথ দাবি করেন। তিনি বলেন, “সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত বাবা বাড়িতেই ছিলেন। তার পরে গাড়ি নিয়ে বেরোন। রাতে বহু বার ফোন করলেও ধরেননি।” বালি হল্টে বীরেনবাবুর লরির কাঠামো তৈরির গ্যারাজ রয়েছে। বারুইপাড়ার বাসিন্দা সুব্রতবাবু ভাড়ার গাড়ি চালাতেন। ওই দিন সন্ধ্যায় পাড়ায় আড্ডা মারতে বেরিয়েছিলেন। তাঁর বাবা কালু অধিকারী বলেন, “ছেলেটা ১১টার সময়েও ফোনে বলেছিল বাড়ি ফিরবে। কিন্তু আর ফিরল না।” নিতাইবাবুর বাড়ি বরাহনগরের বিবেকানন্দপল্লিতে। তিনিও ব্যবসায়ী।

পুলিশ জানায়, পল্লববাবুর কাছ থেকে একটি ফোন নম্বর পেয়ে সেখানে ফোন করেই ওই পাঁচ জনের পরিচয় জানা যায়। তবে অত রাতে তাঁরা ঠিক কোথায় যাচ্ছিলেন, তা স্পষ্ট নয় বলেই দাবি পুলিশের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন